দীর্ঘ তিনদিনের আন্দোলন ও অবস্থান শেষে দাবি আদায়ের আশ্বাস পেয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছন্দে ফিরে এসেছে। শনিবার (১৭ মে) থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে ক্লাস, পরীক্ষা এবং একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, কিন্তু শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের তেমন উপস্থিতি ছিলো না ।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা বারবার শিক্ষা ও আবাসনসংক্রান্ত মৌলিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে অবকাঠামোগত সংকট, পর্যাপ্ত আবাসনের অভাব, বাজেট ঘাটতি এবং দ্বিতীয় ক্যাম্পাস স্থাপন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের হতাশা বাড়ছিল। এই প্রেক্ষাপটে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নতুনভাবে সোচ্চার হয়ে ওঠে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ মে (বুধবার) তিন দফা দাবি নিয়ে যমুনার সন্নিকটে কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নেয় জবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগে গঠিত আন্দোলনটি দ্রুতই ব্যাপকতা পায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দাবিকে কেন্দ্র করে শুরু হয় লাগাতার আন্দোলন ও অবস্থান কর্মসূচি। দাবিগুলো ছিল, শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন বৃত্তি চালু, বাজেট প্রস্তাবনায় পূর্ণ অর্থ বরাদ্দ, এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুল প্রত্যাশিত দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের প্রকল্প অনুমোদন। এসব দাবির পক্ষে শিক্ষার্থীরা শুধু ক্যাম্পাসে নয়, বরং কাকরাইল মোড়ের মতো জনবহুল এলাকায়ও অবস্থান নিয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
তিন দিনব্যাপী এই আন্দোলন শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, বরং দেশজুড়ে সাধারণ জনগণের মধ্যেও ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। পরিশেষে সরকারের পক্ষ থেকে দাবিগুলো বাস্তবায়নের আশ্বাস দেওয়া হলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করে এবং ক্লাসে ফেরার ঘোষণা দেয়। তবে আশ্বাসের বাস্তবায়ন নিয়ে এখনও রয়েছে অনেকের শঙ্কা।
বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি একে এম রাকিব বলেন, ক্যাম্পাসে ক্লাস বর্জনসহ শাটডাউন তুলে নেওয়া হয়েছে, আন্দোলন শেষে সবাই ঘরে ফিরেছি এখন যার যার পড়াশোনায় মনোযোগী হবে এই প্রত্যাশা রইল। এবারের আন্দোলনে দেশবাসী আমাদের পাশে ছিল। সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা। সরকার আমাদের দাবিগুলো মেনে নিয়েছে এবং আমরা আশা করি দ্রুত বাস্তবায়ন হবে। তবে এত বড় আন্দোলনের পরেও যদি গড়িমসি করা হয়, তাহলে এর চেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।
জবি ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, আমরা চাই সবসময় ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ বজায় থাকুক। কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণে শিক্ষাজীবন কিছুটা ব্যাহত হয়েছিল। এখন শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরেছে, আশা করি এমন পরিস্থিতি ভবিষ্যতে আর হবে না।
তিনি আরও বলেন, সরকার আমাদের তিন দফা দাবি মেনে নিয়েছে— এজন্য আমরা কৃতজ্ঞ। অতীতেও বহুবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু এবার আমরা আশাবাদী। আমরা বিশ্বাস করি, ড. ইউনুস স্যার একজন দায়িত্বশীল ও সম্মানিত ব্যক্তি, তিনি তার কথা রাখবেন।
তিনি পুলিশি আচরণ প্রসঙ্গে বলেন, আন্দোলনের সময় পুলিশের সন্ত্রাসী আচরণ আমরা তীব্রভাবে নিন্দা জানাই। আমরা দাবি জানাই, জড়িত পুলিশদের বিরুদ্ধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, দীর্ঘ আলোচনার পর বাজেট বৃদ্ধি, আবাসন বৃত্তি ও দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরেছে। তবে অতীতে বহুবার এমন আশ্বাস দেওয়া হলেও বাস্তবায়ন হয়নি। এবারও যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে, তাহলে আমরা সকল ছাত্রসংগঠন একত্রিত হয়ে ক্যাম্পাস শাটডাউনসহ আরও কঠোর আন্দোলনের ডাক দেব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, আন্দোলন সফল হয়েছে এবং শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুমে ফিরে এসেছে। প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। গত বিশ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব হয়নি, এখন তা বাস্তবায়িত হচ্ছে। বাজেটও অনেক বেড়েছে, এটি একটি মাইলফলক।
তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি না, এবারও আশ্বাসে সীমাবদ্ধ থাকবে সরকার। সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় ইউজিসির চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ আমাদের সঙ্গে ছিলেন। এরপরও যদি বাস্তবায়ন না হয়, তবে তা অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত হবে।
এদিকে আন্দোলনে আহত তিনজন সাংবাদিকসহ ছয়জন শিক্ষার্থী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শনিবার বিকেল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তাদের দেখতে হাসপাতালে যান এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
মন্তব্য করুন