আমজাদ হোসেন শিমুল, রাজশাহী
প্রকাশ : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৪৯ এএম
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৩২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ভুট্টা থেকে স্বচ্ছ পচনশীল ব্যাগ

ছাড়পত্রে আটকে গেছে ইফতেখারের উদ্যোগ

ছাড়পত্রে আটকে গেছে ইফতেখারের উদ্যোগ

ক্ষতিকর পলিথিন নিষিদ্ধ করেছে সরকার। মাঝেমধ্যে এই পলিথিনের জন্য বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর ব্যবহার নিষিদ্ধ সম্ভব হয়নি। এর প্রধান কারণ, পলিথিনের বিকল্প ওইভাবে তৈরি না হওয়া।

পলিথিন বন্ধের বিষয়টি সাধারণ মানুষসহ পরিবেশবিদরা স্বাগত জানালেও সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এ উদ্যোগ সফল করতে প্রয়োজন পলিথিনের বিকল্প ব্যাগের পর্যাপ্ত সরবরাহ। এদিকে ক্ষতিকর পলিথিনের বিকল্প হিসেবে রাজশাহীতে এরই মধ্যে ভুট্টা থেকে পচনশীল পরিবেশবান্ধব ব্যাগ তৈরির কাজ শুরু করেছেন ইফতেখারুল হক নামে এক উদ্যোক্তা।

জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার আলিমগঞ্জ এলাকায় ক্রিস্টাল বায়োটেক নামে একটি কারখানায় ২০২২ সালে সফলভাবে ওই পচনশীল শপিং ব্যাগ উৎপাদনে সক্ষম হন তিনি। ক্ষতিকর পলিথিন বর্জ্যের ব্যাপক দূষণ এড়াতে পরিবেশবান্ধব এই ব্যাগ গুরুত্বপূর্ণ সমাধান হতে পারে বলেও মত দেন বিশেষজ্ঞরা। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না পাওয়ায় থমকে আছে পচনশীল এই ব্যাগের উৎপাদন কাজ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ক্রিস্টাল বায়োটেক কারখানায় ২০২২ সালে পরীক্ষামূলক কম্পোস্টেবল বায়োপ্লাস্টিক ব্যাগ উৎপাদন শুরু করেন ইফতেখারুল হক। ভুট্টার কাঁচামাল স্টাচ (ভুট্টার হলুদ আবরণ তুলে ফেলার পরের সাদা অংশ) দিয়ে এ ব্যাগ তৈরি করা হয়। কাঁচামাল শুরুতে মেশিনে দিয়ে তাপ-বাতাসের সাহায্যে ফুলিয়ে হুবহু পলিথিনের মতো ব্যাগ উৎপাদন করা হয়। নান্দনিক এসব ব্যাগের গায়ে লেখা হয়, ‘পরিবেশ বাঁচান, আমি প্লাস্টিক না, ১০০ শতাংশ পচনশীল ব্যাগ’। যা এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কয়েকজন পরিবেশ-সচেতন ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করেছেন। বিদেশি কয়েকজন ক্রেতাও তার পণ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখিয়েছেন। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না পাওয়ায় থমকে আছে উৎপাদন কাজ, অনিশ্চয়তায় পড়েছে বাণিজ্যিক উৎপাদনও।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ক্রিস্টাল বায়োটেকের স্বত্বাধিকারী উদ্যোক্তা ইফতেখারুল হক বলেন, ‘বিদেশ থেকে আমদানি করা ভুট্টার কাঁচামাল দিয়ে এসব ব্যাগ তৈরি করা হয়। আমদানিনির্ভর হওয়ায় দাম একটু বেশি রাখতে হয়। তবু অনেক সচেতন ব্যক্তি ক্ষতিকর পলিথিনের বিকল্প ব্যবহার করতে চান। নিজস্বভাবে ভুট্টা থেকে কাঁচামাল উৎপাদন করা হলে দাম পলিথিনের মতোই হবে। বর্তমানে একটি বড় সাইজের এসব ব্যাগের দাম রাখা হয় ৪ টাকা, যার উৎপাদন খরচ হয় আড়াই টাকার বেশি। ছাড়পত্র পেলে পরিবেশগতভাবে পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পচনশীল ও পরিবেশবান্ধব এই ব্যাগ বাজারজাত করা যাবে।’

তিনি আরও বলেন, প্লাস্টিকের ক্ষতির বিষয়টি চিন্তা করে কয়েক বছর ধরেই পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পরিবেশবান্ধব ব্যাগ উৎপাদন করার চেষ্টা করছিলাম। ২০২২ সালের শেষের দিকে ভুট্টার ব্যাগ উৎপাদন শুরু করি। ভুট্টার ফলের ওপরের হলুদ অংশ ফেলে দিয়ে যে অংশটি থাকে এটিকে স্টাচ বলে। সেই স্টাচই এই ব্যাগের কাঁচামাল। এটি জার্মানির প্রযুক্তি হলেও মেশিন আমদানি করা হয়েছে ভারত থেকে। এই মেশিনে প্রতিদিন দুই লাখ পিস ব্যাগ উৎপাদন করা সম্ভব।

সবুজ পণ্য হিসেবে ব্যাগের অনুমোদন পেতে প্রায় দুই বছর ধরে অপেক্ষা করছেন জানিয়ে ইফতেখারুল হক বলেন, ‘বারবার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ অধিদপ্তর ২০২৩ সালের আগস্টে পণ্য পচনশীল কি না, তা বুয়েট থেকে অনুমোদন নেওয়ার পরামর্শ দেয়। অথচ বুয়েট এসবের কোনো পরীক্ষা বা ছাড়পত্র কিছুই দেয় না। তবু সবাই বুয়েট থেকে ছাড়পত্র নিতে বলছেন। তাদের যদি সেই সিস্টেমই না থাকে, তাহলে কীভাবে ছাড়পত্র পেতে পারি? সর্বশেষ পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন দিয়েছি। দেখি তারা কোনো সমাধান দিতে পারেন কি না।’

এ ব্যাপারে রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাহমুদা পারভীন বলেন, ‘ক্রিস্টাল বায়োটেকের স্বত্বাধিকারী ইফতেখারুল হককে আমরা চিঠি দিয়েছিলাম। সেখানে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কোনো উপাদান আছে কি না, সেটার একটা ছাড়পত্র বুয়েট থেকে নিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি সেই ছাড়পত্র আমাদের দিতে পারেননি। তাই আমরা উৎপাদনের অনুমোদনও দিতে পারছি না।’

বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর), রাজশাহীর সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আহসানুর রাব্বী বলেন, ‘উদ্যোক্তা ইফতেখারুল হক নমুনা নিয়ে আমার কাছে এসেছিলেন। এই ছাড়পত্র আমাদের দেওয়ার সুযোগ নেই। সে কারণে তাকে পচনশীলতার প্রতিবেদনের জন্য ঢাকায় যোগাযোগের পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু ঢাকা থেকে কী বলা হয়েছে, সেই আপডেটটা আর আমার কাছে নেই।’

বিশ্বব্যাংকের হিসাব মতে, প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ দশে রয়েছে। ২০০৫ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে এর ব্যবহার তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে। দেশের তিনটি প্রধান নদী পদ্মা, মেঘনা ও যমুনায় দিনে ৭৩ হাজার টন প্লাস্টিক ও পলিথিন পড়ে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে ৮ লাখ ২১ হাজার ২৫০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর মাত্র ৪০ শতাংশ, অর্থাৎ ২ লাখ ২৮ হাজার টনের মতো রিসাইকেল বা পুনর্ব্যবহার হয়। ঢাকার বাহিরে সারা দেশে দিনে উৎপাদিত বর্জ্যের পরিমাণ ২ হাজার ২৫০ টন। ২০০৫ সালে দেশে মাথাপিছু প্লাস্টিকের ব্যবহার ৩ কেজি থাকলেও বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ কেজিতে। দেশে উৎপাদিত প্লাস্টিক বর্জ্যের ৬০ শতাংশই রাস্তাঘাট ও নদীতে যাচ্ছে। মাছ ও বিভিন্ন প্রাণীর শরীরে ঢুকে সেগুলো মানুষের জীবনচক্র ও শরীরে প্রবেশ করছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘আইন শক্তিশালী হলেই শতভাগ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে’

দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে ইউক্রেনকে বাধা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

ইসিতে ধাক্কাধাক্কি-হাতাহাতি, ক্ষোভ ঝাড়লেন রুমিন ফারহানা 

গণফ্রন্টের কার্যকরী চেয়ারম্যান হয়েছেন অ্যাডভোকেট আজমল হোসেন

ক্যাম্পাসে এখনো প্রান্তিক অবস্থায় ছাত্রদল, অভিযোগ আবিদের

১২ মাসের জন্য ছিটকে গেলেন সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে গতিময় পেসার

তরুণ ব্যবসায়ীর লাশ নিয়ে বিক্ষোভ

আমরা চাই টাকা-পয়সার ব্যাপারে সমাধান হোক : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

বাম চোখ লাফালে কী হয়? যা বলছেন বিশেষজ্ঞ আলেম

গ্র্যান্ড স্ল্যামে প্রাইজ মানি বাড়ানোর আহ্বান জোকোভিচের

১০

সবজির চড়া দামে বিপাকে সাধারণ মানুষ

১১

গোবিন্দকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন রাভিনা ট্যান্ডন, দাবি সুনীতার

১২

হঠাৎ মোবাইলের ডায়াল প্যাড পরিবর্তন হলে যা করবেন

১৩

পাকিস্তানের বন্যায় নিহত ছাড়াল ৪০০

১৪

ছদ্মবেশে ছিনতাইচেষ্টা, হাতেনাতে আটক ৩ নারী

১৫

মোহাম্মদপুরের সেই বিতর্কিত ওসিসহ ৩ পুলিশ কর্মকর্তাকে বদলি 

১৬

২২৯ বল বাকি থাকতে ছেলেদের কাছে জ্যোতিদের হার

১৭

ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে প্রকাশ্যে ব্যবসায়ীর টাকা-মোবাইল ছিনতাই

১৮

কবর জিয়ারত করলে বা সালাম দিলে মৃত ব্যক্তি কি টের পান

১৯

আসন অপরিবর্তিত রাখার দাবিতে যশোরে নির্বাচন অফিস ঘেরাও

২০
X