

কিশোরগঞ্জ শহরের ফুটপাত আর নদীর তীর এখন আর সাধারণ মানুষের হাঁটার পথ নয়। দখলে গেছে একটি প্রভাবশালী মহলের। দীর্ঘদিন ধরে অস্থায়ী দোকানপাট বসিয়ে ব্যাবসা চালানোর পর সম্প্রতি স্থায়ীভাবে ভবন নির্মাণ শুরু করেছে দখলদাররা। গৌরাঙ্গ বাজার, পুরান থানা ও বড়বাজার ব্রিজ এলাকা থেকে শুরু করে নদীর তীর পর্যন্ত, সর্বত্রই চলছে অবৈধ দখল ও নির্মাণকাজ।
গত ৫ আগস্টের পর থেকেই প্রশাসনের চোখের সামনেই এ নির্মাণ শুরু হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা। স্থানীয়দের প্রশ্ন, প্রশাসন জানে, দেখেও কেন চুপ?
সরেজমিন দেখা যায়, কিশোরগঞ্জ শহরের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া নরসুন্দা নদীটি ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে খনন করা হয়। সে সময় শহরের সৌন্দর্য বর্ধন ও মানুষের হাঁটার জন্য নদীর দুই পাশ দিয়ে নির্মাণ করা হয় ওয়াকওয়ে। সেই ওয়াকওয়ে দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে ছোট-বড় বিভিন্ন দোকান। নরসুন্দা নদীর ওপর স্থাপিত শহরের গৌরাঙ্গ বাজার ব্রিজ। এই ব্রিজের পাশে গত এক বছর আগেও কোনো স্থায়ী স্থাপনা ছিল না। তীর ঘেঁষে ফুটপাতে অস্থায়ী দোকান ছিল। সম্প্রতি সেই জায়গা দখলে নিয়ে নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে তোলা হচ্ছে ইট-বালু-সিমেন্টের স্থায়ী ভবন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব ভবন নির্মাণে জড়িত এক প্রভাবশালী মহল, যারা প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়াতেই বহুদিন ধরে এসব এলাকা দখল করে রেখেছে। গৌরাঙ্গ বাজার ও বড়বাজার ব্রিজ এলাকায় এখন ফুটপাতের এক ইঞ্চি জায়গাও ফাঁকা নেই। এমনকি শিশুদের বিনোদনের জন্য নির্মাণ করা পৌর শিশু পার্কের প্রবেশের রাস্তাও দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে দোকান। বড় বাজার, গৌরাঙ্গ বাজার ও গুরুদয়াল মুক্তমঞ্চ এলাকায় কাপড়, কসমেটিকস, জুতা, খেলনা, কাঁচামাল, মাছের বাজার, এমনকি খাবারের দোকান পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের হাঁটার জন্য নির্মাণ করা পুরো ওয়াকওয়েজুড়ে।
পথচারী নুরুল ইসলাম খান বলেন, ‘নদীর পাড় দিয়ে আগে খোলা ছিল। মানুষ চলাচল করেছে। এখন সেখানে মার্কেট হচ্ছে। আমরা জানতাম এইগুলো সরকারি জায়গা। এখন নিজেদের দাবি করে রাস্তা বন্ধ করে মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে। আমরা কীভাবে চলাফেরা করব?’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফুটপাতের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘এইটা অবশ্যই মানুষের চলাচলের জায়গা। এখানে ব্যাবসা করার কারণে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। কিন্তু কী আর করব। কিশোরগঞ্জে কোনো হকার মার্কেট নেই। আর এই গৌরাঙ্গ বাজার ব্রিজের পাশে নদীর পাড়ে গত এক বছর আগেও কোনো স্থায়ী দোকান ছিল না। এখন বিল্ডিং করে স্থায়ী দোকান করা হচ্ছে।’
আরেক ব্যবসায়ী বলেন, পার্কের সামনে (কিশোরগঞ্জ পৌর শিশু পার্ক) ৫ বছর যাবৎ ব্যবসা করে আসছি। প্রতিবছর ৪০-৫০ হাজার টাকা অগ্রিম দিতে হয়। প্রতিদিন আবার ২৫০ টাকা দিয়ে থাকি। সরকারি জায়গায় ব্যবসা করি বাধ্যতামূলক টাকা দিতেই হবে। এখানে ৭০টি দোকান আছে, সকলকেই দিতে হয়। পার্কের লোকজন আমাদের কাছ থেকে টাকা নেই। তারা বলে সরকার থেকে লিজ আনা হয়েছে। টাকা না দলে ব্যাবসা করা যায় না।
মালিকপক্ষ মো. জাভেদ ইকবাল বলেন, ‘নদীর পাশে আমাদের বিল্ডিং ছিল। নদীর অজুহাত দেখিয়ে বিল্ডিংটা ভেঙে ফেলা হয়েছিল। কাগজপত্র দেখানোর সময়টুকু দেওয়া হয়নি। সিএস খতিয়ান অনুযায়ী এইটা নদীর জায়গা না, আমাদের পৈতৃক সম্পত্তি। নদীর পাড়ে অনেকেই আদালত থেকে মামলার রায় পেয়ে বিল্ডিং করছে।’
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান কালবেলাকে বলেন, ‘ফুটপাত, ওয়াকওয়ে ও নদীর জায়গা সরকারি সম্পত্তি। এগুলো কেউ দখল করতে পারে না। আমরা বিষয়টি অবগত হয়েছি। খুব দ্রুতই অভিযান চালানো হবে, প্রয়োজনে উচ্ছেদ কার্যক্রমও শুরু হবে।’
মন্তব্য করুন