প্রশিক্ষণের দিনগুলোয় নতুন এক জীবনের পথে যাত্রা শুরু হয় দেশের সীমান্ত রক্ষার ব্রত নিয়ে। একশ আটষট্টি দিনের সুশৃঙ্খল এ যাত্রায় শারীরিক কসরত, ফায়ারিংয়ের মতো নতুন অভিজ্ঞতাগুলোর মধ্য দিয়ে যেতে হয় তাদের। বাড়তি শারীরিক ও মানসিক শ্রমের মধ্য দিয়ে গেলেও মাতৃভূমির সীমান্ত আগলে রাখার দৃপ্ত শপথ তাদের মনে আরও বেশি শক্তি জোগায়। যে শক্তি আষাঢ়ে মেঘের গর্জন ও বর্ষণকেও সংশয়ে ফেলে। তার প্রমাণ মিলল গতকাল বৃহস্পতিবার বৃষ্টিভেজা সকালে।
এ দিন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর ১০৩তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে সীমান্ত রক্ষার দৃপ্ত শপথ নিলেন ৬৯৪ জন নবীন সৈনিক। চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতে অবস্থিত বিজিবির ঐতিহ্যবাহী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজ (বিজিটিসিঅ্যান্ডসি)-এর বীর উত্তম মজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে হয় এ কুচকাওয়াজ।
১০৩তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ ২৬ জানুয়ারি শুরু হয়। দীর্ঘ ২৪ সপ্তাহের কঠোর ও কষ্টসাধ্য প্রশিক্ষণ সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করে ৬৫৮ পুরুষ ও ৩৬ নারীসহ মোট ৬৯৪ জন রিক্রুট গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নিয়ে সৈনিক জীবনে পদার্পণ করলেন।
এর আগে সকাল থেকে টানা দেড় ঘণ্টার বেশি সময় বৃষ্টির মধ্যে কুচকাওয়াজে অংশ নেন নবীন সৈনিকরা। সকাল সাড়ে ৯টায় বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীকে সশস্ত্র সালাম প্রদানের মধ্য দিয়ে সমাপনী কুচকাওয়াজ শুরু হয়। অভিবাদন গ্রহণ শেষে বিজিবি মহাপরিচালক নবীন সৈনিকদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ দেন। তিনি বলেন, ‘শৃঙ্খলা হচ্ছে সৈনিক জীবনের অলংকার। আদেশ ও কর্তব্য পালনে যে কখনো পিছপা হয় না, সেই প্রকৃত সৈনিক। সততা, বুদ্ধিমত্তা, নির্ভরযোগ্যতা, আনুগত্য, তেজ ও উদ্দীপনা একটি বাহিনীর শৃঙ্খলা ও পেশাগত দক্ষতার মাপকাঠি। নবীন সৈনিক হিসেবে এ সব পেশাগত ও চারিত্রিক গুণাবলি অর্জন করতে হবে। তাহলেই কেবল পূর্বসূরিদের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে দেশের সেবায় নিজেদের নিয়োগ করতে পারবে।
বিজিবি মহাপরিচালক ১০৩তম রিক্রুট ব্যাচের সেরা চৌকস রিক্রুট হিসেবে প্রথম স্থান অধিকারী সাইফ মিয়া এবং অন্যান্য বিষয়ে সেরা সৈনিকদের হাতে তাদের সফলতার জন্য ক্রেস্ট তুলে দেন।
প্রথম স্থান অধিকারী সৈনিক সাইফ মিয়া বলেন, ‘জন্মের পর থেকেই কৃষক বাবার স্বপ্ন ছিল—বড় হলে আমি যেন সৈনিক হই। আজ আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এখন থেকে দেশের প্রতি ইঞ্চি মাটি রক্ষায় জীবন বাজি রেখে হলেও শত্রুকে প্রতিহত করব। সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে যখন যে নির্দেশনা আসবে তা পালন করব।’
সমাপনী কুচকাওয়াজে বিজিটিসিঅ্যান্ডসির কমান্ড্যান্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গাজী নাহিদুজ্জামানসহ বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং নবীন সৈনিকদের স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন