তাইজুল ইসলামের বলে বাংলাদেশের ফিল্ডারদের জোরালো আবেদন। কোনো সাড়াই দিলেন না আম্পায়ার। রিভিউ নেওয়ার জন্য অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে খানিকটা জোর করলেন তাইজুলরা। শেষ মুহূর্তে এসে রিভিউ নিলেন শান্তও। কিন্তু বল আর ব্যাটের মধ্যে কোনো সংযোগ ছিল না—বেঁচে গেলেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। জায়ান্ট স্ক্রিনে সে ছবি ভেসে উঠতেই ম্যাচ ড্রয়ের ইশারা করলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তখনো দিনের ৫ ওভার বাকি। তবে ৪ উইকেট হারানো লঙ্কানরা প্রাণপণে ম্যাচ ড্রয়ের লড়াইয়েই মনোযোগী ছিল। নাজমুলের দেওয়া সিগন্যালেই শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ফল ড্র হয়ে যায়। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন সাইকেলের শুরুটা ড্রতেই হলো। পাঁচ দিনের লড়াইয়ে বাংলাদেশের প্রাপ্তি ছিল অনেক।
এ ম্যাচের ফলের সঙ্গে গলও দেখল নতুন কিছু। বাংলাদেশ দিয়ে শেষ আবার বাংলাদেশ দিয়েই হলো শুরু। এরই মধ্যে কেটে গেল এক যুগ। ১২ বছর কিংবা ২৬ ম্যাচ পর এবার ড্রয়ের দেখা মিলল ভারত মহাসাগরের পাড়ের ভেন্যুটিতে। সর্বশেষ ২০১৩ সালে এই ভেন্যুতে ড্র দেখেছিল বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার মধ্যকার ম্যাচ। সেবার ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। আর এবার জোড়া সেঞ্চুরির দেখা পেলেন নাজমুল হোসেন। শুরুটা ড্রয়ে হওয়ায় মোটামুটি স্বস্তি আছে বাংলাদেশের। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সর্বশেষ সাইকেলে ৪ টেস্ট জেতা বাংলাদেশ এবার ড্রয়ে শুরু করল।
গল টেস্টের শুরু থেকেই ইতিবাচক ছিল বাংলাদেশের ব্যাটিং ও বোলিং বিভাগ। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের হয়ে জোড়া সেঞ্চুরি হাঁকান অধিনায়ক নাজমুল ও অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম। দুজনই খারাপ সময় পেরিয়ে ছন্দের ছাপ রেখেছিলেন সুদূর গলে। নাজমুলের ১৪৮ কিংবা মুশফিকের ১৬৪—বাংলাদেশকে দিয়েছিল ৪৯৫ রানের চ্যালেঞ্জিং পুঁজি। রানপ্রসবা উইকেটে বোলিংয়ে বাংলাদেশ খুব একটা পিছিয়ে ছিল না। প্রতিপক্ষের বড় কিছু জুটি ভাঙা থেকে শুরু করে দলকে ভালো কিছু ব্রেক থ্রু এনে দেন নাঈম হাসান। মেহেদী হাসান মিরাজ অসুস্থ থাকায় একাদশে সুযোগ মিলেছিল নাঈমের। সামর্থ্যের ছাপ ঠিকঠাকই রেখেছিলেন তিনি। ফাইফার নিয়ে প্রতিপক্ষকে লিড থেকে বিরত রাখতে পেরেছিলেন বাংলাদেশের এই অফস্পিনার।
১০ রানে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ভালো শুরু পায় ওপেনার সাদমান ইসলামের ব্যাটে। ৭৬ রান করে থামেন এই ওপেনার। এরপর মুশফিকের সঙ্গে আবারও জুটির হাইলাইটস দেখালেন অধিনায়ক নাজমুল। পঞ্চম দিন বৃষ্টিতে সেশন পণ্ড হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে ৪৯ রান করা মুশফিক ফেরেন রানআউটের শিকার হয়ে। তবে নাজমুল ছিলেন ঠাঁই দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে রেকর্ড বইয়ে নাম লেখালেন তিনি। দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে একই টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরি কিংবা প্রথম বাংলাদেশি অধিনায়ক হিসেবে এমন কীর্তি। নাজমুলের সেঞ্চুরির পর আরও কিছু সময় ব্যাটিং করে বাংলাদেশ। এতে প্রতিপক্ষের সামনে লিড দাঁড়ায় ২৯৫ রানের। লঙ্কানদের জন্য এক সেশনে এটা যে সহজ ছিল না, তা মোটামুটি পরিষ্কার ছিল। তার পরও শুরু থেকে বাংলাদেশের বোলারদের ওপর তোপ ঝেড়ে ব্যাট করেছিলেন পাথুম নিশাঙ্কারা। পরপর উইকেট হারানোর পর ম্যাচ ড্রয়ের জন্যই লড়াই করে যায় তারা। শেষ পর্যন্ত ড্রতেই হলো সমাপ্তি।
মন্তব্য করুন