দেশের দৃষ্টিনন্দন মসজিদগুলোর অন্যতম নরসিংদীর বেলাব উপজেলার বেলাব বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ। প্রায় তিনশ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এই মসজিদ পুনর্নির্মাণের পর এর গম্বুজ সংখ্যা বর্তমানে একটি হলেও প্রতিষ্ঠালগ্নে এতে সাতটি গম্বুজ ছিল বলে জানা যায়। জনশ্রুতি আছে, এই মসজিদের ভেতরে প্রতিষ্ঠালগ্নের সময়ে অলৌকিকভাবে বা গায়েবিভাবে কোরআন তিলাওয়াত শোনা যেত। এ কারণে মসজিদটি ‘ফজিলতের মসজিদ’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
স্থানীয়রা জানান, এই মসজিদে জুমার নামাজে অনেক মুসল্লির সমাগম হতো, যা মসজিদের ধারণক্ষমতার বাইরে চলে যেত। এ কারণে বড় পরিসরে মসজিদের অবকাঠামো উন্নয়নের সিদ্ধান্ত হয়। ২০০৬-২০০৮ সালের মধ্যে নরসিংদী জেলার শিল্পপতি থার্মেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ আব্দুল কাদির মোল্লা নিজ অর্থায়নে মসজিদের বর্তমান অবকাঠামো নির্মাণ করেন। বর্তমানে মসজিদটিতে মুসল্লি ধারণক্ষমতা আট হাজার হলেও জুমার নামাজে প্রায় ২০-২২ হাজার মুসল্লির সমাগম ঘটে বলে জানা যায়।
স্থানীয়রা জানান, বেলাব উপজেলার বাহিরে ও পার্শ্ববর্তী কিশোরগঞ্জ জেলা ও ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এই মসজিদে জুমার নামাজে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করতে আসেন। বর্তমান কাঠামোতে মসজিদটির ধারণক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি এর নির্মাণশৈলী সবাইকে মুগ্ধ করে। তিনতলা বিশিষ্ট মসজিদ ভবনের ভেতরটা সাজানো হয়েছে ঝাড়বাতি দিয়ে। মসজিদের প্রবেশপথের পাশেই রয়েছে সুউচ্চ একটি মিনার, তার ওপর গম্বুজ। মসজিদের পশ্চিম পাশে রয়েছে একটি পুকুর, যা মসজিদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। মসজিদটি বর্তমানে বেলাব উপজেলার একটি দর্শনীয় স্থানেও পরিণত হয়েছে।
মসজিদে নামাজ পড়তে আসা দিদার হোসেন পিন্টু বলেন, ‘বেলাব বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ একটি ফজিলতের মসজিদ। এই মসজিদ অনেক পুরোনো। শৈশব থেকে শুনে আসছি এই মসজিদে গায়েবি কোরআন তিলাওয়াত হতো। এটি ফজিলতের মসজিদ হিসেবে পরিচিত।’
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর থেকে নামাজ পড়তে আসা এক যুবক জানান, ‘আমরা প্রায় সময়ই এখানে নামাজ পড়তে আসি। মসজিদটি খুবই সুন্দর। এখানে অনেক মানুষ হয় নামাজে।’
সুনামগঞ্জ থেকে নামাজ পড়তে আসা এক মুসল্লি বলেন, ‘আমি প্রতি বছরই রমজানে এই মসজিদে এসে জুমার নামাজ আদায় করি। এখানে অনেক মুসল্লির সমাগম ঘটে।’
মসজিদের খতিব ড. মাওলানা খলিলুর রহমান খান আল আজহারী বলেন, ‘এই মসজিদের বয়স কমপক্ষে তিনশ বছর। আমার জানা মতে, ঈসা খাঁ যখন বাংলার শাসক ছিলেন, তার পরবর্তী অধস্তন পুরুষ যারা জমিদারি করেছেন, তাদের মধ্যে দেওয়ান আয়েশা খানম তিনি এখানে খাজনা আদায় করতে আসতেন। তিনি এখানে জনসাধারণের পানি পান করার জন্য কুয়া নির্মাণ করেছিলেন। তিনিই এই মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন।
তিনি বলেন, এ মসজিদ পুনর্নির্মাণের ফলে আগের চেয়ে এখানে মুসল্লির সংখ্যা আরও বেড়ে গেছে। সারা দেশের অনেক জায়গা থেকে মুসল্লিরা জুমার নামাজ পড়তে এখানে আসেন।
মন্তব্য করুন