

কুমিল্লার লালমাই উপজেলার দত্তপুর-বাগমারা এলাকার বাসিন্দা সোহাগ গড়ে তুলেছেন দেশের অন্যতম বিরল অটোগ্রাফ সংগ্রহশালা। প্রায় পাঁচ দশক ধরে নিরলস পরিশ্রম, গভীর আগ্রহ ও অসীম ধৈর্যকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তুলেছেন এ রত্নভান্ডার। তার সংগ্রহে রয়েছে রাজনীতি, ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও সাহিত্যজগতের চার শতাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তির স্বাক্ষর।
শখকে কাজে লাগিয়ে অসংখ্য অটোগ্রাফ সংগ্রহ করায় কুমিল্লার লালমাইয়ের দত্তপুর-বাগমারা এলাকার মানুষজন তাকে চেনেন ‘অটোগ্রাফ সংগ্রাহক সোহাগ’ নামেই।
সোহাগের সংগ্রহশালায় আছে বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি নায়করাজ রাজ্জাক থেকে শুরু করে সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন, আবিদা সুলতানা, ফরিদা পারভীন, সৈয়দ আব্দুল হাদী, খোরশেদ আলম, রফিকুল আলম, প্রবাল চৌধুরীর মতো তারকার স্বাক্ষর।
ক্রীড়াক্ষেত্রেও তার সংগ্রহ চমকে দেওয়ার মতো। ফুটবলার সালাউদ্দিন, পিন্টু, প্রতাপ, ভানু, বাদল রায়, বাবলু, চুন্নু, ওয়াসিম, আশীষসহ স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের বহু তারকার অটোগ্রাফ স্থান পেয়েছে তার সংগ্রহে। রয়েছে দাবার রানি রানী হামিদ, গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোর্শেদ, ইংলিশ চ্যানেল জয়ী কিংবদন্তি ব্রজেন দাস, ক্রিকেটার রকিবুল হাসান, লিপুসহ অসংখ্য ক্রীড়াবিদের স্বাক্ষরও।
শিক্ষকতা পেশার পাশাপাশি সোহাগ জীবনের বেশিরভাগ সময় পার করেছেন অটোগ্রাফ সংগ্রহে। তিনি প্রতিদিন আট-দশটি সংবাদপত্র পড়েন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তিনি সক্রিয়, নিজের ফেসবুক আইডিতে শেয়ার করেন অটোগ্রাফ ঘিরে নানান স্মৃতিচারণ। অবসরজীবনে তিনি প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা সময় দেন নিজের কৃষিবাগানে।
সোহাগের এই অনন্য অটোগ্রাফ সংগ্রহশালার কথা এখন ছড়িয়ে পড়েছে বহু স্থানে। আগ্রহী মানুষজন নিয়মিতই ছুটে যান তার বাড়িতে এই ব্যতিক্রমী আর্কাইভ দেখতে।
সোহাগ জানান, অটোগ্রাফ সংগ্রহ শুধু শখ নয়, এটি অতীতকে ধরে রাখার মাধ্যম। এখন তার এই সংগ্রহশালা স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে, অনেকেই দেখতে আসেন এই অনন্য সংগ্রহ। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটি একটি ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা কুমিল্লার গৌরব ও দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বহু বছরের শ্রমে গড়ে ওঠা সোহাগের এই অটোগ্রাফ ভান্ডার শুধু স্মৃতি সংরক্ষণ নয়, বরং সময়কে ধরে রাখার এক সোনালি দলিল। এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক সম্পদ এবং কুমিল্লার সাংস্কৃতিক গৌরবের এক উজ্জ্বল প্রতীক।
মন্তব্য করুন