

আধিপত্য আর বিশ্ব শাসনের ধারাবাহিকতায় আছে বহু উত্থানপতন, ভাঙাগড়া, অবশেষে বিলীনের গল্প! তবে দীর্ঘ সময় ধরে চলা বিশাল বিশাল সভ্যতা-সাম্রাজ্যের গল্পে বিবর্তন, পরিবর্তন বা রূপান্তর নানা দিক থেকে আমাদের অস্তিত্বের সাক্ষ্যই দেয়। তাই তো প্রাচীন কোনো নিদর্শনের ধ্বংসাবশেষ রক্ষার দায়ও বর্তমানের সমান! কিন্তু বর্তমান বগুড়া জেলার করতোয়া নদীর তীরে, হাজার বছরের প্রাচীন জনপদ ‘পুণ্ড্রনগরী’র ধ্বংসাবশেষটুকুও পড়ে গেছে অযত্নে! প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে থাকা প্রাচীন দুর্গ-প্রাসাদের স্মৃতিচিহ্ন রক্ষায় সঠিক তদারকির পাশাপাশি নেই কোনো সীমানা প্রাচীর বা বেড়া। ফলে মাটি খুঁড়ে দুর্গের পাতলা ইটগুলো তুলে নিজেদের কাজে ব্যবহার করছে স্থানীয়রা!
বগুড়ার কাহালুর শেষ সীমানার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে পাইকড় ইউনিয়ন; বগুড়া সদর উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষা বাগইল গ্রামের বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে প্রাচীন দুর্গ-প্রাসাদ স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ। উঁচু ঢিবির মতো দেখতে প্রায় ৩৫ একর জায়গাজুড়ে রয়েছে ‘ধাপের আড়া’ ও ‘চিরিঙ্গি ধাপ’ নামে পরিচিত দুটি নিদর্শন।
বগুড়া সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম কোণে অবস্থিত প্রাচীন এই দুর্গ-প্রাসাদটি। আগে এই দুর্গ-প্রাসাদে যাওয়ার জন্য তেমন কোনো ভালো রাস্তা না থাকলেও বর্তমানে চতুর্মুখী রাস্তা রয়েছে। বগুড়া থেকে পুরাতন দিনাজপুর সড়ক দিয়ে ঘোড়াধাপ থেকে পশ্চিম দিকের একটি পাকা রাস্তা দিয়ে সরাসরি বিভিন্ন যানবাহনে এই দুর্গ-প্রাসাদে যাওয়া যায়। এ ছাড়া যোগীর ভবন দিয়ে, মুহিষামুড়া দিয়ে, নামুজা বাংলাবাজার থেকে ধরমপুরের ভিতর দিয়ে এই দুর্গ-প্রাসাদে যাওয়ার পাকা ও অধাপাকা রাস্তা আছে।
প্রফেসর ড. মোস্তফা আলী ‘পুণ্ড্র একটি প্রাচীন জনপদের ইতিবৃত্ত’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ‘বাগইল দুর্গের’ কথা। নিতাই ধুপনীর স্তূপের চেয়ে বড় একটি স্তূপ রয়েছে এখানে; এটি একটি বৌদ্ধ সংঘারাম বলেই অনুমিত হয়। বাগইল দুর্গটি সম্রাট অশোকের রাজত্বকালের বলে অনুমান তার।
প্রভাসচন্দ্র সেনের ‘বগুড়ার ইতহাস’ গ্রন্থে পাওয়া যায়, ‘বাগইল গ্রামে একটা উচ্চস্থান শালবাহন রাজার কাচারিবাড়ি বলিয়া পরিচিত; রজাকপুর গ্রামে অনেকগুলো ধ্বংসস্তূপ পরিদৃষ্ট হয়; তন্মধ্যে শৃঙ্গীনাথের ধাপ (সিংহনাদ) উল্লেখযোগ্য।’ ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে, শালবাহন রাজা ছিলেন প্রাচীন ভারতের একজন কিংবদন্তি সম্রাট; যিনি (বর্তমান পৈঠান) মহারাষ্ট্র থেকে শাসন করতেন বলে কথিত আছে।
তবে, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে হলেও এই প্রাচীন দুর্গ-প্রাসাদের বিষয়ে তেমন কোনো আলোকপাত হয় না। এই দুর্গ-প্রাসাদ নিয়ে একেকজন একেকভাবে ব্যাখ্যা করলেও, এখানে কী ছিল বা মাটির নিচে কোন আমলের স্থাপনা চাপা রয়েছে, তা সঠিকভাবে জানা কঠিন ব্যাপার। সরকারিভাবেও তা খনন করে দেখা হয়নি।
এ বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বগুড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ড. আহমেদ আব্দুল্লাহ জানান, প্রয়োজন মাফিক জনবল ও অর্থ বরাদ্দ থাকে না। এর পরও তারা প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আওতাধীন পুরাকীর্তির নিদর্শনগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেন।
মন্তব্য করুন