বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৪ আশ্বিন ১৪৩২
কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৩১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

গাজায় শান্তি ফেরাতে কায়রোয় বসছে সব পক্ষ, যুদ্ধ কি থামছে

হামাস রাজি হলেই যুদ্ধবিরতি ইসরায়েল চালাচ্ছে হত্যা
ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের গাজায় শান্তি ফেরাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া শান্তি প্রস্তাব হামাস আংশিকভাবে মেনে নেওয়ার পর ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইসরায়েলও প্রাথমিকভাবে সেনা প্রত্যাহারে রাজি হয়েছে। এতে দুই বছর ধরে গাজায় চলা যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে নতুন করে আশা জেগেছে। আন্তর্জাতিক মহল এ অগ্রগতিকে স্বাগত জানিয়ে বলছে, এর মধ্য দিয়ে গত দুই বছরের মধ্যে যুদ্ধবিরতির সবচেয়ে কাছাকাছি পৌঁছানো গেছে। এমন পরিস্থিতিতে আজ সোমবার মিশরের রাজধানী কায়রোয় ইসরায়েল, হামাস, অন্যান্য ফিলিস্তিনি পক্ষ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা বৈঠকে বসতে চলেছেন। ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনার যেসব বিষয়ে হামাস এখনো সম্মত হয়নি, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করাই এ বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য। ইসরায়েলি, ফিলিস্তিনি, যুক্তরাষ্ট্র ও আরব নেতারা সবাই যুদ্ধরত পক্ষগুলোর প্রতি একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন।

তবে গাজায় শান্তি ফেরাতে সব পক্ষকে ট্রাম্পের পরিকল্পনায় রাজি করাতে যখন জোর তৎপরতা চলছে, তখনো গাজায় হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী, যা শান্তি আলোচনা ঘিরে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। শনিবার ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৭০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গাজা সিটির একটি আবাসিক ভবনে ১৮ জন এবং আল-মাওয়াসি বাস্তুচ্যুত শিবিরে দুই শিশু নিহত হয়। গাজার জরুরি পরিষেবা বিভাগ জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে দুই মাস থেকে আট বছর বয়সী সাতটি শিশুও ছিল। আলজাজিরার সাংবাদিক হিন্দ খোদারি মন্তব্য করেছেন, শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ চলার মধ্যে ইসরায়েলি এমন হামলা অব্যাহত থাকায় যুদ্ধবিরতির কোনো লক্ষণই তিনি দেখছেন না।

শান্তিচুক্তি কতদূর: ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি প্রস্তাবে হামাসের আংশিক সম্মতি গাজায় যুদ্ধ বন্ধে গত কয়েক মাসের মধ্যে সবচেয়ে বড় অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে এখনো একটি চুক্তি থেকে বহুদূরে রয়েছে উভয়পক্ষ। ট্রাম্পের এ পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, হামাসকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে, ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে একটি আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের কাছে এবং নিরস্ত্র হতে হবে। এর বিনিময়ে ইসরায়েল গাজা থেকে ধাপে ধাপে সেনা প্রত্যাহার করবে এবং হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে। চুক্তিটি কার্যকর হলে গাজায় মানবিক সাহায্য এবং পুনর্গঠন তহবিলও প্রবেশ করবে।

এখন পর্যন্ত হামাস যে শর্তগুলোতে রাজি হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া ও গাজার শাসন ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া। হামাস বলেছে, পরিকল্পনার বাকি শর্তগুলো নিয়ে অন্যান্য ফিলিস্তিনি পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে, কারণ এটি একটি ‘সম্মিলিত জাতীয় অবস্থানের’ বিষয়। এর অর্থ হলো—হামাস চুক্তির জটিল অংশগুলো, বিশেষ করে নিরাপত্তা সমর্পণের দাবি এবং ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের একটি সুনির্দিষ্ট সময়সূচি নিয়ে আরও আলোচনার দাবি জানাচ্ছে। হামাস স্পষ্ট করে বলেছে, তারা ট্রাম্পের প্রস্তাবিত আন্তর্জাতিক সংস্থার পরিবর্তে একটি ফিলিস্তিনি টেকনোক্রেটিক গভর্নিং বডির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে রাজি।

কায়রোয় বসছে সব পক্ষ: ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার ব্যবধান ঘোচাতে আলোচনার জন্য উভয়পক্ষের আলোচকরা মিশরের রাজধানী কায়রোয় একত্রিত হচ্ছেন। আজ সোমবার থেকে আলোচনা শুরু হবে এবং আশা করা হচ্ছে, কয়েক দিনের মধ্যেই আলোচনার ফল জানা যাবে, তা ইতিবাচক বা নেতিবাচক, যা-ই হোক। এর মধ্যে ট্রাম্প শনিবার রাতে গাজার একটি মানচিত্র পোস্ট করে দেখান, ইসরায়েলি সৈন্যদের কোন সীমারেখা পর্যন্ত প্রত্যাহার করা উচিত এবং বলেন, হামাস এতে রাজি হলেই যুদ্ধবিরতি অবিলম্বে কার্যকর হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, কায়রোয় হতে যাওয়া আলোচনায় যে বিষয়গুলোতে বেশি জোর দেওয়া হবে, তার মধ্যে থাকছে নিরস্ত্রীকরণের বিষয়ে হামাসের সুস্পষ্ট বার্তা এবং একই সঙ্গে গাজা থেকে ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহারের নিশ্চয়তা। এই দুটি বিষয়ে মতপার্থক্য দূর করা গেলেই আলোচনায় বড় ধরনের অগ্রগতি হবে বলে মনে করছেন তারা।

হামাস অতীতে বারবার অস্ত্র সমর্পণ করতে অস্বীকার করেছে এবং নীতিগতভাবে ট্রাম্পের পরিকল্পনা মেনে নিলেও, নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে তাদের অবস্থান বদল করেছে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। ট্রাম্প ও ইসরায়েল উভয়ই নিরস্ত্রীকরণ ইস্যুতে খুব কম ছাড় দিতে প্রস্তুত এবং হামাসকে বাধ্যতামূলক শর্তাবলিতে আবদ্ধ করতে বদ্ধপরিকর। এ ছাড়া হামাস ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য ফিলিস্তিনি টেকনোক্রেটিক গভর্নিং বডি চেয়েছে, যেখানে ট্রাম্পের পরিকল্পনায় আন্তর্জাতিক সংস্থার কথা বলা হয়েছে।

অন্যদিকে, গাজা থেকে ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহার নিয়েও অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। ট্রাম্পের পরিকল্পনা ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই নেতানিয়াহু একটি ভিডিও প্রকাশ করে ইসরায়েলিদের আশ্বস্ত করেন, সৈন্যরা গাজার অধিকাংশ এলাকায় থাকবে। শনিবার রাতেও তিনি একই কথার পুনরাবৃত্তি করে বলেন, জিম্মিদের ফেরত আনা হলেও ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজার গভীরে অবস্থান করবে। নেতানিয়াহুর এ অবস্থান ট্রাম্পের প্রস্তাবে থাকা পূর্ণ সেনা প্রত্যাহারের শর্তের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। হামাস চায়, তারা অস্ত্র সমর্পণ করলে ইসরায়েলি বাহিনী যেন ফের গাজায় প্রবেশ না করে, সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক গ্যারান্টি।

এমন পরিস্থিতিতে কায়রোয় হতে যাওয়া আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র উভয়পক্ষকে চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য চাপ দেবে বলেই ধারণা বিশ্লেষকদের। তবে অতীতেও একাধিকবার শান্তি আলোচনা চুক্তির কাছাকাছি এসে হঠাৎ ভেঙে পড়ার নজির থাকায় শেষ পর্যন্ত এ আলোচনার ফল নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এরই মধ্যে হামাসকে সতর্ক করে বলেছেন, তিনি চুক্তিতে বিলম্ব সহ্য করবেন না এবং গাজা যেন আবার হুমকি হয়ে না দাঁড়ায়, সেটি নিশ্চিত করার পাশাপাশি তিনি দ্রুত গাজা পরিস্থিতির শেষ দেখতে চান। এ অবস্থায় কায়রোর আলোচনায় নজর থাকবে সারা বিশ্বের।

কয়েক দিনের মধ্যেই জিম্মিদের মুক্তির প্রত্যাশা নেতানিয়াহুর: ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত শনিবার বলেন, হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলিদের কয়েক দিনের মধ্যেই ঘরে ফিরিয়ে আনতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি। নেতানিয়াহু স্থানীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে বলেন, ‘সামরিক ও কূটনৈতিক চাপের মুখে জিম্মিদের মুক্তি দিতে রাজি হয়েছে হামাস। আমি আশা করছি, আগামী কয়েক দিনে আমরা আমাদের সব জিম্মিকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারব।’ আজ সোমবার থেকে ইহুদিদের সুক্কোত উৎসব শুরু হতে যাচ্ছে, যা এক সপ্তাহ চলবে। এ উৎসবের মধ্যেই জিম্মিদের ঘরে ফেরাতে পারবেন বলে আশাবাদী নেতানিয়াহু।

ট্রাম্পের আহ্বান উপেক্ষা করে গাজায় হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আহ্বান উপেক্ষা করে গাজায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। ট্রাম্প গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধের আহ্বান জানানোর পর ইসরায়েলি হামলায় সেখানে অন্তত ৭০ জন নিহত হয়েছেন বলে চিকিৎসাকর্মীদের বরাতে জানিয়েছে আলজাজিরা। গাজায় যুদ্ধ থামাতে ট্রাম্পের দেওয়া ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস আংশিকভাবে মেনে নিতে রাজি হওয়ার পর ইসরায়েলকে হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৬৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এ ছাড়া আহত হয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। এর বাইরে হাজার হাজার মৃতদেহ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে থাকায় নিহতের সংখ্যা আরও বেশি বলে মনে করা হচ্ছে।

গাজা যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে ইউরোপজুড়ে বিক্ষোভ, লন্ডনে ৫০০ গ্রেপ্তার: গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে ও যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে যুক্তরাজ্য, ইতালি, স্পেন, পর্তুগালসহ ইউরোপজুড়ে বড় বড় শহরে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। স্পেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বার্সেলোনা ও রাজধানী মাদ্রিদে যে বিক্ষোভ হয়, তার ডাক দেওয়া হয়েছিল কয়েক সপ্তাহ আগেই। তবে ইতালির রোম ও পর্তুগালের লিসবনে বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয় গাজা অভিমুখী ত্রাণবাহী নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’কে ইসরায়েল আটক করার পর। এদিকে, গতকাল লন্ডনে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের সমর্থনে বিক্ষোভ-মিছিল হয়েছে। পুলিশ মিছিল থেকে ৫০০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এর আগে গাজার জনগণের প্রতি সংহতি জানিয়ে গত শুক্রবার ইতালিতে এক দিনের সাধারণ ধর্মঘটে ২০ লাখের বেশি মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ডিএনসিসি এলাকায় টাইফয়েডের টিকা পাবে ১৩ লাখ শিশু

অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে রেমিট্যান্স এসেছে ৬৯ কোটি ডলার

৭ বছর পর শহীদ জিয়ার মাজার জিয়ারত করলেন খালেদা জিয়া

ফার্মগেটে ককটেল বিস্ফোরণ

কালবেলার সংবাদের পর স্বপ্নের রঙিন ঘরে শাহারবানু

আখিরাতের কল্যাণ নিশ্চিতে কাজ করছে জামায়াত : মুজিবুর রহমান

রাজধানীতে তারেক রহমানের সাক্ষাৎকারের রেকর্ডেড ভিডিও প্রদর্শন

জবাব দিতে পিএসসিকে আলটিমেটাম

অসদাচরণের অভিযোগে বদলি চিকিৎসক দম্পতি

সড়কের পাশে ময়লার ভাগাড়, দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ মানুষ

১০

শহীদ জিয়ার মাজারে দোয়া করলেন খালেদা জিয়া

১১

নোয়াখালী বিভাগ চাইলেন ‘কাবিলা’

১২

বেথ মুনির রেকর্ডে অস্ট্রেলিয়ার দুর্দান্ত জয়

১৩

‘বিষাক্ত মদ’ পানে সংরক্ষিত ইউপি সদস্যের স্বামীর মৃত্যু

১৪

বিদায় নিচ্ছে মৌসুমি বায়ু, বৃষ্টি নিয়ে নতুন তথ্য

১৫

ঢাকা উত্তর সিটিতে জন্মনিবন্ধন ছাড়াই টাইফয়েড টিকা মিলবে

১৬

শহীদ জিয়ার মাজার জিয়ারতে খালেদা জিয়া

১৭

জাতীয় পর্যায়ে রানার্স আপ নারী ফুটবল দলকে গণসংবর্ধনা

১৮

দুই বছর আগের মামলায় নতুন করে ‘আসামি’ সাংবাদিক

১৯

বদলির আদেশের ৩ সপ্তাহ পরও অফিস করছেন রাসিক সচিব

২০
X