কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৬ এএম
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
গুলিস্তান ও ফার্মগেট

ফুটপাতে উচ্ছেদ অভিযান যেন ‘চোর-পুলিশ খেলা’

ফুটপাতসহ রাস্তার দুই-তৃতীয়াংশই দখল করেছেন হকাররা। ছবিটি ঢাকার গুলিস্তান থেকে তোলা। ছবি : কালবেলা
ফুটপাতসহ রাস্তার দুই-তৃতীয়াংশই দখল করেছেন হকাররা। ছবিটি ঢাকার গুলিস্তান থেকে তোলা। ছবি : কালবেলা

ঢাকার গুলিস্তানে বেশিরভাগ সড়ক ও ফুটপাত দখল করে দোকান বসিয়েছে হকাররা। কোথাও কোথাও যান চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এমনকি হাঁটাচলাও অনেক জায়গায় কষ্টকর। এ কারণে প্রতিদিন অসহনীয় যানজটে বিড়ম্বনার মুখে পড়ছেন নগরবাসী। মাত্র পাঁচ মিনিটের পথ অতিক্রম করতে সময় লাগছে আধাঘণ্টা। পুলিশ বলছে, প্রতিদিন চারবার অভিযান চালিয়েও হকারদের সরানো যাচ্ছে না। উচ্ছেদ করার একটু পরই আবার দখল করে তারা।

গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা গেছে, গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট মোড় থেকে সড়কের উভয় পাশের ফুটপাত দখল করে দোকান বসিয়েছে হকাররা। ফুটপাতের একপাশে চৌকি বসিয়ে আরেক পাশে দড়ি টানিয়ে কাপড়ের পসরা সাজানো হয়েছে। আর মূল সড়কের ওপর ঝুড়ি ও ভ্যান বসিয়ে চলছে ফল বিক্রি। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের রমনা ভবন মার্কেটের সামনের সড়কের ফুটপাত দখলের পাশাপাশি মূল সড়কেও বসানো হয়েছে দোকান।

গোলাপশাহ মাজার এলাকার অবস্থা আরও শোচনীয়। এখানে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রে প্রবেশের সরুপথ ছাড়া পুরো প্রাঙ্গণ হকারদের দখলে। টিসিবির আঞ্চলিক কার্যালয়ের সামনে সড়কের ৮০ শতাংশ দখল করে আছে হকাররা। কেউ বসেছে ফলের দোকান নিয়ে, কেউ নিয়ে বসেছে কাপড় ও জুতা। স্টেডিয়াম রোড থেকে মাজার রোডে যেসব গাড়ি আসছে, সেগুলোকে আসতে হচ্ছে সড়কের একপাশ দিয়ে। বাকি রাস্তা হকারদের দখলে। মূল সড়কে ঘোড়ার গাড়ি, মিনিবাস, বড় বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী তোলা হচ্ছে।

রবিউল নামে এক হকার কালবেলাকে বলেন, ‘সবকিছু ম্যানেজ করেই এখানে বসেছি। এখানে না বসলে কোথায় বসব? জায়গা বের করে দেন।’ বেলাল হোসেন নামের আরেক হকার বলেন, ‘আমরা রাস্তার পাশেই বসেছি। যারা মাঝে বসেছে, তাদের তুলে দিন। তাদের জন্যই পরে আমাদের সমস্যা হয়।’

ফুটপাতে চলতে বিড়ম্বনার শেষ নেই পথচারীদের। তারা বলছেন, রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে এমন যাচ্ছেতাই অবস্থা মেনে নেওয়ার মতো নয়। মনে হচ্ছে দেখার কেউ নেই। এই দোকানগুলো রাস্তা ও ফুটপাত দখল করায় পথচারীদের চলাচলে যেমন অসুবিধা হয়, তেমনি যানজট বাড়ে এবং নগরীর সৌন্দর্য নষ্ট হয়।

পথচারী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা শহরে হকারদের স্থায়ী বসার জায়গা বা বিকল্প ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত তারা ফুটপাত দখল করতেই থাকবে। এ সমস্যার সমাধানে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা দরকার।’

গতকাল গুলিস্তানের শহীদ মতিউর পার্কেও অভিযান চালিয়েছে পুলিশ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। বেলা ১১টায় গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট ও আশপাশের এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালানোর কথা ছিল। কিন্তু অভিযানের খবর আগেই জেনে যায় হকাররা। তারা তাদের ভ্যানগাড়িগুলো পাশে পার্কে লুকিয়ে রাখে। পুলিশ পার্ক থেকে ৫০০ ভ্যানগাড়ি জব্দ করে।

ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার খোন্দকার নাজমুল হাসান বলেন, গুলিস্তানে আমরা দিনে চারবার অভিযান চালাই। কিন্তু অভিযানে এসে রাস্তায় কোনো গাড়ি পাওয়া যায় না। পরে আমরা তথ্য পাই অভিযানে এলে হকাররা গাড়িগুলো শহীদ মতিউর পার্কে নিয়ে রাখে। আমরা চলে গেলে তারা আবার রাস্তায় চলে আসে। তাই আমরা সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় গাড়ি রাখার স্থানেই অভিযান চালিয়েছি।

হকারদের সঙ্গে প্রশাসনের অনেকের যোগসাজশ রয়েছে। এই চোর-পুলিশ খেলা কবে শেষ হবে—জানতে চাইলে ডিএমপির এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। অভিযানে পাঁচশ গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। গাড়িগুলো সিটি করপোরেশন বাজেয়াপ্ত করেছে।

ফার্মগেটে উচ্ছেদ প্রতিবাদে বিক্ষোভ: এদিকে ফার্মগেট এলাকায় যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে ফুটপাত দখল করে থাকা অবৈধ অস্থায়ী দোকানপাট গুঁড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিবাদে যানবাহন আটকে বিক্ষোভ দেখিয়েছে হকাররা।

গতকাল দুপুরে পুলিশ, সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও সিটি করপোরেশনের যৌথ অভিযান শুরু হয় ফার্মগেটের গ্রিন সুপার মার্কেটের সামনে থেকে। অভিযানে আনন্দ সিনেমা হল, ফার্মগেট সুপার মার্কেট, তেজগাঁও কলেজের সামনে ও খামারবাড়ি এলাকায় অবৈধভাবে সড়ক-ফুটপাতে গড়ে তোলা হাজারখানেক দোকানপাট সরিয়ে দেওয়া হয়। বিকেল ৩টার দিকে উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করে কয়েকশ হকার।

হকাররা ফার্মগেট থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ৩টার দিকে খামারবাড়ি মোড়ে সড়ক অবরোধ করে। সেখানে কয়েকটি গাড়ির ওপর হামলা করতে দেখা গেছে। পরে তারা সেখান থেকে আবার তেজগাঁও কলেজের সামনে মিছিল নিয়ে আধাঘণ্টা বিক্ষোভ করে আনন্দ সিনেমা হলের সামনে অবস্থান নেয়।

চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে মো. শফিক নামে আরেক হকার বলেন, ‘আগে ফার্মগেটের প্রতিটি দোকান থেকে পুলিশসহ বিভিন্নজন চাঁদা নিত। তখন কোনো সমস্যা হতো না। এখন কেউ চাঁদা নিচ্ছে না, এখন আমাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। তাহলে কি তারা আবার চাঁদা নিতে চায়? এটা হতে দেওয়া হবে না। আমাদের পেটে লাথি দিলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাব।’

ডিএমপি তেজগাঁও বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ রুহুল কবীর খান বলেন, ব্যস্ততম এলাকা ফার্মগেটে প্রতিদিন হাজারো মানুষ চলাচল করে। ফুটপাত ও সড়ক দখলে থাকায় জনসাধারণের চলাচলে ভোগান্তির পাশাপাশি অপরাধ তৎপরতা বাড়ছে। সোমবার ফুটপাত উচ্ছেদের বিষয়ে মাইকিং করা হয়েছিল। চলে যেতে ঘোষণা দেওয়া হলেও তারা দোকানপাট সরিয়ে নেয়নি। তাই যৌথ অভিযান চালিয়ে সড়ক ও ফুটপাত দখলমুক্ত করা হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হাসনাতকে ‌‘ফকিন্নির বাচ্চা’ বললেন রুমিন ফারহানা

বিজিবির কাছে ৫ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর করল বিএসএফ

চুরির অভিযোগ, গণপিটুনিতে যুবক নিহত

সংবিধানের মূলনীতি থেকে আমরা সরে যাচ্ছি : ড. কামাল হোসেন

রাকসু নির্বাচনে ভোটাধিকারের দাবিতে নবীন শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

চট্টগ্রামের মিষ্টি কারখানায় স্বাস্থ্যঝুঁকি, মধুবন ফুডকে জরিমানা

আশুলিয়ায় সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

জাবির সাবেক সহকারী প্রক্টর জনি রিমান্ডে

প্রাণনাশের শঙ্কায় ভুগছেন ফজলুর রহমান, চাইলেন নিরাপত্তা

বাংলাদেশ সফর নিয়ে ইসহাক দারের প্রতিক্রিয়া

১০

অপ্রতুল বিনিয়োগের কারণে চিকিৎসার মান কাঙ্ক্ষিত জায়গায় পৌঁছায়নি : ডা. রফিক 

১১

মোদিকে চ্যালেঞ্জ জানানো থালাপতির উত্থানের গল্প

১২

চট্টগ্রামের নগরায়ণ সংকটে শহরবাসী, মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন নেই

১৩

মুন্সীগঞ্জে পুলিশ ক্যাম্পে সন্ত্রাসী হামলা, ব্যাপক গোলাগুলি

১৪

ইসরায়েলে সামরিক অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা কতটুকু?

১৫

আন্দোলনের সময় ছাত্রদের নগ্ন ভিডিও করতেন তৌহিদ আফ্রিদি : আইনজীবী

১৬

৬ কোটি টাকার গার্ডার ব্রিজ এখন গলার কাঁটা

১৭

সরকারি চাকরি প্রার্থীদের জন্য সুখবর

১৮

পাকিস্তানকে বন্যা সতর্কতা পাঠিয়ে শুভেচ্ছার নিদর্শন দেখালো ভারত

১৯

শহর পরিষ্কারের দায়িত্ব সবার নিতে হবে : ডিসি জাহিদুল

২০
X