

দেশের সংকট উত্তরণে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতারা। বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে তারা বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব বাড়তে দেয়া সমীচীন হবে না। বৃহস্পতিবার (০৪ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে ‘বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচন ও গণতন্ত্রের সংগ্রাম’- শীর্ষক আলোচনা সভায় মঞ্চের নেতারা এসব কথা বলেন। সভার শুরুতেই বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনা করা হয় এবং এ জন্য দেশের মানুষের কাছে দোয়া প্রার্থনা করা হয়। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন- নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু। মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে যে জাতীয় নির্বাচন হবে, তাতে কারো সন্দেহ নেই। এই নির্বাচনে আমরা বিএনপির সাথে যুগপৎ ধারায় আসন সমঝোতা করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো। যদিও বিএনপির সাথে এখনো আমাদের এই ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো আলোচনা হয়নি। তবে আসন সমঝোতা নিয়ে বিএনপির চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পর আমরা মঞ্চগতভাবে সিদ্ধান্ত নিব যে- নির্বাচন তাদের সাথে করবো, নাকি আমরা মঞ্চগতভাবে করবো। তবে আমাদের তিনশ আসনে নির্বাচন করার প্রার্থী প্রস্তুত করা আছে। এ সময়ে তিনি মঞ্চের সাথে কোনো রকম আলোচনা ছাড়াই বিএনপির এককভাবে প্রার্থী ঘোষণা করার সমালোচনা করেন। একটি বিশেষ দল ও গোষ্ঠী নির্বাচনকে প্রলম্বিত-বানচাল করতে নানামুখী তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ করেছেন সাইফুল হক। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা না করে বেশিরভাগ দলের মতামত উপেক্ষা করে আরপিও সংশোধন করে গেজেট প্রকাশ করেছে। এটা বিশেষ কোনো দলকে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার জন্যই করা হয়েছে কিনা, সেই প্রশ্ন উঠেছে । সরকারও এখনো পর্যন্ত নিরপেক্ষতার প্রমাণ দিতে পারেনি। তিনি আরও বলেন, সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটা বোঝাপড়া থাকা দরকার। তা না হলে আগামী নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আগামী নির্বাচন যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তাহলে দেশ ও দেশের রাজনীতিতে নতুন সংকট তৈরি হবে। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেন, জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য দল যখন তাদের বন্ধু ও মিত্র বাড়াতে খুলনার কৃষ্ণ নন্দী পর্যন্ত চলে গেছে, বিএনপি তখন তার যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রদের সাথে অপ্রয়োজনীয় মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব তৈরি করছে। এভাবে চলতে থাকলে এই মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব একসময়ে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে রাজনৈতিক দূরত্বে পর্যবসিত হতে পারে, এটা সমীচীন হবে না। জোনায়েদ সাকি বলেন, দেশের এই পরিস্থিতিতে দ্রুত একটা অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়া সমাধান হবে না। নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকার ও নির্বাচন কমিশনের। বিএনপির সাথে আমাদের আসন সমঝোতা যাই হোক- আমাদের নিজেদের মতো করে, নিজেদের শক্তির উপর দাঁড়িয়েই নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। আমরা আমাদের তিনশ আসনের প্রার্থী ঘোষণা করবো। শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে জামায়াতে ইসলামী ব্যাপক অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের বাংলাদেশকে রাজাকারের বাংলাদেশ বানাতে চায়। গণতন্ত্র মঞ্চ এবং মুক্তিযোদ্ধারা বেঁচে থাকতে তাদের এই অপতৎপরতা, স্বাধীনতাবিরোধী ও দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড কখনো বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না। সভাপতির বক্তব্যে শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর দেশ এখন একটি দক্ষিণপন্থি এবং নতুন করে নব্য লুটপাটকারিদের দখলে চলে গেছে। তারা দেশে স্থিতিশীলতা চায় না, নির্বাচন চায় না। বিএনপিও গণতন্ত্র মঞ্চের সাথে যুগপতের শরিক হিসেবে অভ্যুত্থানের পূর্বের অবস্থান থেকে সরে যাচ্ছে কিনা, সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে । তিনি যে কোনো পরিস্থিতি গণতন্ত্র মঞ্চকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করার আহ্বান জানান। জেএসডির সহ-দপ্তর সম্পাদক ফারহান হাবীবের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন- নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খান, ভাসানী জনশক্তি পার্টির মহাসচিব আবু ইউসুফ সেলিম, জেএসডির সহ-সভাপতি তৌহিদ হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূইয়া।
মন্তব্য করুন