এহসান আব্দুল্লাহ
প্রকাশ : ১৭ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৭ মে ২০২৫, ০৮:০৩ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

দেশে স্মার্টফোন-ইন্টারনেট ব্যবহারে পিছিয়ে নারীরা

বিশ্ব টেলিযোগাযোগ দিবস আজ
দেশে স্মার্টফোন-ইন্টারনেট ব্যবহারে পিছিয়ে নারীরা

বিশ্বব্যাপী ৭৮ শতাংশ পুরুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করলেও নারীদের মধ্যে এ হার ৬৬ শতাংশ। বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে পুরুষের হার ৪০ শতাংশ, নারীর হার ২৪ শতাংশ। এখানে লিঙ্গবৈষম্যের হার ১৬ শতাংশ। বাংলাদেশে মোবাইল ব্যবহারকারী পুরুষ ৪০ শতাংশ স্মার্টফোন ব্যবহার করলেও নারীর হার ২২ শতাংশ। গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশন অ্যাসোসিয়েশনের (জিএসএমএ) ২০২৫ সালের প্রতিবেদনে এ চিত্র দেখা যায়। এমন পরিস্থিতিতে ‘ডিজিটাল রূপান্তরে নারী-পুরুষ সমতায়ন’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজ পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস।

দিবসটি উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার বাণী দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এতে তিনি বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ডিজিটাল রূপান্তরের সব ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান সুযোগ ও অধিকার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। টেলিযোগাযোগ সেবা ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারসহ ডিজিটাল রূপান্তরে নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ বৈষম্যমুক্ত ও আধুনিক সমাজ বিনির্মাণের পূর্বশর্ত।’

জিএসএমএর প্রতিবেদনে বলা হয়, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোয় এখনো পুরুষের তুলনায় নারীর মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের হার ১৫ শতাংশ কম। বিশ্বব্যাপী নারী-পুরুষের এমন ডিজিটাল বৈষম্য কমিয়ে আনার লক্ষ্যেই চলতি বছর আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) ১৬০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বলা হয়, প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রতিটি ধাপে মানুষই হবে কেন্দ্রবিন্দু—নারী বা পুরুষ নয়। টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তির নীতিমালাগুলো এমন হতে হবে, যেখানে প্রান্তিক ও অবহেলিত জনগোষ্ঠীর জন্য ডিজিটাল পরিবেশ হবে নিরাপদ, সক্ষমতাবর্ধক এবং প্রণোদনামূলক।

বাংলাদেশে মোবাইলের মালিকানায় লিঙ্গবৈষম্যের হারও অনেক বেশি। প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশে ৮৫ শতাংশ পুরুষের মোবাইল ফোনের মালিকানা রয়েছে, বিপরীতে নারীদের হার ৬৮ শতাংশ। এখানে লিঙ্গবৈষম্যের হার ২০ শতাংশ।

দেশে ২১ শতাংশ নারী প্রতিদিন মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন। অন্যদিকে, পুরুষের মধ্যে প্রতিদিন মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের হার ৩৭ শতাংশ। স্মার্টফোনের মালিকানায়ও বাংলাদেশে লিঙ্গবৈষম্য অনেক প্রকট বলে জিএসএমএর প্রতিবেদেন উঠে আসে। দেখা যায়, দেশে স্মার্টফোনের মালিকানায় লিঙ্গবৈষম্য ৪৩ শতাংশ। বাংলাদেশে মোবাইল ব্যবহারকারী পুরুষের ৪০ শতাংশ স্মার্টফোন ব্যবহার করলেও নারীদের হার ২২ শতাংশ।

জিএসএমএর প্রতিবেদনে দেখা যায়, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোয় এখনো মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের বাইরে আছে ৭৮ কোটি ৫০ লাখ নারী। তাদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ নারীর বসবাস দক্ষিণ এশিয়া এবং সাব-সাহারান আফ্রিকায়। দক্ষিণ এশিয়ায় নারী-পুরুষের মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারে লিঙ্গবৈষম্যের হার ৩১ শতাংশ।

এবার আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ দিবস পালন উপলক্ষে অযাচিত ব্যয় সংকোচন করবে সরকার। দিবসের মূল অনুষ্ঠান হবে রাজধানীর বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) প্রধান কার্যালয়ে। এতে উদ্বোধনসহ দিবসটি সম্পর্কে আলোচনা হবে। পরবর্তী সময়ে টেলিযোগাযোগ খাতের সংশ্লিষ্ট রেগুলেটর, উদ্যোক্তা, একাডেমিয়া এবং বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে সেমিনারের আয়োজন করা হবে।

এ ছাড়া দিবসটি উপলক্ষে ডাক অধিদপ্তরের আয়োজনে ডাক টিকিট অবমুক্ত করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পাশাপাশি টেলিযোগাযোগ খাতের উদ্যোক্তা ও লাইসেন্সিদের সমন্বয়ে বিটিআরসি প্রাঙ্গণে মেলা হবে। দিবসটি সামনে রেখে এরই মধ্যে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির মাধ্যমে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে হ্যাকাথন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।

জানা যায়, টেলিযোগাযোগ দিবস উপলক্ষে এ খাতে দেশ-বিদেশে বিশেষ অবদানের জন্য যোগ্য ব্যক্তি/দলকে সম্মাননা দেওয়া হবে। এ ছাড়া জুলাই আন্দোলনে আহত বীরদের বিশেষ ডিভাইস সরবরাহ করা হবে।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব কালবেলাকে বলেন, ডিজিটাল দক্ষতা ও প্রযুক্তি খাতে নারীদের এগিয়ে নিতে সরকার ‘হার পাওয়ার’ প্রকল্প ফেস টু শুরু করতে যাচ্ছে। এখন থেকে যেসব নারী আইসিটি প্রশিক্ষণ নেবেন, তাদের সার্টিফিকেট দেওয়া হবে, যাতে তারা এটিকে কাজে লাগাতে পারেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ইনকিউবেশন সেন্টার ও আইসিটি প্রশিক্ষণে নারী-পুরুষ প্রশিক্ষণার্থীর হার ৫০-৫০-এ নিয়ে আসার চেষ্টা করছে সরকার।

তিনি জানান, এরই মধ্যে দেশের সব মোবাইল টাওয়ারকে ফাইবারাইজেশন করার কথা ভাবছে সরকার। পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলে ফাইবার নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে। যাতে প্রান্তিক মানুষ ডিজিটাল উদ্যোগের সুফল ভোগ করতে পারেন এবং ডিজিটালি ক্ষমতাবান হন।

১৮৬৫ সালের ১৭ মে ফ্রান্সের প্যারিসে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ) প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬৯ সালের ১৭ মে প্রথমবার ‘বিশ্ব টেলিযোগাযোগ দিবস’ পালিত হয়। ২০০৬ সালের ১৭ মে দিনটিকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ‘বিশ্ব তথ্য সংঘ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। একই বছরে দুটি দিবসকে একত্রিত করে ‘বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস’ হিসেবে উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নগরজুড়ে আতঙ্ক, চট্টগ্রামে ফের মাথাচাড়া দিচ্ছে অপরাধীরা

রাজশাহীতে জিয়া পরিষদের সভাপতি ড. নেছার উদ্দিন ও সম্পাদক সালাউদ্দিন

গাড়িতে মাথা ঘোরা-বমি ভাব? সাহায্য করবে আইফোনের এই গোপন ফিচার

এভারকেয়ার হাসপাতালে নিরাপত্তা জোরদার

আদালতে হাজির হলেন নেতানিয়াহু

জুলাই আন্দোলনে বাঁধা, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ জনকে শাস্তি

খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিলে মাসুদুজ্জামান

বেগম খালেদা জিয়া / গৃহিণী থেকে দেশনেত্রী এবং জাতির আত্মগৌরবের এক অনিবার্য প্রতীক

নভেম্বরে এলো ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেশি রেমিট্যান্স

খালেদা জিয়াকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ ঘোষণা

১০

রোটারি ক্লাব অব চিটাগাং এরিস্টোক্রেটের ব্যবসায়িক আইডিয়া প্রতিযোগিতা

১১

দেশে আবারও বাড়ল স্বর্ণের দাম

১২

টাঙ্গাইলে ‘প্রিন্ট মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশন’-এর আত্মপ্রকাশ, সভাপতি বুলবুল, সম্পাদক উজ্জ্বল

১৩

খালেদা জিয়া সংগ্রাম ও সাহসের প্রতীক : কাজী বাশার

১৪

চুপিসারে দ্বিতীয় বিয়ে সারলেন সামান্থা, পাত্র কে?

১৫

আরও ৭৭ উপজেলায় নতুন ইউএনও

১৬

টেকনাফে ৬ শিশুকে অপহরণ, কৌশলে পালাল দুজন

১৭

তরুণ ভোটারদের ভোটদানের আহ্বান আমিনুল হকের

১৮

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের যে সমাধান দিলেন পোপ লিও

১৯

কন্যাসন্তানের বাবা হলেন সংগীতশিল্পী ইমরান

২০
X