কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০২৩, ০২:২৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বিদায়বেলায় ভালোবাসায় সিক্ত বুলবুল মহলানবীশ

বিদায়বেলায় ভালোবাসায় সিক্ত বুলবুল মহলানবীশ

ফুলেল শ্রদ্ধায় সিক্ত হয়ে চিরবিদায় নিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী বুলবুল মহলানবীশ। গতকাল সোমবার সকাল ১১টায় বুলবুল মহলানবীশের মরদেহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আনা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে। এ সময় তাকে স্মরণ করে স্মৃতিচারণ করেন সংস্কৃতি অঙ্গনের অগ্রজ এবং বুলবুলের সহযোদ্ধারা। গত শুক্রবার প্রথম প্রহরে নিজ বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বুলবুল মহলানবীশ। তার ছেলে বিদেশে থাকায় মরদেহ হিমঘরে রাখা হয়। সেখান থেকে গতকাল সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আনা হয়। শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী তিমির নন্দী বলেন, ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের দুজন চলে গেলেন একই দিনে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপক আশফাকুর রহমান খান এবং শিল্পী বুলবুল মহলানবীশ। তাদের দুজনের প্রতি আমার শ্রদ্ধা রইল।’ চলে যাওয়ার পর মরণোত্তর পদক দিয়ে লাভ নেই উল্লেখ করে তিমির নন্দী বলেন, ‘মারা যাওয়ার পরে হয়তো সরকার মূল্যায়ন করে রাষ্ট্রীয় পদক দেবে। কিন্তু আমার অনুরোধ, যারা ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে অবদান রেখেছেন, এখনো যারা জীবিত আছেন, তাদের দিকে একটু তাকান। চলে যাওয়ার পর মরণোত্তর দিয়ে কোনো লাভ নেই। কারণ সেই আনন্দটা যদি বন্ধু পরিবারের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে না পারল, সেই পদক দিয়ে তো লাভ নেই। তাই সরকারের দায়িত্বশীল জায়গায় যারা আছেন, তাদের ভাবার বিষয় যে, জীবিত থাকতেই যেন গুণীজনকে মূল্যায়ন করা হয়।’ বুলবুল মহলানবীশ প্রসঙ্গে স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘বুলবুল ছোটবেলা থেকেই সংগীতচর্চা করতেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে আমাদের সঙ্গে কণ্ঠ দিয়েছেন। তিনি শুধু সংগীতশিল্পী ছিলেন না, অভিনেত্রীও ছিলেন। তিনি নাটকে অভিনয় করেছেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কল্যাণ মিত্রের ‘জল্লাদের দরবার’ নাটকে তিনি অভিনয় করতেন। এই নাটকটি অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। হঠাৎ করেই চলে গেলেন তিনি। তার চলে যাওয়াতে আমরা একজন সহযোদ্ধাকে হারালাম, তেমনি দেশ একজন রত্ন হারাল। আমাদের অনেক কিছু পাওয়ার ছিল তার কাছ থেকে।’ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বীর মুক্তিযোদ্ধা বুলবুল মহলানবীশের মরদেহে রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শন করে ঢাকা জেলা প্রশাসন। পরে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যবস্থাপনায় শুরু হয় শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব। এক মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করা হয় এবং শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন উপস্থিত অনেকে। সবশেষে জাতীয়সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শেষ হয়। এ সময় বুলবুল মহলানবীশের স্বামী সরিত কুমার লালা বলেন, ‘আপনাদের ভালোবাসা বুলবুল চেয়েছিল। একটা কথা আমার মনে হয়, বুলবুল প্রচণ্ড জীবনমুখী ছিল। একটা পূর্ণজীবন সে যাপন করতে চেয়েছিল। কোনো রকমে বেঁচে থাকা, এটা তার ধাঁচে ছিল না। গত দুই বছর কিন্তু সেই জীবন সে যাপন করতে পারেনি। সে বেঁচে ছিল, কিন্তু মানসিকভাবে খুব বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। বুঝতে দিত না, কিন্তু আমি বুঝতে পারতাম।’ গুণী এই শিল্পীর মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী, ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী, কচিকাঁচার মেলা, সেক্টরস কমান্ডার ফোরামের কেন্দ্রীয় নারী কমিটি, গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ, থিয়েটার ৫২, মহিলা পরিষদ, ছায়ানট, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ, স্বনন, বাংলা একাডেমি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, নবান্ন উদযাপন পর্ষদ, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, ছাত্র ইউনিয়ন এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। ব্যক্তিগতভাবেও অনেকে শ্রদ্ধা জানান। তাদের মধ্যে ছিলেন রামেন্দু মজুমদার, আবুল বারক আলভী, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, আশরাফুল আলম, সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, শাহীন সামাদ, সাংবাদিক আবেদ খান প্রমুখ। শ্রদ্ধা নিবেদন করে সাংস্কৃতিক সংগঠক ও নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘যে চেতনা নিয়ে বুলবুল মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল, সেই চেতনা কিন্তু সারাজীবন বহন করেছে। আমরা দেখেছি, অনেক বিরূপ পরিস্থিতিতেও বুলবুল মুক্তিযুদ্ধের কথা বলেছে।’ সাংবাদিক আবেদ খান বলেন, ‘বুলবুলকে চিনি সেই ছোটবেলা থেকে। সে মনেপ্রাণে ভালোবাসত বাংলাদেশকে, মনেপ্রাণে ভালোবাসত মুক্তিযুদ্ধকে। এ তো পারিবারিক একটা মানুষ, এ তো সামাজিক একটা মানুষ। কারও বিপদে-আপদে বুলবুল অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না, আজকে বুলবুলের মরদেহের সামনে আমাকে কথা বলতে হচ্ছে। অথচ আমাকে নিয়ে তার কথা বলার কথা ছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যতদিন থাকবে, ততদিন সে থাকবে আমাদের মাঝে।’ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক সংগঠক নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘যে কজন মানুষ আমৃত্যু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জীবনযাপন করেছেন, বুলবুল তাদের একজন। অনেকের জন্য ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যুদ্ধটা শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু বুলবুলের জন্য ১৬ ডিসেম্বর যুদ্ধটা শেষ হয়নি। আর শেষ হয়নি বলেই আমাদের সব আন্দোলনে, সব সংগ্রামে সে সামনে থেকেছে।’ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘বুলবুল সেই অল্পবয়সে নববধূর সাজে যখন সজ্জিত ছিল, তখন সেই নববধূর সাজ গুটিয়ে রেখে অল্পবয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। দেশ স্বাধীনের মুহূর্তে সেই কালজয়ী গান ‘বিজয় নিশান উড়ছে ঐ’ কণ্ঠে তুলে নিয়েছিলেন যে কজন শিল্পী, তাদের অন্যতম বুলবুল মহলানবীশ।’ বুলবুল মহলানবীশের পরিবার থেকে জানানো হয়, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সবুজবাগের বরদেশ্বরী কালীমন্দিরে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

৩১ দফা বাস্তবায়নে যুবসমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান আমিনুল হকের

শীতের শুরুতেই নিওরের স্কিনকেয়ার পণ্যের উচ্চ চাহিদা

খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় শিবিরের দোয়া মাহফিল

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ৩

এশিয়ান টাউনস্কেপ পুরস্কার পেল রাজউক

৭ ভূমিকম্পে কাঁপছে দেশ, কী চলছে মাটির নিচে

রামেকে দেশের প্রথম সাপে কাটা ওয়ার্ড চালু, এক মাসে মৃত্যু শূন্য

নারী উদ্যোক্তা তনিকে মানহানি, গ্রেপ্তার আকাশ কারাগারে 

ভূমিকম্পের বৈজ্ঞানিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি

নিজের নির্বাচনী আসন ও দল নিয়ে যা জানালেন আসিফ মাহমুদ

১০

শ্রীলঙ্কায় ভারি বৃষ্টিতে ভূমিধস-বন্যা, নিহত ৪০

১১

সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে মাউশির কঠোর নির্দেশনা

১২

স্ত্রী ও দুই সন্তান হত্যায় মামলা, প্রধান আসামি কারাগারে

১৩

‎২২ ডিসেম্বরেই জকসু নির্বাচন চান জবি ছাত্র অধিকার পরিষদ

১৪

পাওয়ারপ্লেতেই ৪ উইকেট গেল বাংলাদেশের

১৫

সুদের টাকা নিয়ে দ্বন্দ্ব, ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা

১৬

শুক্রবার থেকে টঙ্গীতে ৫ দিনের জোড় শুরু

১৭

বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে ফের পরিবর্তন, বাড়ল না কমলো?

১৮

দেশের নারী সমাজ বিএনপির প্রতি আস্থাশীল : সেলিমা রহমান

১৯

ক্রিকেটে ‘গ্রোভেল’ কী — এবং কেন এটি এত কুখ্যাত?

২০
X