রাশেদ রাব্বি
প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০২৫, ০৮:০৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

১০ বছরের চেষ্টায় পদ সৃষ্টি ৭ বছরেও হয়নি নিয়োগ

সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পদার্থবিদ পদ
১০ বছরের চেষ্টায় পদ সৃষ্টি ৭ বছরেও হয়নি নিয়োগ

মন্ত্রণালয়ের এক রুম থেকে আরেক রুমে, এক দপ্তর থেকে আরেক দপ্তর—এভাবে এক দশক কাটানোর পর মিলেছে ১২টি চিকিৎসা পদার্থবিদ (মেডিকেল ফিজিসিস্ট) পদ। ২০১৮ সালে পদ সৃজন হলেও গত ৭ বছরে এসব পদে কোনো নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর মূল্যবান চিকিৎসাযন্ত্রগুলো সঠিক ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অব্যবহৃত বা স্বল্প ব্যবহারে নষ্ট হচ্ছে, যার ফলে প্রকৃত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।

জানা গেছে, ২০০৯ সালে বাংলাদেশ মেডিকেল ফিজিসিস্ট সোসাইটি (বিএমপিএস) গঠনের পর থেকে দেশের সব সরকারি হাসপাতালে পদ সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয় সংগঠনটি। টানা দশ বছর চেষ্টার পর ২০১৮ সালে দেশের চারটি হাসপাতালে ১২টি পদের অনুমোদন দেয় মন্ত্রণালয়। কিন্তু তারপর কেটে গেছে আরও ৭ বছর, এখনো এসব পদের বিপরীতে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

চলতি বছরের ২১ মে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন-১ শাখা জরুরি ভিত্তিতে মেডিকেল ফিজিসিস্ট নিয়োগে একটি চিঠি দিয়েছে। জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষকে দেওয়া এই চিঠিতে ক্যান্সার চিকিৎসায় রেডিওথেরাপি বিভাগে জরুরি মেডিকেল ফিজিসিস্ট নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে একটি চিঠি দেন। সেখানে তিনি মেডিকেল ফিজিসিস্ট নিয়োগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানান।

চিঠিতে উল্লেখ করেন, মেডিকেল ফিজিসিস্ট রেডিওথেরাপি চিকিৎসার অবিচ্ছেদ্য জনবল। রেডিয়েশন থেরাপি এক ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি, যা বেশিরভাগ ক্যান্সার চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ। এটি ক্যান্সারের কোষগুলোকে ধ্বংস করতে তীব্র এবং উচ্চশক্তি সম্পন্ন রশ্মি ব্যবহার করে। রেডিয়েশন থেরাপির আসল উদ্দেশ্য যতটা সম্ভব স্বাভাবিক, স্বাস্থ্যকর কোষগুলোর ক্ষতি না করে ক্যান্সার কোষগুলো নির্মূল করা। নির্দিষ্ট মাত্রার অতিরিক্ত ডোজ সুস্থ কোষগুলোয় পুনরায় ক্যান্সার সৃষ্টিসহ মৃত্যুঝুঁকি তৈরি করে। তাই এ চিকিৎসা পদ্ধতিতে যথাযথ মাননিয়ন্ত্রণ ও উচ্চতর দক্ষতা প্রয়োজন। এ কাজ সম্পন্ন করতে এবং রেডিয়েশন যন্ত্রগুলোর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব মেডিকেল ফিজিসিস্টদের।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মেডিকেল ফিজিসিস্ট সোসাইটির (বিএমপিএস) সভাপতি অধ্যাপক ড. হাসিন অনুপমা আজহারী বলেন, দেশে প্রতি বছর বিপুল অর্থে চিকিৎসা যন্ত্রপাতি কেনা হলেও রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা ও সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ দেশের কোনো হাসপাতালেই মেডিকেল ফিজিসিস্ট (চিকিৎসা পদার্থবিদ) নিয়োগ করা হয়নি। শুধু মেডিকেল ফিজিসিস্ট নিয়োগ করে কোটি কোটি টাকা মূল্যের যন্ত্রগুলোর সঠিক ব্যবহার, রক্ষণাবেক্ষণ এবং রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব। তাই আমি মনে করি, দেরি না করে দেশের স্বার্থে দ্রুত সৃষ্টপদে মেডিকেল ফিজিসিস্ট নিয়োগ প্রদান জরুরি।

জনস্বাস্থ্যবিদরা মনে করেন, দেশের মানসম্পন্ন বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসা পদার্থবিদ নিয়োগ দেওয়ার কারণে বিকিরণ যন্ত্রগুলো বছরের পর বছর সঠিকভাবে সেবা দিয়ে থাকে। অন্যদিকে সরকারি হাসপাতালে এ ধরনের জনবল না থাকায় দামি দামি যন্ত্রগুলোর সঠিক ব্যবহার হয় না, এমনকি অল্পদিনেই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

নিয়োগ না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, মেডিকেল ফিজিসিস্ট পদে নিয়োগের বিষয়ে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালকের কাছে একটা চেকলিস্ট চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটি পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, মেডিকেল ফিজিসিস্ট বা চিকিৎসা পদার্থবিদ হলেন একজন স্বাস্থ্য পেশাদার, যিনি চিকিৎসা ক্ষেত্রে পদার্থবিদ্যার জ্ঞান ও কৌশল প্রয়োগ করেন। তাদের প্রধান কাজ রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসায় সঠিক ও নিরাপদভাবে বিকিরণ ব্যবহার করা। এ ছাড়া চিকিৎসা সরঞ্জাম তৈরি, রক্ষণাবেক্ষণ ও মান নিয়ন্ত্রণ করা তাদের দায়িত্ব। মেডিকেল ফিজিসিস্টদের প্রধান কাজগুলো হলো- ১. চিকিৎসা পরিকল্পনা: রেডিয়েশন থেরাপি এবং নিউক্লিয়ার মেডিসিনসহ বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতির জন্য সঠিক ডোজ নির্ধারণ ও পরিকল্পনা করা। ২. রোগ নির্ণয়: ইমেজিং টেকনোলজি যেমন এক্স-রে, এমআরআই, সিটি স্ক্যান ইত্যাদি থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে রোগ নির্ণয়ে সহায়তা করা। ৩. চিকিৎসা সরঞ্জাম তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণ: নতুন চিকিৎসা সরঞ্জাম তৈরি এবং বিদ্যমান সরঞ্জামগুলোর সঠিক কার্যকারিতা নিশ্চিত করা, যেমন রেডিয়েশন থেরাপির জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি। ৪. মান নিয়ন্ত্রণ: চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং পদ্ধতির গুণগত মান বজায় রাখতে নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা। ৫. সুরক্ষা ও প্রোটোকল: রেডিয়েশন সুরক্ষা প্রোটোকল তৈরি ও বাস্তবায়ন করা, যাতে রোগী এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা নিরাপদ থাকে। ৬. গবেষণা ও উন্নয়ন: চিকিৎসা ক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তি ও পদ্ধতি উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা করা। ৭. প্রশিক্ষণ: অন্য স্বাস্থ্যকর্মী যেমন টেকনিশিয়ান ও ডাক্তারদের চিকিৎসা পদার্থবিদ্যায় প্রশিক্ষণ প্রদান।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সিলেটে পানির জন্য হাহাকার, সড়ক অবরোধ

অপারেশনের পর জ্ঞান না ফেরায় রোগীর মৃত্যু

শাহপরাণ (রহ.)-এর মাজারে ওরস বৃহস্পতিবার

অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য পুলিশ ‘ক্ষমা’ চাইবে, জানালেন ফাওজুল কবির

নদীভাঙন এলাকা পরিদর্শনে গেলেন উপদেষ্টা শারমিন মোরশেদ

বাবরকে নিয়ে মন্তব্য করায় হারিসকে লাঠি দিয়ে মারতে চান সাবেক পাক ক্রিকেটার

নির্বাচন পেছালে উগ্রবাদের উত্থান ঘটতে পারে : রিজভী

বৃষ্টিপাত-তাপমাত্রা কমবে না বাড়বে, জানাল আবহাওয়া অফিস

ইবি শিক্ষার্থী সাজিদের খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ

রিজার্ভ ফের ৩১ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল

১০

রাতের বেলা গায়েবি নোটিশ আসে : সাদিক কায়েম

১১

ইসলামী ব্যাংকে আলোচিত ‘বিশেষ দক্ষতা মূল্যায়ন’ অবশেষে স্থগিত

১২

মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম কমিটির নামে সভা-সমাবেশ নয় : মুক্তিযোদ্ধা দল 

১৩

জামালপুরে শহীদ ও আহতদের পরিবারের পাশে তারেক রহমান

১৪

বুয়েট শিক্ষার্থীদের রক্তাক্ত করার সাহস প্রশাসন কোথায় পায় : সারজিস

১৫

ইসরায়েলের সঙ্গে নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরান

১৬

‘সিজি বেশি থাকলেই উড়তে হয় না জেসমিন’—ফেসবুকে ভাইরাল সংলাপ

১৭

কাজী নজরুলকে নিয়ে সত্যিকারের গবেষণা হয় না : দুদু

১৮

৪ বছর পর শপথ নিলেন ইউপি চেয়ারম্যান 

১৯

সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলোয়ার বাড়াতে চান? ব্যবহার করুন এই ১০টি হ্যাশট্যাগ

২০
X