৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অনিয়ম ও ভুলের অভিযোগ তুলে আগামী তিন দিনের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনকে (পিএসসি) জবাব দিতে আলটিমেটাম দিয়েছেন পরীক্ষার্থীরা। দাবি পূরণ না হলে তারা কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
বুধবার (৮ অক্টোবর) বিকেল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষার্থীরা এ ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার্থী জালাল আহমদ। এসময় জীবন আহমেদ অভি, রাজিব, আবু সালেহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে জালাল আহমদ বলেন, ‘৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা গত ১৯ সেপ্টেম্বর সারা দেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রশ্নপত্র এতটাই জটিল ছিল যে, শুধু পড়ে বুঝতেই দুই ঘণ্টা লেগে যায়—উত্তর দেওয়া তো দূরের কথা। প্রশ্নপত্র তৈরির সময় সময়ের সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করা হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রশ্নপত্রে একাধিক ভুল ও অসঙ্গতি ছিল। সেট–১-এর ১৪৬ নম্বর প্রশ্নে প্রসেসরের ক্লক স্পিড নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, যার সঠিক উত্তর (০.২৫ ন্যানোসেকেন্ড) কোনো অপশনেই ছিল না। সেট–১-এর ১১০ নম্বর প্রশ্নে ‘ইরানের ফোর্দো পারমাণবিক কেন্দ্র কোন প্রদেশে’ জানতে চাওয়া হয়, কিন্তু সঠিক উত্তর ‘কোম’ দেওয়া ছিল না। অনেক প্রশ্নে একাধিক সঠিক উত্তর পাওয়া গেছে। যেমন, সেট–১-এর ১২০ নম্বর প্রশ্নে দুটি উত্তরই সঠিক হতে পারে (ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশ)।
এ ছাড়া খুলনায় ভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি।
জালাল আহমদ বলেন, ‘এবারের প্রিলিতে মাত্র ১০ হাজার ৬৪৪ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন—যা গত আটটি বিসিএসের মধ্যে সর্বনিম্ন। আমরা জানতে চাই, এর যৌক্তিক কারণ কী?’
সংবাদ সম্মেলনে পরীক্ষার্থীরা ৯ দফা দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো,
১. প্রিলিমিনারিতে ৬–৮ গুণ প্রার্থী উত্তীর্ণ করানো এবং ৩–৪ মাসের মধ্যে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া।
২. প্রতিটি প্রিলির সঠিক উত্তর, প্রাপ্ত নম্বর ও কাট মার্ক পিএসসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ।
৩. মানবিক, ব্যবসা ও বিজ্ঞান—তিন গ্রুপের ভারসাম্য বজায় রেখে মানসম্মত প্রশ্নপত্র প্রণয়ন।
৪. নিয়োগ পরীক্ষায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে পূর্ণাঙ্গ নম্বরসহ ফলাফল প্রকাশ।
৫. নন-ক্যাডার বিধি–২০২৩ সংশোধন করে প্রিলি ও রিটেন পাসকারীদের চাকরির নিশ্চয়তা।
৬. পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ‘মাইগ্রেশন স্টাইল’ ও প্যানেল সিস্টেম চালু করে শূন্য পদ পূরণ।
৭. একই ব্যক্তি যেন একাধিকবার একই ক্যাডারে সুপারিশ না পায়—এ জন্য ডাটাবেজ তৈরি।
৮. কম খরচে ও দ্রুত খাতা পুনর্নিরীক্ষণের সুযোগ।
৯. টেলিটকসহ অন্যান্য কারিগরি ত্রুটি দূরীকরণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।
সংবাদ সম্মেলনের শেষে পরীক্ষার্থীরা বলেন, ‘৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ভুল ও অনিয়ম নিয়ে পিএসসিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে জবাব দিতে হবে। না দিলে আমরা সারা দেশের পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে কঠোর আন্দোলনে নামব।’
মন্তব্য করুন