দেশে নিত্যপণ্যের বজারে আবার অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজ, ডিম, শাক-সবজি ও মাছ-মাংসের দাম। এদিকে দাম আরও বেড়ে যেতে পারে—এমন গুজবে অনেককে চাহিদার অতিরিক্ত পণ্য কিনতে দেখা গেছে। এতে বাজারের ওপর চাপ আরও বাড়ছে। এ সুযোগে দাম বাড়িয়ে চলছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে বাজারের তালিকায় কাটছাঁট করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, চলতি সপ্তাহের শুরু থেকে বাড়তে শুরু করেছে ডিমের দাম। প্রতি হালি ডিমে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর সঙ্গে দেশি পেঁয়াজের দামও কেজিতে ১৫ টাকা বেড়ে এখন ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমাদানি করা পেঁয়াজও কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। এর সঙ্গে গত সপ্তাহের তুলনায় প্রতি কেজি সবজিতে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত।
অন্যদিকে দীর্ঘদিন থেকে মাছ-মাংসের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে রয়েছে। ইলিশের ভরা মৌসুমেও দাম কমছে না মাছের। বাজারে ৬০০ বা ৭০০ গ্রামের ইলিশের কেজি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। ৯০০ গ্রাম থেকে এক কেজি বা তারও বেশি ওজনের ইলিশের কেজি ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ছোট বা আড়ইশ থেকে সাড়ে তিনশ গ্রামের ইলিশের কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই সঙ্গে বাজারে রুই-কাতলার কেজি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর তেলাপিয়া, পাঙাশের কেজি ২২০ থেকে আড়াইশ টাকা। নলা মাছের কেজি সাড়ে ৩০০ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকার মধ্যে। ছোট মাছের কেজি ৫০০ থেকে শুরু করে হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৭০০ থেকে ৭৮০ টাকায়। খাসির মাংসের কেজি ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে। ব্রয়লার মুরগির কেজি কিছুটা সহনীয় থাকলেও গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি বা কক মুরগির কেজি ৩২০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা। দেশি মুরগির কেজি ৭০০ থেকে সাড়ে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ডিমের পাইকারি বাজার সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ঢাকার বাজারে প্রতি একশ ডিম (বাদামি) বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ২৩০ টাকায়। এ হিসাবে প্রতি পিসের দাম পড়েছে ১২ টাকা ৩০ পয়সা। হাত বদল হয়ে খুচরা পর্যায় এসে প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকায়। হালি ৫৫ টাকা দরে। এতে প্রতি পিস ডিমের দাম পড়ছে ১৩ টাকা ৭৫ পয়সা।
তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আমান উল্লাহ কালবেলাকে বলেন, চাহিদার তুলনায় বাজারে ডিমের সরবরাহ কম। এর ফলে দাম কিছুটা বেড়েছে। বৃষ্টিপাত কমলে, বাজারে শাক-সবজির সরবরাহ বাড়লে ডিমের ওপর থেকে চাপ কমবে। তখন হয়তো দাম কমতে পারে।
এদিকে আমদানি স্বাভাবিক থাকলেও দেশের পাইকারি বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বাড়ছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। অন্যদিকে কৃষক পর্যায়ে দেশি পেঁয়াজ কমে আসায় মজুতদাররা দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছে বলে জানা গেছে।
গতকাল ঢাকার পাইকারি বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি পাইকারিতে ছিল ৪৩ টাকা, যা চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে বিক্রি হয়েছে ৪৫ টাকা বা তারও বেশি দামে।
টিসিবির তথ্যমতে, গতকাল ঢাকার বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। আর গত বছর এই সময়ে ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকার মধ্যে। গতকাল মানভেদে আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। গত বছরের এই সময়ে ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে।
পেঁয়াজের বাজার পরিস্থিতির বিষয়ে শ্যামবাজার কৃষিপণ্য আড়ত বণিক সমিতির সভাপতি হাজি মো. সাঈদ কালবেলাকে বলেন, দেশি পেঁয়াজ কমে আসায় বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের চাহিদা বেড়েছে। তবে সীমান্ত এলাকায় আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হওয়ায় পাইকারি বাজারে এসে দাম বাড়ছে। চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজের ঘাটতি নেই।
অন্যদিকে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের পাইকারি বাজার হামিদুল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস জানান, তাদের মার্কেটে দেশি পেঁয়াজ কম। আমদানি করা পেঁয়াজ থাকলেও কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা বেড়ে ৪৫ থেকে ৪৭ টাকায় উঠেছে।
সার্বিক বিষয়ে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান কালবেলাকে বলেন, প্রয়োজনের অতিরিক্ত কেনাকাটায় বাজারের ওপর আরও চাপ বাড়ে। তবে বাজারে দাম বাড়তে থাকলে ভোক্তার মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা কাজ করে। এজন্য অনেকে এক দিনের পরিবর্তে এক সপ্তাহের বাজার করেন। তবে এটি সঠিক সমাধান না। এখন যেটি হচ্ছে, বাজারের ওপর কারও নিয়ন্ত্রণ নেই। হতে পারে এ সুযোগে গুজবও কাজ করছে।
মন্তব্য করুন