আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস আজ সোমবার। ‘প্রযুক্তির যুগে সাক্ষরতার প্রসার’—প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে। তবে সাক্ষরতা অর্জনে ধীরগতির কারণে এ বছরও নতুন কোনো সুখবর ছাড়াই দিবসটি পালিত হচ্ছে। দেশে এখনো ২১ দশমিক ৯ শতাংশ বা ২ কোটি ৯০ লাখ মানুষ নিরক্ষরতার অন্ধকারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তির যুগে যেখানে ডিজিটাল সাক্ষরতা অপরিহার্য হয়ে উঠছে, সেখানে বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর সাধারণ সাক্ষরজ্ঞান না থাকাটা দেশের অগ্রগতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। গত এক বছরে সাক্ষরতার হার এক শতাংশও বাড়েনি এবং বিগত পাঁচ বছরে মোট অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ২ দশমিক ৩ শতাংশ, যা সাক্ষরতা অর্জনের ধীরগতিকে স্পষ্ট করে তুলেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে সাক্ষরতার হার শতভাগ উন্নীতকরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব নয়। পাশাপাশি ২০৩০ সালের মধ্যে সাক্ষরতা হার শূন্যে নামিয়ে আনতে এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে অনেকটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
সাক্ষরতা নিয়ে কাজ করার জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো নামে একটি দপ্তর রয়েছে। এই দপ্তরের জনবল জেলা-উপজেলা পর্যায়েও রয়েছে। বর্তমানে তাদের হাতে কোনো প্রকল্প নেই, তাই তাদের কাজও নেই। এই ব্যর্থতার পেছনে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার কার্যক্রম স্থবিরতা অন্যতম কারণ। যখন বিশ্ব প্রযুক্তিনির্ভর সাক্ষরতার দিকে ঝুঁকছে, তখন বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়াকে উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শিক্ষা সংশ্লিষ্ট আরও বলছেন, সাক্ষরতার হার বাড়াতে সারা বছর তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। শুধু দিবসটি এলেই নড়েচড়ে বসে অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়। তারা ক্রোড়পত্র প্রকাশ, শোভাযাত্রা, আলোচনাসহ নানা আয়োজন করে। আর এর মাধ্যমেই যেন সবার দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়।
সাক্ষরতা বৃদ্ধির মন্থর গতি: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সালে দেশে সাক্ষরতার হার ছিল ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০২১ সালেও হার একই বলে জানানো হয়েছে। ২০২২ সালে এই হার ছিল ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ ও ২০২৩ সালে ৭৭ দশমিক ৯ শতাংশ। সর্বশেষ ২০২৪ সালেও সাক্ষরতার এই হার একই রয়েছে, ৭৭ দশমিক ৯ শতাংশ।
গতকাল রোববার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিবিএসের পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২৪ অনুযায়ী দেশের সাত বছর ও তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর মধ্যে বর্তমানে সাক্ষরতার হার ৭৭ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থাৎ দেশে এখন নিরক্ষর ২১ দশমিক ৯ শতাংশ। উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের জন্য তাদের সাক্ষরজ্ঞান ও কর্মমুখী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরিত করা অত্যন্ত জরুরি। শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সরকারি দপ্তরের সঙ্গে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো এ বিষয়ে কাজ করছে।
সাক্ষরতা পরিমাপ পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক: সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশে সাক্ষরতার হার গণনায় যে জরিপ করা হয় তা হচ্ছে ‘সেলফ রিপোর্টেড’। সেখানে বিবিএসের মাঠকর্মীরা জানতে চান, আপনি লিখতে পারেন কি না? সে বলল পারি। হয়তো সে স্বাক্ষর করতেও জানে। তাতেই তাকে সাক্ষর হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু যদি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ‘টেস্টেড লিটারেসি’ জরিপ করা হতো, তাহলে হয়তো প্রকৃত তথ্য পাওয়া যেতো।
ইউনেস্কো ও আন্তর্জাতিক সংজ্ঞানুযায়ী, সাক্ষরতা হচ্ছে পড়া, অনুধাবন করা, মৌখিকভাবে এবং লিখার বিভিন্ন পদ্ধতিতে ব্যাখ্যা করা, যোগাযোগ স্থাপন করা এবং গণনা করার দক্ষতা। অর্থাৎ সাক্ষরতা বলতে লিখতে, পড়তে, গণনা করতে ও যোগাযোগ স্থাপন করার সক্ষমতাকে বোঝানো হয়। সাক্ষরতা সম্পন্ন একজন ব্যক্তি বাংলাদেশের পঞ্চম শ্রেণি পাস করা শিক্ষার্থীর সমমানের হতে হবে বলে মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন