রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
হাসান আজাদ
প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৫, ০২:৫০ এএম
আপডেট : ০৫ মার্চ ২০২৫, ০৯:২৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

কয়লা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নেবে রাজনৈতিক সরকার

অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান পরিবর্তন
কয়লা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নেবে রাজনৈতিক সরকার

বিদ্যুৎ উৎপাদনে বর্তমানে কয়লার চাহিদার প্রায় পুরোটাই আমদানি করতে হয়। এতে ব্যয় বেশি, ফলে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচও বেশি। এ অবস্থায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশীয় কয়লা উত্তোলনের চিন্তাভাবনা করলেও, সেখান থেকে পিছিয়েছে।

সরকার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়লা উত্তোলনে বড় বিতর্ক উত্তোলন পদ্ধতি নিয়ে। বর্তমানে আবিষ্কৃত কয়লাখনির মধ্যে বড়পুকুরিয়ার পর ফুলবাড়ী থেকে উত্তোলন সহজ। ক্ষমতা গ্রহণের পর অন্তর্বর্তী সরকার ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনে আলোচনা শুরু করে। এ নিয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, অর্থনীতিবিদ ও পরিবেশবিদরা দ্বিমত জানালে সরকার আগের অবস্থান থেকে সরে আসে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, দেশীয় কয়লা কীভাবে উত্তোলন করা হবে, তা পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। এখন আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে কয়লা উত্তোলন ও ব্যবহারের রোডম্যাপ তৈরি করা।

সর্বশেষ গত ২৭ নভেম্বর বাংলাদেশ হাইড্রোকার্বন ইউনিটের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের কয়লা সম্পদের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ উত্তরণে করণীয়’ বিষয়ে সেমিনার হয়। সেখানে হাইড্রোকার্বন ইউনিটের পরিচালক (অনুসন্ধান ও উৎপাদন) ড. অরূপ কুমার বিশ্বাস মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। ওই প্রবন্ধে ফুলবাড়ী কয়লা খনি উন্নয়নে উন্মুক্ত পদ্ধতি অনুসরণের কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি উন্মুক্ত খনি হলে সর্বোচ্চ পরিমাণ কয়লা উত্তোলন সম্ভব বলে উল্লেখ করা হয়।

দেশে দীর্ঘদিন ধরে কয়লা উত্তোলনের পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক চলছে। দিনাজপুরের ফুলবাড়ী খনি থেকে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলা নিয়ে ২০০৬ সালে তৎকালীন এশিয়া এনার্জির বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়। এতে তিনজন নিহত হন। ওই সময় তৎকালীন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছয় দফা চুক্তি করে। চুক্তির মূল বিষয় ছিল ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা যাবে না। এরপরও ফুলবাড়ী নিয়ে তৎপর ছিল এশিয়া এনার্জি। পরে কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে জিসিএম রিসোর্সেস করা হয়। ওই কোম্পানির সঙ্গে সরকারের কয়লাখনি নিয়ে কোনো চুক্তি নেই। বিভিন্ন সময়ে ফুলবাড়ী প্রকল্প নিয়ে তথ্য প্রকাশ করে লন্ডন শেয়ারবাজারে মূল্য প্রভাবিত করার অভিযোগ রয়েছে।

সর্বশেষ গত ১১ মার্চ জিসিএম রিসোর্সেস তাদের ওয়েবসাইটে ‘ফুলবাড়ী কোল মাইনিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ওভারবর্ডেন স্ট্রিপিং কনট্রাক্ট’ বিষয়ে একটি ঘোষণা দেয়। এজন্য চীনা কোম্পানি পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন চায়নার সঙ্গে চুক্তি করে জিসিএম। কোম্পানিটি ‘পাওয়ার চায়না’ নামে পরিচিত। এই চুক্তির মাধ্যমে পাওয়ার চায়না ফুলবাড়ী কয়লাখনি উন্মুক্ত পদ্ধতিতে উন্নয়ন করবে। পাশাপাশি সাড়ে ছয় হাজার মেগাওয়াটের বেশি ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হবে।

ওই সময় জিসিএম রিসোর্সেস তাদের ওয়েবসাইটে যে ঘোষণা দেয় তাতে উল্লেখ করা হয়, খনি উন্নয়নে জিসিএম রিসোর্সেস পাওয়ার চায়না ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ লিমিটেডের সঙ্গে ১ বিলিয়ন ইউএস ডলারের চুক্তি করেছে। চুক্তির অগ্রগতি ‘উত্তরাঞ্চলে কয়লা অনুসন্ধান এবং উত্তোলন’ চুক্তির শর্তাবলির অধীনে বাংলাদেশ সরকারের কাছে জমা দেওয়া কয়লাখনির উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন প্রাপ্তির ওপর নির্ভর করছে। খনি নির্মাণ চুক্তির কার্য পরিধির মধ্যে রয়েছে খনি অবকাঠামোর নকশা, ক্রয়, ইনস্টলেশন, নির্মাণ, কমিশনিং এবং অতিরিক্ত মাটি, বালু ও পাথরের স্তর অপসারণ, পানি নিষ্কাশন।

বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে অনুমোদন না পেলেও পাওয়ার চায়নার সঙ্গে চুক্তিটি গত বছরের ৯ মার্চ থেকে কার্যকর করেছে জিসিএম। চুক্তিতে আরও বলা হয়, জিসিএম এরই মধ্যে ফুলবাড়ী কয়লাখনি থেকে কয়লা ক্রয়ের বিষয়ে চট্টগ্রাম ও বরিশালের দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছ থেকে আগ্রহপত্র পেয়েছে। পরে একই বছরের ২৬ মার্চ জিসিএমের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে পাওয়ার চায়নাও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়।

জানা গেছে, চীনা কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের মতো বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগের দোহাই দিয়ে বিতর্কিত ও ক্ষতিকর প্রকল্প বাস্তবায়নের নজির আছে, যা পরবর্তী সময়ে ওই দেশের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে পাওয়ার চায়না আলোচিত ও বিতর্কিত ফুলবাড়ী কয়লাখনি নিয়ে একই সুযোগ নিতে চাইছে। যে কারণে সব জেনেও জিসিএমের সঙ্গে চুক্তি করেছে। এ ছাড়া বর্তমান সরকারের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় ভালো। এই সুযোগটা নিতে চাইছে চীন।

জানা গেছে, পাওয়ার চায়না বাংলাদেশে অন্যতম বিনিয়োগকারী বিদেশি কোম্পানি। বর্তমানে চীনা এই কোম্পানিটি বাংলাদেশের ২৪টি চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে মোট খরচের ৫০ শতাংশ অর্থায়ন করছে। এসব প্রকল্পে মোট ব্যয় ৪ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এরই মধ্যে শেষ হয়ে যাওয়া ২০টি প্রকল্পে ১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক এসএস পাওয়ার, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণ ও বরিশাল ৩০৭ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।

খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, অস্ট্রেলিয়ার কোম্পানি বিএইচপি মিনারেলস ফুলবাড়ীতে কয়লাখনি আবিষ্কার করে। এখানে মজুতের পরিমাণ ৫৭ কোটি টন। উত্তোলনযোগ্য মজুত ৪৭ কোটি টন।

সংস্থাটির মতে, ফুলবাড়ী খনি এলাকার আয়তন হবে ৫৪.৮ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা ৪৬ হাজার ৫০০। তাদের পুনর্বাসনে ১০ থেকে ১২ বছর লাগবে। পুনর্বাসন ব্যয় হবে ১ বিলিয়ন ডলার।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

খালেদা জিয়ার আরোগ্য লাভের অপেক্ষায় কোটি জনতা : অপর্ণা রায়

ঢাকায় রুশ গণ-কূটনীতির শতবর্ষ উদযাপন

ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ইসলামী শক্তি ঐক্যবদ্ধ : মুফতি মোস্তফা কামাল

দক্ষিণ আফ্রিকায় বন্দুকধারীদের নির্বিচার গুলি, শিশুসহ অন্তত ১২ জন নিহত

সুখে-দুঃখে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি শুভ্রার

ঘুষ নেওয়ার সংবাদ প্রকাশ / সাংবাদিককে গালি দিয়ে ভূমি কর্মকর্তা ফেসবুক পোস্ট

কুয়াশা নিয়ে যে তথ্য জানাল আবহাওয়া অফিস

নির্ধারিত সময়ের আগে অফিসে প্রবেশ, নারী কর্মীকে চাকরিচ্যুত করল কোম্পানি

শহীদ শিহাবের কবর জিয়ারতে জেলা এনসিপির নতুন কমিটির নেতারা

২-৪টা আসনের জন্য কারও সঙ্গে জোট করব না : নুর

১০

‘আমাকে সাসপেন্ড করেন’ বলতে থাকা চিকিৎসককে অব্যাহতি

১১

বাংলাদেশে খালেদা জিয়ার বিকল্প কেউ নেই : কায়কোবাদ

১২

গণতন্ত্র উত্তরণে খালেদা জিয়ার বেঁচে থাকা জরুরি : অমিত

১৩

চিকিৎসায় অবিশ্বাস্য সাফল্য, ৩ দিনেই ক্যানসার থেকে সুস্থ হলেন নারী

১৪

‘টাইম টু টাইম’ শাশুড়ির স্বাস্থ্যের খোঁজ রাখছেন ডা. জুবাইদা

১৫

বিএনপি সবসময়ই ‘পলিটিক্স অফ কমিটমেন্টে’ বিশ্বাসী : রিজভী

১৬

বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই বিতরণ করা হবে : গণশিক্ষা উপদেষ্টা

১৭

মির্জা আব্বাসের আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী ভিপি সাদিক কায়েম

১৮

‘দেশের অগ্রযাত্রায় প্রবাসী তরুণদের জ্ঞান-প্রযুক্তিগত দক্ষতাকে যুক্ত করতে হবে’

১৯

বাংলাদেশের সঙ্গে সমতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার সম্পর্ক চায় ভারত : প্রণয় ভার্মা

২০
X