রাশেদ রাব্বি
প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৭:৫২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ওষুধের জেনেরিক নাম ব্যবহারে প্রতারিত হবে রোগী, বাড়বে স্বাস্থ্যঝুঁকি

জনস্বাস্থ্য
ওষুধের জেনেরিক নাম ব্যবহারে প্রতারিত হবে রোগী, বাড়বে স্বাস্থ্যঝুঁকি

রোগীর ব্যবস্থাপত্রে ওষুধের মৌল নাম বা জেনেরিক নাম ব্যবহার করতে হবে—এমন একটি প্রস্তাবনা আছে। তবে সে প্রস্তাবনা কতটা বাস্তবসম্মত, সেটা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিপুলসংখ্যক রোগী চিকিৎসা-সংক্রান্ত বিষয়ে ওষুধের দোকানের ওপর নির্ভরশীল। এ ছাড়া দেশের ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বড় একটি অংশ উত্তম ওষুধ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত নয়। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবস্থাপত্রে ওষুধের জেনেরিক নাম ব্যবহার করা হলে দোকানিরা গুণগত মানসম্পন্ন ওষুধের পরিবর্তে অধিক মুনাফার আশায় মানহীন ওষুধ বিক্রিতে ঝুঁকবে। এতে রোগীরা প্রতারিত হবেন এবং রোগের বিস্তার বাড়বে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছেন, জেনেরিক নাম লিখলে ক্রেতা তার ইচ্ছামতো ওষুধটি বেছে নিতে পারে। কিন্তু যখনই জেনেরিক নাম লেখা হবে তখন একজন রোগীকে ওষুধ দেওয়ার সিদ্ধান্ত অভিজ্ঞ চিকিৎসকের হাত থেকে একজন ওষুধের দোকানির হাতে চলে যাবে। কারণ বাংলাদেশের ক্রেতারা ওষুধ যাচাই করে কেনার মতো সচেতন নয়। ফলে এতে করে খুবই বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি হবে। রোগীরা মানসম্পন্ন ওষুধ থেকে বঞ্চিত হবে। ওষুধ বেচাবিক্রি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়বে। কেমিস্ট তথা ড্রাগ ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের আশায় সুকৌশলে মানহীন ওষুধ ধরিয়ে দেবে রোগীদের হাতে। এ ছাড়া সারা দেশে তৈরি হাবে নকল ও ভেজাল ওষুধ কেনাবেচার সিন্ডিকেট। এতে ওষুধের বাজার চলে যাবে নকল ও ভোজার কারবারিদের নিয়ন্ত্রণে। সর্বশেষে চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতার ওপর নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হবে।

সম্প্রতি স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের অন্যতম সুপারিশ ব্যবস্থাপত্রে চিকিৎসক যেন ওষুধের জেনেরিক নাম লেখেন। কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে ব্যবস্থাপত্রে ২৫ শতাংশ ওষুধ জেনেরিক নামে লিখতে হবে। পাঁচ বছরের মধ্যে ব্যবস্থাপত্রে শতভাগ ওষুধের জেনেরিক নাম লেখা নিশ্চিত করতে হবে।

এ বিষয়ে ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব ডা. জাকির হোসেন বলেন, বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যালস শিল্প উচ্চমানের ব্র্যান্ডেড ওষুধ উৎপাদনে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। দেশে উৎপাদিত ব্র্যান্ডেড ওষুধের নামের সঙ্গে রোগীরা পরিচিত। জেনেরিক নাম ব্যবহারে রোগীরা চিকিৎসার সময় বিভ্রান্তিতে পড়বে, যা সঠিক ওষুধ গ্রহণে ব্যাঘাত ঘটাবে। ‘জেনেরিক নাম’ ব্যবহারে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হলে ওষুধ উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ব্র্যান্ডের মান উন্নয়নে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের বেশিরভাগ ফার্মেসি সাধারণ লোক দ্বারা পরিচালিত, যাদের স্বাস্থ্যসেবা এবং ওষুধ সম্পর্কে সামান্য জ্ঞান রয়েছে। ফলে তারা রোগীদের নিম্নমানের কোম্পানির ওষুধ কিনতে প্রভাবিত করতে পারে, যা রোগীদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির বড় কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলেছেন, ইউরোপ-আমেরিকার মতো কিছু উন্নত দেশে ওষুধের জেনেরিক নাম ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সেখানে সব কোম্পানির ওষুধের মান একইভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। তা ছাড়া আমাদের দেশের ওষুধের দোকানগুলোয় নিবন্ধিত স্নাতক ফার্মাসিস্ট নেই। আমরাও মনে করি, আমাদের দেশের প্রতিটি ফার্মেসিতে ফার্ম-ডি করা ফার্মাসিস্ট প্রয়োজন। একই সঙ্গে সব ধরনের ওষুধের কোয়ালিটি একই হতে হবে। যেহেতু আমাদের দেশে এ ধরনের প্রস্তুতি নেই, সেহেতু এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে খুবই বিপদজ্জনক।

এ প্রসঙ্গে ওষুধ প্রযুক্তিবিদ অধ্যাপক মুনির উদ্দিন আহমেদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেছেন, জেনেরিক নাম লিখলে দোকানদারদের হাতে সোনার হরিণ তুলে দেওয়ার মতো অবস্থা হবে। তারা তখন নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ ক্রেতার কাছে বিক্রি করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করার সুযোগ পাবে। জনগণের জন্য উন্নত ও মানসম্মত ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিতকরণে বিরাট বাধা তৈরি হবে। দেখা যাবে ডাক্তার ওষুধ লিখেছেন একরকম, আর ওষুধ খেয়ে কাজ হচ্ছে আরেকরকম। সবমিলিয়ে চিকিৎসা খাতে এক অচিন্তনীয় ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হবে।

স্বাস্থ্য প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তা ও জনস্বাস্থ্যবিদ বজলুর রহমান বলেন, সারা দেশের গ্রামগঞ্জে হাজার হাজার ওষুধের দোকান রয়েছে। যেসব দোকানে কোন ফার্মাসিস্ট তো দূরের কথা উচ্চমাধ্যমিক পাস দোকানি নেই। তাদের পক্ষে জেনেরিক নাম বুঝে ওষুধ বিক্রি সম্ভব নয়।

প্রসঙ্গত, গত ৫ মে সোমবার স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন তাদের প্রস্তাবনা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেয়। সেখানে রোগীর ব্যবস্থাপত্রে ওষুধের জেনেরিক নাম ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে সুপারিশ করা হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিশ্বকাপ দেখার স্বপ্ন? টিকিট কবে থেকে মিলবে জানাল ফিফা

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন শাকিবের প্রযোজক 

কুষ্টিয়ায় পৃথক অভিযানে অস্ত্র-গুলিসহ আটক ২

চসিকে বাজেট বাস্তবায়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা

মারা গেলেন অভিনেতা রবি তেজার বাবা

নতুন ব্যবস্থাপনায় বদলে গেছে কেরু

সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর ৮ দিনের রিমান্ডে 

তিন মাসের জন্য মাঠের বাইরে রিয়াল তারকা

বাংলাদেশে পা রাখল পাকিস্তান দল

মার্কিন এজেন্ট অপহরণের অভিযোগ, ৩ ইরানি কর্মকর্তাকে খুঁজছে এফবিআই

১০

বিলীন হচ্ছে বর্ষার কদম ফুল

১১

বাংলাদেশ দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবছেন সাকিব

১২

এবার গোপালগঞ্জে ইউএনওর গাড়িতে হামলা-ভাঙচুর

১৩

ইসির ওয়েবসাইট থেকে সরানো হলো ‘নৌকা’ প্রতীক

১৪

আবু সাঈদের কবরে শ্রদ্ধা

১৫

লিঙ্গসাম্যের জন্যই মূর্খ তৈরি হচ্ছে: কঙ্গনা রানাউত

১৬

আজ দেশে কত দামে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে

১৭

বৃষ্টিতে শিশুর যত্নে সহজ কিছু পরামর্শ

১৮

১৬ জুলাই / আবু সাঈদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে ক্ষোভের বিস্ফোরণ

১৯

মহেশপুর সীমান্তে ৭ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর বিএসএফের

২০
X