বাজারে স্বস্তি ফেরাতে আলু, পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল, ডিম ও চালের শুল্ক ছাড় দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। অথচ এর সুফল পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ, বাড়তি দামেই নিত্যপণ্য কিনতে হচ্ছে তাদের। শুল্ক ছাড়ের লভ্যাংশ ভোগ করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। গত এক মাসে আলুর দাম কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা, চালের দাম কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা, খোলা সয়াবিনের দাম লিটারে ১০ থেকে ১২ টাকা, পেঁয়াজের দাম ২৫ থেকে ৩৫ টাকা, রসুনের দাম ২০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে।
আমদানি করা পেঁয়াজের মূল্য সহনীয় করতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত বুধবার প্রজ্ঞাপন জারি করে। কিন্তু বাজারে বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নিউমার্কেট, গ্রিন রোড, লালবাগ, ঝিগাতলা, মোহাম্মদপুর কাঁচাবাজার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
সরেজমিন দেখা যায়, গত সপ্তাহের মতো ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। আর দেশি পেঁয়াজ ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। খুচরা বাজারে এই মসলা পণ্যটি আরও ১০ টাকা বেশিতে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বছরের শেষের দিকে কৃষকের ঘরে পেঁয়াজ না থাকায় দুই থেকে তিন সপ্তাহ ধরে দাম বাড়া শুরু হয়েছে, যা এখনো বাড়ছে। নতুন পেঁয়াজ না আসা পর্যন্ত দাম কমার সম্ভাবনা নেই।
শুল্ক ছাড়ের পর চালের দামও কমেনি বাজারে। মানভেদে বাজারে প্রতি কেজি নাজিরশাইল, জিরাশাইলসহ সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায়। বাসমতী মানভেদে ৯৫ থেকে ১০০ টাকা। গত সপ্তাহের তুলনায় মানভেদে ২-৩ টাকা কেজিতে বেড়েছে আটাশ চাল। গত সপ্তাহের ৬২ টাকার
আটাশ চাল বর্তমানে ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, পোলাও চাল ১২০ টাকা।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, বর্তমানে বাজারে চাল ভরপুর হলেও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে দাম কমছে না। তারা নতুন চাল বাজারে এলে দাম কমবে বলে জানান। কিন্তু আমরা যারা মধ্যবিত্ত, তাদের পক্ষে এত দামে চাল কিনে খাওয়া খুব কষ্ট হয়ে যায়। আগে মোটা চাল ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় কিনলেও এখন সেগুলোর দাম ৬৫ টাকা। কীভাবে বাঁচব, আপনারাই বলেন?
এদিকে আমন ধান বাজারে এলে চালের দাম কমবে বলে গতকাল খাদ্য অধিদপ্তরে খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেন, চলতি বছর আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ১৭ নভেম্বর থেকে আমন ধান সংগ্রহ করা হবে। এবার সাড়ে পাঁচ লাখ টন ধান সংগ্রহ করা হবে। পাশাপাশি দেড় লাখ টন ধান ও গম আমদানি করা হবে। এবার আমনের দাম কেজিপ্রতি ৩ টাকা বাড়ানো হয়েছে। বাজারে আমন ধান এলে চালের দাম কমতে শুরু করবে।
বাজারে আলুর সংকট না হলেও দাম কমার কোনো নাম-গন্ধ নেই এই ভোগ্যপণ্যটির। গত দুই সপ্তাহে প্রতি কেজি আলুর দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। বর্তমানে প্রতি কেজি আলুর দাম ৭৫ টাকা। খুচরা বাজারে কেউ কেউ ৮০ টাকা দরেও বিক্রি করছেন।
কারওয়ান বাজারের আলু ব্যবসায়ী সালাম কালবেলাকে বলেন, হিমাগারে আলুর দর বেড়েছে, যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। নতুন আলু বাজারে এলে দাম কমবে। তবে এই অবস্থা বেশিদিন থাকবে না।
সরকার ভোজ্যতেলের শুল্ক ছাড় দিলেও গত সপ্তাহের মতো একই দামে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন, পামঅয়েল ও বোতলজাত তেল। বর্তমানে পামঅয়েল ১৬৫ টাকা লিটার, খোলা সয়াবিন ১৬৭ ও ৫ লিটারের বোতল ৮০০ থেকে ৮১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
নিউমার্কেট মুদি ব্যবসায়ী আনোয়ার কালবেলাকে বলেন, বেশি দামে তেল কিনলে বেশিতেই আমরা বিক্রি করি। শুল্ক ছাড়ের তেল এখনো বাজারে আসেনি। তবে গত সপ্তাহে তেলের লিটারে ২-৩ টাকা বেড়েছিল; সেই দামেই আমরা বিক্রি করছি।
এদিকে, গত সপ্তাহের মতো অপরিবর্তিত দামেই বিক্রি হচ্ছে ডিম। প্রতি হালি ডিমের দাম ৫০ টাকা, ডজনে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা। খুচরা বাজারে ডজনে ১৫৫ টাকাও বিক্রি করতে দেখা যায়। হাঁসের ডিমের হালি ৮০ টাকা ও ডজন ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর নিউমার্কেট বনলতা মার্কেটে সোনালি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা, লেয়ার ৩০০ টাকা, ব্রয়লার ১৯০ টাকা। কারওয়ান বাজারে এগুলোর দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা কমে পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া গরু ৭৫০ টাকা এবং খাসির মাংস ১১০০ টাকা।
তবে কাঁচামরিচ ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২০০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা। বড় বাজারে কাঁচামরিচের দাম ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা।
এদিকে শীতের সবজির উৎপাদন বাড়ায় দাম কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহের মতো শিম, কাঁকরোল, বরবটি, টমেটো প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। পেঁপে ও কলা ৪০ টাকায় পাওয়া গেলেও বাকি সবজিগুলো খুচরা বাজারে ৫০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে। লম্বা বেগুন ৮০, গোল বেগুন ১০০, পেঁপে ৪০, ঝিঙা ৭০, পটোল ৬০, করলা ১০০, বাঁধাকপি ও ফুলকপি ৫০, কাঁকরোল ১০০, কলার হালি ৪০, দেশি টমেটো ২৪০ টাকা।
এ ছাড়া ইন্ডিয়ান টমেটো ১৬০ টাকা, শিম ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৭০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৮০ টাকা, মুলা ৭০, ধুন্দল ৮০, কচুরমুখী ৮০, কচুরলতি ৮০, বরবটি ১২০, লেবুর হালি ২০ থেকে ৩০, পালংশাক প্রতি আঁটি ২০ টাকা, কলমি শাক ১০, লালশাক ১৫, পুঁইশাক ৩০, ডাঁটাশাক ৩০, মুলাশাক ১৫ টাকা।
মাছের দাম আকারে ভিন্নতা রয়েছে। তেলাপিয়া মাছ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০, চিংড়ি ৮০০, চাষের শিং ৫৫০, ৫ কেজির রুই ৪০০, ছোট রুই ২২০, এক কেজির ইলিশ ১৮০০, ঝাটকা ৫০০, পাবদা ৪০০, পাঙাশ ১৮০-২০০, বোয়াল ৫০০ টাকা, বড় কাতলা ৪০০ টাকা কেজি।