ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রকাশিত খসড়া আসন পুনর্বিন্যাস নিয়ে অসঙ্গতি ও প্রয়োজন সাপেক্ষে অভিযোগ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। তবে দলগতভাবে নয়, কেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বয় করে স্থানীয় বিএনপির নেতারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ইসিতে এই অভিযোগ জানাবে। গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। ইসির সীমানা পুনর্নির্ধারণের খসড়া নিয়ে দলীয় অবস্থান তুলে ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, যেসব এলাকায় সংসদীয় সীমানা পুনর্নির্ধারণের ব্যাপারটি ঠিকমতো হয়নি, বিভিন্ন অসংগতি রয়ে গেছে- সেগুলোর ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনে দরখাস্ত দেওয়া হবে। এটা দলের ব্যাপার না, এটা ইনডিভিজুয়ালি করা হবে। কারণ, এটা দলীয়ভাবে করার প্রভিশন নেই। নতুন সীমানায় কোনো এলাকার জনগণের অসুবিধা-সমস্যা হলে, সেই এলাকার জনগণই দরখাস্ত দেবে- যাকে বলে গণপিটিশন। কেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বয়ের ভিত্তিতে বিএনপির স্থানীয় নেতা কিংবা ধানের শীষের সম্ভাব্য প্রার্থীর তত্ত্বাবধানে এটা করা হবে।
জানা গেছে, এ ব্যাপারে কেন্দ্রের সঙ্গে তৃণমূলের সমন্বয়ের জন্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
দলীয় জানা গেছে, ইসির সীমানা পুনর্নির্ধারণের খসড়ায় যেসব এলাকায় পরিবর্তন আনা হয়েছে, কেন্দ্রীয় বিএনপি থেকে সেখানকার দলের নেতৃবৃন্দ, সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীদের রি-অ্যাকশনটা কী, সেটা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। ভৌগোলিক দিক দিয়ে বড় ধরনের কোনো অসঙ্গতি হয়ে থাকলে, স্থানীয় বিএনপির মাধ্যমে সেটা নিরসনের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে।
দ্বাদশ সংসদের আড়াই শতাধিক আসনের সীমানা বহাল রেখে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত বুধবার সীমানা পুনর্নির্ধারণের খসড়া প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। খসড়ায় বাকি আসনগুলোতে ছোটখাটো পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করে আগামী ১০ আগস্টের মধ্যে দাবি-আপত্তি জানানোর সুযোগ রাখা হয়েছে। ভোটার সংখ্যাকে আমলে নিয়ে প্রকাশিত খসড়ায় গাজীপুরে একটি আসন বাড়ানো এবং বাগেরহাটে একটি আসন কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে বাগেরহাটে ৪টি আসন এবং গাজীপুরে ৫টি সংসদীয় আসন রয়েছে। নতুন প্রস্তাবে বাগেরহাটে ৩টি এবং গাজীপুরে ৬টি আসন হবে।
এ ছাড়া খসড়ায় পার্বত্য এলাকার তিন জেলার ৩টি আসন অপরিবর্তনীয় রাখা হয়েছে। পাশাপাশি দুই আসনবিশিষ্ট জেলা এবং তিন আসনবিশিষ্ট জেলার আসন সংখ্যাও অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন মোটামুটি ১৫০০ এর মতো আবেদন পায়। এর মধ্যে আড়াইশর বেশি আসনের বিষয়ে কারো কোনো আপত্তি আবেদন না আসায় খসড়ায় সেগুলোর বিদ্যমান সীমানাই বহাল রাখা হয়েছে। ৩৯ আসনে ছোটখাটো সংশোধন-পরিবর্তন আনা হয়েছে। কোথাও আবেদন করা হয়েছিল, উপজেলাকে খণ্ডিত করা যাবে না, কোথাও এই ইউনিয়ন রাখলে সুবিধা হয়, আবার কোথাও ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় সুবিধা-অসুবিধা তুলে ধরা হয়।
খসড়ায় ছোট-বড় সংশোধনীর প্রস্তাব করা ৩৯টি আসন হলো- পঞ্চগড় ১ ও ২; রংপুর ৩; সিরাজগঞ্জ ১ ও ২; সাতক্ষীরা ৩ ও ৪; শরীয়তপুর ২ ও ৩; ঢাকা ২, ৩, ৭, ১০, ১৪ ও ১৯; গাজীপুর ১, ২, ৩, ৫ ও ৬; নারায়ণগঞ্জ ৩, ৪ ও ৫; সিলেট ১ ও ৩; ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২ ও ৩; কুমিল্লা ১, ২, ১০ ও ১১; নোয়াখালী ১, ২, ৪ ও ৫; চট্টগ্রাম ৭ ও ৮ এবং বাগেরহাট ২ ও ৩।
জানতে চাইলে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল কালবেলাকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের খসড়ায় যেসব সংসদীয় আসনে পরিবর্তন আনা হয়েছে, সেগুলো আমরা ভালোভাবে দেখছি। পুনর্বিন্যাস করতে গিয়ে যদি কোথাও বড় ধরনের কোনো অসংগতি হয়ে থাকে, ভোটার অ্যাডজাস্ট করতে গিয়ে ভৌগোলিক দিক দিয়ে যদি বড় ধরনের অসংগতি হয়ে যায় এবং সেটা যদি আমাদের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বা আমাদের দলের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীদের কাছে এই রকম প্রতীয়মান হয়, তাহলে সেগুলোর অসংগতি নিরসনের জন্য আমরা হয়তো উদ্যোগ নেব।
এদিকে আসন পুনর্বিন্যাসের খসড়া প্রকাশের পর থেকে অনেকেই অসংগতির বিষয় তুলে ধরে ইসিতে আপত্তি আবেদন দিচ্ছেন। গত বৃহস্পতিবার অন্যদের সঙ্গে আবেদন করেন বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের কাজী ম্যানশনের কাজী মো. মনিরুজ্জামান। তিনি তার আবেদনে বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা) সংসদীয় আসন ৯৮ এবং বাগেরহাট জেলার ৪টি আসনই বহাল রাখার দাবি জানান। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বরাবর লিখিত আবেদনে কাজী মো. মনিরুজ্জামান নিজেকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাট-৪ আসনে ধানের শীষের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
মন্তব্য করুন