চিনির বাজারে অস্থিরতা থামছে না। দফায় দফায় দাম নির্ধারণ করা হলেও সেই দামে ভোক্তারা চিনি কিনতে পারছেন না। সর্বশেষ সরকার প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম ১২০ টাকা ঠিক করলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। এর পেছনে আন্তর্জাতিক বাজারকে দায়ী করছেন আমদানিকারকরা।
এ নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে কয়েকবার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ ১১ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা-সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সপ্তম সভা। সেখানে উত্থাপিত তথ্যে জানা গেছে, বছরে দেশে চিনির চাহিদা ২০ লাখ টন। এর মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে জুলাই থেকে মে পর্যন্ত চিনির চাহিদা ১৭ লাখ ৬০ হাজার টন। এ সময়ে দেশে উৎপাদন হয়েছে ২১ হাজার টন। আমদানি করা হয়েছে ১৬ লাখ ৬৭ হাজার টন। অভ্যন্তরীণ ও আমদানি নিয়ে মোট সরবরাহের পরিমাণ ১৬ লাখ ৮৮ হাজার টন। এ সময়ে ঘাটতি আছে ৭২ হাজার টন চিনি। ঘাটতি মেটাতে ভারত থেকে চিনি আমদানি করা হলেও চলতি সময়ে তা হচ্ছে না। সেজন্য ব্রাজিল থেকে আমদানির প্রক্রিয়া চলছে।
টিসিবির বাজার দরের তথ্য থেকে জানা গেছে, গত বছর এই সময়ে বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম ছিল ৮০ থেকে ৮৪ টাকা। বর্তমান বাজারে সর্বোচ্চ ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর আগে ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে দাম বাড়তে শুরু করে এই ভোগ্যপণ্যের। গত নভেম্বরে ১০০ টাকা অতিক্রম করে চিনির দাম। সেই সময়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার চিনির দাম ১০২ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনির দাম ১০৮ টাকা ঠিক করে দেয়। কিন্তু সেই দামে চিনি পাওয়া দূরের কথা, বাজার থেকে চিনি উধাও হয়ে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ট্রাকে করে খোলা বাজারে চিনি বিক্রির উদ্যোগ নিয়েও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। পরে ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জানুয়ারিতে আরও একদফা দাম বাড়িয়ে খোলা চিনি ১০৭ টাকা এবং প্যাকেট চিনির কেজি ১১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়, যা সেই সময়ে কার্যকর হয়নি। তখন প্রতি কেজি খোলা চিনি ১২০ টাকায় বিক্রি হয়। দীর্ঘ সময়ে নির্ধারিত দাম কার্যকর না হওয়া আন্তর্জাতিক বাজারে সঙ্গে সমন্বয় করে সর্বশেষ গত ১০ মে দাম ঠিক করা হয়। সেখানে প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম ১২০ টাকা এবং প্যাকেট চিনির কেজি ১২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়, যা এখন পর্যন্ত কার্যকর হয়নি।
এদিকে বাজার পরিস্থিতি সামাল দিতে রাষ্ট্রীয় বিপণন সংস্থা টিসিবির জন্য চিনি আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সম্প্রতি সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত প্রায় সবকটি মন্ত্রিসভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে টিসিবির জন্য ভোজ্যতেল ও পরিশোধিত চিনি আমাদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। এ ছাড়া বর্তমানে টিসিবির মাধ্যমে মাসে একবার ১ কোটি কার্ডধারী সুবিধাভোগী পরিবারকে ৭০ টাকা কেজি দরে ১ কেজি চিনি দেওয়া হচ্ছে।
সার্বিক বিষয়ে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ কালবেলাকে বলেন, দাম চাহিদার ওপর নির্ভার করছে। যে চাহিদা তার থেকে আমদানি কিছুটা কম রয়েছে। আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি। আপাতত ভারত থেকে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে ব্রাজিল থেকেও আনতে খরচ বেশি হচ্ছে। যেজন্য একটু সমস্যা হচ্ছে। এ নিয়ে কাজ চলছে।
সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর না হওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চিনির আন্তর্জাতিক বাজার ভিত্তি করে দাম ঠিক করা হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর আবেদন করেছেন। বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য ট্যারিফ কমিশনে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে মতামত এলে বলা যাবে, দাম সমন্বয় করা হবে কি না।
মন্তব্য করুন