সভ্যতার ক্রমাগত অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে যুগে যুগে পরিবর্তন হয়েছে মানুষের যোগাযোগের মাধ্যম। সেই গরু-মহিষের গাড়ি থেকে টাঙা, বাস, রেলগাড়ি, অটোরিকশাসহ কালের বিবর্তনে এসেছে নানা ধরনের আধুনিক থেকে অত্যাধুনিক যানবাহন। শহর থেকে গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে আধুনিক যানবাহনের বিচরণ। মানুষের জীবনযাত্রা অনেক এগিয়ে গেছে। একদিনের পথ যেতে এখন সময় লাগে মাত্র ৩-৪ ঘণ্টা। তবে এমন সুবিধা থেকে বঞ্চিত চরাঞ্চলের মানুষ। তাদের এখনো পথের সাথি হিসেবে টিকে আছে আদিকালের ঘোড়ার গাড়ি।
সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর বিশাল জলরাশি পেরিয়ে বালুচরের বুকে টগবগিয়ে এখনো ছুটে চলে ঘোড়ার গাড়ি। কালের বিবর্তনে এক সময়ের রাজকীয় পরিবহনটির রূপ বদলালেও এখনো তার প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়নি। যমুনার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে উঁচু-নিচু, আঁকা-বাঁকা বালুময় পথে যাত্রী বা মালপত্র গন্তব্যে পৌঁছে দেয় ঘোড়ার গাড়ি।
প্রকৃতিকন্যা যমুনার অভ্যন্তরেরচরাঞ্চলে রাস্তাগুলো সবসময়ই উঁচু-নিচু, বালুময় দুর্গম। নির্দিষ্ট কোনো রাস্তা নেই এসব চরে। বিভিন্ন সময়ে সুবিধাজনক রাস্তা বেছে নেন চরের মানুষ। এসব রাস্তায় মাইলের পর মাইল হেঁটে যাতায়াত করেন তারা। দুর্গম এসব রাস্তায় মোটরসাইকেলেও যাত্রী পরিবহন করা হয়। তবে ভাড়া অনেক বেশি হওয়ায় মোটরসাইকেলে চলাচলকারীর সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। আর পণ্য পরিবহনে ঘোড়ার গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন একেবারেই অসম্ভব।
তবে সিরাজগঞ্জ জেলার বেশ কয়েকটি চরের পাকা রাস্তা নির্মাণ হওয়ার ফলে কিছু আধুনিক যানবাহন (থ্রি হুইলার) চলাচল করতে দেখা যায়। কিন্তু যমুনার পাড় থেকে নৌকায় আসা মালপত্র কিংবা বিস্তীর্ণ ফসলি জমির মাঝখান থেকে কৃষিপণ্য পরিবহনে এখনো একমাত্র ভরসা ঘোড়ার গাড়ি।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার যমুনা নদীর অভ্যন্তরে বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে সরেজমিন গেলে ঘোড়ার গাড়ির এমন অনেক দৃশ্যই দেখা যায়। নদীর মহেশকাংলা নৌকাঘাটে গিয়ে দেখা যায়, শহর থেকে নৌকায় আনা মালপত্র তুলে দেওয়া হয়েছে ঘোড়ার গাড়িতে। নদীর তীর থেকে খাড়া ঢাল বেয়ে ঘোড়ার গাড়ি ওপরে উঠছে। এরপর ছুটে চলছে মাইলের পর মাইল। খানিকটা দূরে আরও একটি ঘোড়ার গাড়িকে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা যায়। এসব গাড়ি বিশাল উঁচু থেকে নিচু ঢাল, বালুময়, কিংবা ছোটবড় গর্তযুক্ত সব দুর্গম পথ অনায়াসেই পাড়ি দিতে পারে। যাতায়াত আর পণ্য পরিবহনে দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই চরাঞ্চলবাসীর অন্যতম যান হিসেবে চলছে ঘোড়ার গাড়ি। এমন চিত্র সিরাজগঞ্জের ৫টি উপজেলার অন্তত ৩৫টি ইউনিয়নেই কমবেশি দেখা যায়। তবে কিছু এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বা শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ভটভটিও চলাচল করতে দেখা গেছে। ওইসব অঞ্চলে কিছু পাকা রাস্তা হওয়ায় এসব আধুনিক যানবাহন চলাচল করে।
কাওকোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জিয়া মুন্সী বলেন, যমুনার মধ্যবর্তী একটি ইউনিয়ন কাওয়াকোলা। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা—গ্রাম হবে শহর। সেটা বাস্তবায়নে এখন চরের অনেক রাস্তাই পাকা হয়েছে। তবে নদী-তীরবর্তী বালুময় রাস্তাগুলোতে চলাচল বা পণ্য পরিবহনের জন্য একমাত্র যানবাহন ঘোড়ার গাড়ি।