

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া সুপারিশমালার অনেকগুলোতে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) চাওয়া প্রতিফলিত হয়েছে বলে মনে করে বিএনপি। দলটির অভিমত, বিএনপি সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার হওয়া সত্ত্বেও কমিশনের সুপারিশে তাদের মতামতকে উপেক্ষা করা হয়েছে। বিএনপির ‘নোট অব ডিসেন্ট’ লিপিবদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা বাদ দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় বিএনপি বিস্মিত, একই সঙ্গে ক্ষুব্ধ। দলটি বলছে, এটা জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রতারণার শামিল। এটা করে ঐকমত্য কমিশন চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে ঐক্যের পরিবর্তে কার্যত অনৈক্য সৃষ্টি করছে। বিএনপি এখন মনে করছে, ঐকমত্য কমিশন, সরকার এবং আরও দু-একটি রাজনৈতিক দল একই পক্ষ। এগুলোকে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন সঠিক সময়ে না করার ‘অপচেষ্টা’ হিসেবে দেখছে দলটি। গত মঙ্গলবার রাতে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এমন আলোচনা হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
দীর্ঘ আলোচনার পর রাজনৈতিক দলগুলো গত ১৭ অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করলেও এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে মতভেদ থেকে যায়। এমন অবস্থাতেই গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা ও ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশমালা তুলে দেন। সরকারকে সাংবিধানিক আদেশ জারি করে গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে সেখানে। সুপারিশে বলা হয়েছে, ওই আদেশ জারির পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যথোপযুক্ত সময়ে অথবা নির্বাচনের দিন গণভোট হবে। সেজন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করতে হবে।
সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, আগামী সংসদ নিয়মিত কাজের পাশাপাশি প্রথম ২৭০ দিন (৯ মাস) ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ হিসেবে কাজ করবে। গণভোটে পাস হওয়া প্রস্তাবগুলো এই সময়ের মধ্যে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করবে। তবে পরিষদ ২৭০ দিনের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হলে বিলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে।
দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু কালবেলাকে বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে বিএনপি একটি সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার। অথচ বিএনপির যা প্রস্তাবনা, ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে সেগুলোর কিছুই রাখা হয়নি। বরং বিএনপি যেগুলো চায়নি, সেগুলোই তারা করছে। ঐকমত্য কমিশন এখন কার্যত ‘অনৈক্য কমিশন’ হয়ে গেছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঐকমত্য কমিশন যদি সবকিছু তাদের ইচ্ছামতো করে, তাহলে বিএনপিকে তো কমিশন বৈঠকে না ডাকলেই পারত। বিএনপিকে ব্লাফ দিয়ে সুপারিশ জমা দেওয়া, এটা কি ঐকমত্যের কোনো চিহ্ন?
মন্তব্য করুন