চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চলতি বছর মারা যাওয়া ২১ জনের মধ্যে ১০ জনই শিশু। চলতি মাসের ২১ দিনে মারা গেছে ৫ শিশু। এ বছর জেলায় ১ হাজার ৭৮০ জন ডেঙ্গু আক্রান্তের মধ্যে শিশু ৪৩২ জন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বড়দের চেয়ে কম। তাই ডেঙ্গুতে শিশুরা বেশি কাহিল হচ্ছে।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় (গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) চট্টগ্রামে ৩১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে কেউ মারা যাননি। চলতি বছর এ পর্যন্ত মারা গেছেন ২১ জন। এর মধ্যে শিশু রয়েছে ১০ জন। পুরুষ ৬ জন ও নারী মারা গেছেন ৫ জন। শুক্রবার পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে একশর মতো শিশু ভর্তি রয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা কীটতত্ত্ববিদ মোছাম্মৎ এনতেজার ফেরদাওছ কালবেলাকে বলেন, এ বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। সেইসঙ্গে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ২০২২ সালের জুলাই মাসে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন ৬৪ জন। আর চলতি মাসের ২১ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৩১৫ জন। গত বছরের জুলাই মাসে মারা গিয়েছিল একজন। আর চলতি মাসের ২১ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১২ জন। ২০২২ সালে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিল ৪১ জন। আর চলতি বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২১ জন।
শিশুদের ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যু বেশি নিয়ে চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু রোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মোছলেম উদ্দিন সবুজ কালবেলাকে বলেন, এক বছরের কম বসয়ী শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। শিশুদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বড়দের থেকে কম। শিশুরা শারীরিক জটিলতাগুলো বড়দের মতো করে বলতে পারে না। ফলে দেখা যায়, শিশুদের সময়ক্ষেপণ করে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়। এতে করে শিশুদের মৃত্যুহার বেড়ে যাচ্ছে।
বর্তমান সময়ে জ্বর এলে শিশুদের ক্ষেত্রে কী করতে হবে—প্রশ্নের জবাবে এই শিশু বিশেষজ্ঞ বলেন, বাচ্চাদের জ্বর হলে প্রথমত জ্বর কমানোর ব্যবস্থা করতে হবে। বেশি জ্বর হলে জলপট্টি ও শরীর মুছে দিতে হবে। শিশুদের ঘন ঘন পানি, স্যালাইন, ডাবের পানি ও তরল জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে। ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে খাওয়াতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এক বছরের নিচের শিশুর মায়েরা আক্রান্ত হলে শিশুরা আক্রান্ত হতে পারে বেশি। সচেতন না থাকায় শিশুরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। শিশুদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি হচ্ছে ডেঙ্গুর শক সিনড্রমে। কারণ বাচ্চারা প্রেশার কমে গেলে, দুর্বল লাগলে, মাথা ঘুরালে বলতে পারে না। বাচ্চাদের শক সিনড্রম হলে বোঝা যায় অনেক পরে। ততক্ষণে শিশুর অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যায়। তাই জ্বর হলেই শিশুকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে পরামর্শ করে ওষুধ খাওয়ানো ভালো। তবে শিশুদের যাতে মশা কামড়াতে না পারে সে ব্যাপারে অভিভাবকদের সচেতেন হতে হবে।
মন্তব্য করুন