আগামী ৯ মার্চ জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রওশনপন্থিরা। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষই দলের নেতাকর্মীদের নিজ বলয়ে ধরে রাখার চেষ্টা করছে। এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে ভেতরে ভেতরে চলছে চাপা উত্তেজনা। সম্মেলনের আগেই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী রওশনের নামে দলের রেজিস্ট্রেশন আনা সম্ভব হলে জাপার পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হতে পারে। এটা হলে কাদেরপন্থিদের একটি প্রভাবশালী অংশ যোগ দিতে পারে বিভক্ত অংশে।
দলে নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের ধারাবাহিকতায় গত ২৮ জানুয়ারি জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে বহিষ্কার করে নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন রওশন এরশাদ। এক দিন পর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আগামী ২ মার্চ সম্মেলন করার ঘোষণা দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন অনুযায়ী দ্বাদশ রাজনৈতিক দল হিসেবে জাপার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ইসিতে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত এর সুরাহা হয়নি। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলের সম্মেলন হবে ৯ মার্চ। এজন্য ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন এরই মধ্যে বরাদ্দ নেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে।
সম্মেলনের প্রস্তুতির ব্যাপারে জানতে চাইলে জাপার রওশনপন্থি অংশের মহাসচিব কাজী মামুনুর রশিদ কালবেলাকে বলেন, ‘সম্মেলনের প্রস্তুতি চলছে। আমরা সব জেলার সঙ্গে যোগাযোগ করছি। সবাই আমাদের সঙ্গে আছে। জি এম কাদেরের নেতৃত্বে এখন আর কেউ জাতীয় পার্টির রাজনীতি করতে চায় না।’
রওশনপন্থিদের সম্মেলন নিয়ে জাপার ভাবনা প্রসঙ্গে মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু কালবেলাকে বলেন, ‘তাদের সম্মেলন নিয়ে আমাদের কোনো ভাবনা নেই। তারা তাদের মতো করে দল করবে, এই স্বাধীনতা রয়েছে। এতে বাধা দেওয়ার কিছু নেই। আমরা মূল দল। এ নিয়ে সন্দেহের কিছু নেই।’ জাতীয় পার্টিকে নিয়ে এ ধরনের ষড়যন্ত্র নতুন নয় বলেও মনে করেন চুন্নু।
জানা গেছে, রওশনপন্থিরা কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণার পর নড়েচড়ে বসেছেন জি এম কাদের। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর দলের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে প্রায় এক বছর। তাই নতুন সম্মেলনের জন্য রোজার পর দলের প্রেসিডিয়ামের বৈঠক ডাকার আলোচনা চলছে। এর আগেই দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক ডাকা হতে পারে। রওশনপন্থিদের সম্মেলনের আগেই এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকে সারা দেশের নেতাকর্মীদের দলছুট না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে যথাযথ মূল্যায়নের আশ্বাস দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
নেতাকর্মীদের ধরে রাখতে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। জেলা-উপজেলা-মহানগর ও থানা কমিটির সম্মেলন দ্রুত শেষ করারও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলছেন দলের প্রধান। সম্প্রতি দলের কাকরাইলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় দখল করেন রওশনপন্থিরা। এই কার্যালয় নিজেদের বলয়ে রাখতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতাদের এরই মধ্যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন বিকেলে বেশকিছু নেতাকর্মী কার্যালয়ে নিয়মিত বসছেন বলেও জানা গেছে।
সূত্র জানায়, জাপায় থাকা একাধিক কো-চেয়ারম্যান, অন্তত পাঁচজন প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশনপন্থিদের সঙ্গে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাদের দলের পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। জাপার নির্বাচিত ১১ এমপির মধ্যে ৩ জন রওশনের সঙ্গে থাকতে চান। তবে বিষয়টি নির্ভর করছে পার্টির রেজিস্ট্রেশন রওশনের পক্ষে আসা-না আসার ওপর। না এলে জি এম কাদের তাদের দল থেকে বহিষ্কার করলে সংসদ সদস্য পদ যেতে পারে। তাই তিনজনই বুঝেশুনে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে চান।
সম্মেলন ঘনিয়ে আসায় রওশনপন্থি অংশে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে চলছে জোর কানাঘুষা। এই অংশের একাধিক প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রওশনকে সামনে রেখেই একটি অংশ নতুন জাপার যাত্রা শুরু করতে চান। এক্ষেত্রে আমৃত্যু দলের চেয়ারম্যান হচ্ছেন রওশন এরশাদ। মহাসচিব হচ্ছেন দলের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব কাজী মামুনুর রশিদ। এরশাদপুত্র সাদসহ কাদেরপন্থি কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে দেওয়া হতে পারে নির্বাহী চেয়ারম্যানের পদ। এরপর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজনকে কো-চেয়ারম্যানসহ প্রেসিডিয়ামের পদ দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। তবে দলের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রওশনের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ এতদিন রওশনের সঙ্গে থাকলেও নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে হঠাৎ করেই বেঁকে বসেছেন তিনি। তিনি দীর্ঘদিন রওশনপন্থিদের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করলেও এখন নিজের মতো করেই চলছেন।