মৃত্তিকা সাহা
প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:২৬ এএম
আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৫০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

মূলধন ঘাটতির সঙ্গে বাড়ছে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদও

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি

প্রভিশন সংরক্ষণসহ বিভিন্ন ছাড়ের পরও ব্যাংকে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। আর এর প্রভাবে মূলধন ঘাটতিও বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ এক প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুন শেষে মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে ১৩ ব্যাংক। এ তালিকায় সরকারি মালিকানার ৬, বেসরকারি ৬ এবং বিদেশি ব্যাংক রয়েছে একটি। তিন মাস আগে রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালীসহ ১৫টি ব্যাংকের ঘাটতি ছিল ৩৩ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা।

সাধারণত ব্যাংকঋণের শ্রেণিমান বিবেচনায় প্রতিটি ব্যাংকের নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। ব্যাংকের খারাপ ঋণ যত বাড়ে, প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা তত বেড়ে যায়। আর প্রভিশন রাখতে না পারলে স্বাভাবিকভাবে মূলধন ঘাটতি বাড়ে। আবার খেলাপি ঋণের বিপরীতে কোনো ব্যাংক আয় দেখাতে পারে না। ফলে খেলাপি না কমলে মূলধন ঘাটতি থেকে বের হতে পারে না ব্যাংক।

ব্যাংকাররা বলছেন, উচ্চ খেলাপি ঋণ এবং নামমাত্র ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ পুনঃতপশিলের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ বেড়েছে। আগামীতে এই সংখ্যা আরও প্রকট হবে বলেও আশঙ্কা করে তারা বলেন, এতে সক্ষমতা হারাবে ব্যাংকগুলো। আর মূলধন ঘাটতির সঙ্গে বাড়বে আমানতের ঝুঁকি। অনিয়মের কারণে আলোচিত ব্যাংকই ঘুরেফিরে মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে। এসব ব্যাংক উচ্চমাত্রার খেলাপি ঋণের কারণে প্রয়োজনীয় মুনাফা করতে পারছে না বলে জানান তারা। আবার উদ্যোক্তারাও নতুন করে মূলধন জোগান দিচ্ছেন না। অবস্থার উন্নয়নে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আলোকে বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকগুলো মূলধন ঘাটতি পূরণে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা জমা দিলেও তা বাস্তবায়ন করতে পারছে না। ওই সময় মূলধন ঘাটতিতে থাকা সব ব্যাংকেই পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়ক নিয়োগ করা হয়েছিল। আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্তের আলোকে নতুন করে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হলেও দৃশ্যমান কোনো উন্নতি হয়নি।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ক্রমাগত বাড়ছে। আগামীতে আরও বাড়বে। এ কারণেই মূলধন ঘাটতি বাড়ছে। আগামীতে মূলধন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকের সংখ্যা আরও বাড়বে। বর্তমানে আমাদের খেলাপি ঋণ ২ লাখ কোটি টাকার কিছু বেশি হলেও এস আলমসহ কিছু ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর ঋণ এনপিএলে পরিণত হলে সেটি অফিসিয়ালি ৩ লাখ থেকে সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকা হয়ে যেতে পারে। ফলে খেলাপি ঋণ আরও বাড়বে।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঘুরেফিরে কয়েকটি ব্যাংকই মূলধন ঘাটতিতে আটকে আছে। সার্বিক ব্যাংক খাতে এর প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখা যাবে এসব ব্যাংকেই খেলাপি ঋণ সবচেয়ে বেশি। তবে আগামীতে আরও কয়েকটি ব্যাংক এই তালিকায় যুক্ত হবে। মূলত নামে-বেনামে যেসব ব্যাংক থেকে প্রচুর ঋণ বের করে নেওয়া হয়েছে, তালিকায় সেগুলোই যুক্ত হবে। ফলে ব্যাংক খাতে মানুষের আস্থাহীনতা আরও বাড়বে। তিনি আরও বলেন, এ সমস্যা নিয়ন্ত্রণে সব খাতে শক্তিশালী নেতৃত্ব দরকার। একই সঙ্গে আমাদের নিয়ন্ত্রক ও আইনি ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের নিয়ে ভারতে একটা মাস্টার সার্কুলার হয়েছিল; আমাদের সেটি অনুসরণ করা উচিত। রেগুলেটরি অনেক নিয়মের সংশোধন নিয়ে আসাও দরকার।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, মূলধন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক, বাংলাদেশ কৃষি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক, ন্যাশনাল, পদ্মা ও সিটিজেন ব্যাংক। আর বিদেশি ব্যাংকের তালিকায় রয়েছে হাবিব ব্যাংক। এসব ব্যাংক ন্যূনতম প্রয়োজনীয় মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে। শুধু তাই নয়, ১৭ ব্যাংক ন্যূনতম ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফার (সিসিবি) সংরক্ষণ করতে পারেনি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক, বিকেবি, রাকাব, বিসিবিএল, আইসিবি ইসলামিক, ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি, ন্যাশনাল ও পদ্মা। জুন শেষে এসব ব্যাংকের সিসিবি দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৬৮ শতাংশ। একই সময়ে ব্যাংক খাতে সমন্বিত রেশিও দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ। তবে ১১ ব্যাংক ন্যূনতম লেভারেজ রেশিও ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, তপশিলি ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম চালাতে ন্যূনতম রক্ষিতব্য মূলধন (এমসিআর) ও সিসিবি থাকতে হবে তাদের মোট ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ ও আড়াই শতাংশ হারে। সেইসঙ্গে মূলধন ও দায়ের মধ্যে যথাযথ ভারসাম্য রক্ষায় ব্যাসেল-৩ কাঠামোর আলোকে ঝুঁকিভিত্তিক মূলধন পর্যাপ্ততার পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকে ২০১৫ সাল থেকে ন্যূনতম ৩ শতাংশ লিভারেজ অনুপাত (এলআর) সংরক্ষণের নির্দেশনা দেওয়া হয়, যা ২০২৩ সাল থেকে বার্ষিক দশমিক ২৫ শতাংশ হারে ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে ২০২৬ সালে ৪ শতাংশে উন্নীত করার নির্দেশনা রয়েছে। সে অনুযায়ী ২০২৪ সালের জন্য তপশিলি ব্যাংকগুলোকে লিভারেজ অনুপাত ন্যূনতম সাড়ে ৩ শতাংশ হারে সংরক্ষণের নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

প্রতিবেদনে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বৃদ্ধির কথা বলা হলেও সেই তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। তবে আরেক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৩ সাল শেষে ব্যাংক খাতে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ ছিল ৪ দশমিক ৮৭ লাখ কোটি টাকার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩ দশমিক ৭৮ লাখ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে ১ দশমিক ৯ লাখ কোটি টাকার ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ বেড়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নারী উদ্যোক্তা তনিকে মানহানি, গ্রেপ্তার আকাশ কারাগারে 

ভূমিকম্পের বৈজ্ঞানিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি

নিজের নির্বাচনী আসন ও দল নিয়ে যা জানালেন আসিফ মাহমুদ

শ্রীলঙ্কায় ভারি বৃষ্টিতে ভূমিধস-বন্যা, নিহত ৪০

সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে মাউশির কঠোর নির্দেশনা

স্ত্রী ও দুই সন্তান হত্যায় মামলা, প্রধান আসামি কারাগারে

‎২২ ডিসেম্বরেই জকসু নির্বাচন চান জবি ছাত্র অধিকার পরিষদ

পাওয়ারপ্লেতেই ৪ উইকেট গেল বাংলাদেশের

সুদের টাকা নিয়ে দ্বন্দ্ব, ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা

শুক্রবার থেকে টঙ্গীতে ৫ দিনের জোড় শুরু

১০

বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে ফের পরিবর্তন, বাড়ল না কমলো?

১১

দেশের নারী সমাজ বিএনপির প্রতি আস্থাশীল : সেলিমা রহমান

১২

ক্রিকেটে ‘গ্রোভেল’ কী — এবং কেন এটি এত কুখ্যাত?

১৩

জরাজীর্ণ ভোটকেন্দ্র ও সিসি ক্যামেরার তথ্য গেল ইসিতে

১৪

আমার শরীর, আমার সম্পদ : ঐশ্বরিয়া রাই

১৫

হোয়াটসঅ্যাপের ভয়েস মেসেজ টেক্সটে রূপান্তর করবেন যেভাবে

১৬

আমরা ৫৩ বছর ধোঁকা খেয়েছি আর নয় : চরমোনাই পীর

১৭

আফগানিস্তানের নাগরিকদের সব ইমিগ্রেশন আবেদন স্থগিত যুক্তরাষ্ট্রের

১৮

শরীয়তপুরকে জাতীয় প্ল্যানের মধ্যে আনা উচিত : নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু

১৯

নগর পরিচালন ও স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন শীর্ষক জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত

২০
X