২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা খাতে ৯৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ এবং প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে সর্বমোট ৯৫ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। খাতওয়ারি হিসেবে শিক্ষায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বাজেট বরাদ্দ পেল। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৪ হাজার ৩৫১ কোটি বাড়লেও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ কমেছে ৩ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ। তবে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য বন্ধ হওয়া স্কুল ফিডিং ফের চালু করতে ২ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে সুখবর থাকছে। মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষকদের বোনাস বাড়বে। গ্র্যাচুইটি প্রদান, স্কুলে ভবন নির্মাণ, উপবৃত্তির পরিধি ও পরিমাণ বাড়ার কারণে বরাদ্দ বাড়ছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে বই ছাপার জন্য ১৬০০ কোটি বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
গতকাল অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত বাজেট বক্তৃতায় জানান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য বরাদ্দ ৪৪ হাজার ১০৮ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৭ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা করা হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৩ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা বেশি। উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী ও বিশ্বমানে উন্নীতকরণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আউটকাম বেজড এডুকেশন পদ্ধতিতে কারিকুলাম হালনাগাদ করা হয়েছে। এ ছাড়া এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বোনাস বৃদ্ধি, গ্র্যাচুইটি প্রদানসহ সব স্তরের শিক্ষকদের মানবসম্পদ উন্নয়নে কার্যক্রম হাতে নেওয়া হচ্ছে। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ১১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা করা হয়েছে। এখানে বেড়েছে ৮৯৫ কোটি টাকা। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এ খাতে বাজেট বেড়েছে বলে একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। অন্যদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ ৩৮ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ৩৫ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা করা হয়েছে। এ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ কমেছে ৩ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা। বাজেট কম হওয়ায় প্রাথমিক শিক্ষায় আর্থিক টানাপোড়েন সৃষ্টি এবং শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধিতে চ্যালেঞ্জ দেখা দিতে পারে বলে শঙ্কা করা হচ্ছে। দেশের সাড়ে ৬৫ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফিডিং কর্মসূচির জন্য ২ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা শিগগির প্রাথমিকের শতভাগ শিশু শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে গিয়ে খাবার পেতে সাহায্য করবে।
এদিকে বাজেটে বলপয়েন্ট কলমের ওপর আরোপিত সব ভ্যাট ও শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করায় দেশে উৎপাদিত সব ধরনের বলপয়েন্ট কলমের দাম কমবে, যা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য একটি সুখবর। শিক্ষা খাতে সামগ্রিক বরাদ্দ বৃদ্ধিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হলেও, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমানো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্ট অনেকে। তাদের মতে, প্রাথমিক শিক্ষা দেশের ভিত্তিমূল এবং এখানে বরাদ্দ কমানো দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে, মাধ্যমিক, উচ্চশিক্ষা এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষায় বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং বলপয়েন্ট কলমের ওপর থেকে ভ্যাট-শুল্ক প্রত্যাহারকে স্বাগত জানানো হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যের বই সরবরাহ করতে ১ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বোনাস বৃদ্ধি এবং গ্র্যাচুইটি প্রদান করতে বরাদ্দ বাড়বে। বৈষম্যের শিকার ইবতেদায়ী পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি প্রদান এবং মাদ্রাসাকে এমপিওভুক্তির জন্য ৭২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন