গ্রামের কোনো মানুষই জুতা-স্যান্ডেল পরেন না। খালি পায়েই হাঁটেন। বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে এই চর্চা। শুনতে অবাক লাগলেও আমাদের এ বসুন্ধরাতেই রয়েছে এমন অদ্ভুত গ্রাম। আন্দামান নামের এ গ্রামটির অবস্থান ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যে। দেবীর সম্মানে গ্রামটিতে জুতা-স্যান্ডেল নিষিদ্ধ!
চেন্নাই থেকে ৪৫০ কিলোমিটার দূরে আন্দামান গ্রামের অবস্থান। গ্রামটিতে ১৩০ পরিবারের বসবাস। এখানকার মানুষ চাষাবাদের পাশাপাশি মাঠে শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। বাসিন্দাদের মধ্যে শুধু বয়স্ক অথবা অসুস্থ কোনো মানুষই শুধু জুতা-স্যান্ডেল পরে গ্রামে হাঁটতে পারেন। তা ছাড়া আর কেউই পরেন না। তবে গ্রীষ্মকালে প্রখর খরতাপের মধ্যে উত্তপ্ত মাটিতে হাঁটার সময় পায়ের সুরক্ষায় কিছু মানুষ চপ্পল ব্যবহার করে থাকেন। গ্রামের শিশুরাও খালি পায়েই স্কুলে যায়। গ্রামের মানুষ জুতা-স্যান্ডেল পরার পরিবর্তে হাতে করে বহন করেন। যেন তারা তাদের কোনো ব্যাগ বা পার্স বহন করছেন।
অদ্ভুত এ চর্চার পেছনে একটি কারণ রয়েছে। সেটা হলো—আন্দামানের বাসিন্দারা বিশ্বাস করেন দেবী মুথ্যালাম্মা (দেবী দুর্গা বা কালীমাতার একটি রূপ) তাদের গ্রামকে রক্ষা করেন। প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিল মাসে গ্রামের বাসিন্দারা দেবীর পূজা করেন। এ সময় তারা তিন দিনব্যাপী উৎসবেরও আয়োজন করেন।
দেবীর সম্মানে তারা জুতা-স্যান্ডেল পরেন না। যেমন, মানুষ মন্দিরে জুতা পায়ে প্রবেশ করেন না। আন্দামানের বাসিন্দারাও তাদের গ্রামটি মন্দির হিসেবেই বিবেচনা করেন। আর এ কারণেই তারা গ্রামে খালি পায়ে চলাফেরা করেন। বছরের পর বছর ধরে তারা এ চর্চা চালিয়ে আসছেন। এমনকি অন্য গ্রাম থেকেও যদি কেউ আন্দামানে আসেন তাদের এ বিষয়ে জানানো হয়। কিন্তু তারা যদি এ নিয়ম মেনে চলতে অস্বীকার করেন, তখন তাকে বাধ্য করা হয়।
পুরোনো এ বিশ্বাস নিয়েই চলছেন আন্দামানের বাসিন্দারা। তাদের বিশ্বাস, যদি তারা এ প্রথার চর্চায় অস্বীকার করেন, তাহলে রহস্যময় এক জ্বরে আক্রান্ত হবে; যেটি পুরো গ্রামে ছড়িয়ে পড়বে এবং সবাইকে শেষ করে করে দেবে। এ কারণেই তারা জুতা পায়ে দিতে চান না এবং যেখানেই যান খালি পায়ে হাঁটেন। সূত্র: নিউজএইটিন