

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর বলয়ের বাইরে গিয়ে তৃতীয় একটি রাজনৈতিক জোট গঠনের গুঞ্জন ছিল দীর্ঘদিনের। যারই ধারাবাহিকতায় তরুণদের গড়া জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) তিনটি দলের সমন্বয়ে মাত্র দুদিন আগেই আলোর মুখ দেখেছে আলোচিত সেই জোট। সব জল্পনাকল্পনা উড়িয়ে দিয়ে ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’ নামে রাজনৈতিক এ মেরূকরণে এনসিপির সঙ্গী হয়েছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও এবি পার্টি। নতুন এ জোটে দলের পরিধি বাড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। মধ্যপন্থি ও সংস্কারের পক্ষে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলছে সেই আলোচনা। আর এ জোট মনোনীত প্রার্থীদের সবাই যে কোনো একটি প্রতীকে নির্বাচন করতে চান। আর এ ক্ষেত্রে এনসিপির শাপলা কলি প্রতীক অগ্রাধিকার পাবে বলে জোটের একাধিক নেতা কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে গত রোববার ডাকা হয় জরুরি সংবাদ সম্মেলন। সেখানে নতুন জোটের ঘোষণা দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনিই গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করবেন। দলগুলোর পক্ষ থেকে এ জোটকে বলা হচ্ছে, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অঙ্গীকার রক্ষা ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বিনির্মাণে আগ্রহীদের রাজনৈতিক ও নির্বাচনী ঐক্য’।
জানা গেছে, নতুন এ জোটে অন্তর্ভুক্তের বিষয়ে আরও অন্তত পাঁচটি দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে। দলগুলো হলো গণঅধিকার পরিষদ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নাগরিক ঐক্য এবং একটি ইসলামী ঘরানার দল। এ ছাড়া ইউনাইটেড পিপলস অব বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ) নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও তাদেরও থাকার সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার কালবেলাকে বলেন, ‘তৃতীয় একটি জোট গড়ে তুলতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছিলাম। যাদের সঙ্গে আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে, তাদের নিয়ে জোট গঠন করা হয়েছে। বাকি আরও কয়েকটি দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আশা করি, আরও অন্তত দুই-তিনটি দল শিগগির আমাদের সঙ্গে যুক্ত হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ জোট শুধু নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট নয়। নির্বাচন দিয়ে শুরু হলেও পরবর্তী সময়ে সংস্কারকে মূল এজেন্ডা রেখে রাজনৈতিক জোট হিসেবে থাকবে।’
আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোট মনোনীত প্রার্থীরা যে কোনো একটি প্রতীকে নির্বাচন করার কথা জানিয়েছেন। জোটের একাধিক নেতা কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন, শাপলা প্রতীক নিয়েই নির্বাচনে লড়ার কথা ভাবছেন তারা। তবে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে জারি করা সরকারের অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, নিবন্ধিত দল জোট করলেও নির্বাচনে অংশ নিতে হবে নিজ দলের প্রতীকে। এ বিধানের আপত্তি জানিয়েছিল বিএনপি এবং ১২ দলীয় জোট। তবে এর পক্ষে জোরালো অবস্থান নিতে দেখা গিয়েছিল জাতীয় নাগরিক পার্টিকে। হঠাৎ কেন এনসিপির ভিন্ন সুর—এ নিয়েও রাজনীতির অঙ্গনে আলোচনা চলছে।
এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব ও মিডিয়া সেল সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন কালবেলাকে বলেন, ‘সংস্কারের লক্ষ্যেই আমাদের এ জোট। যারা দেশে সংস্কারের পক্ষে থাকবে, রাজনীতি করবে অর্থাৎ সংস্কারকে মূল এজেন্ডা ধরে রাজনীতি করতে চায়, তাদের সবারই এ জোটে আসার সুযোগ আছে। অনেক দলেএ রই মধ্যে আগ্রহও প্রকাশ করেছে। তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা চলছে।’
এক প্রতীকে নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যদি এক প্রতীকে নির্বাচন করা হয়, তাহলে সেটি শাপলা কলি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এ ক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ূম বলেন, ‘এক প্রতীকে নির্বাচন করার বিষয়ে অনেক আলাপ-আলোচনা এখনো বাকি। নির্বাচন কমিশনের আরপিও আইন আছে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই আমরা একই মার্কায় নির্বাচন করার কথা ভাবছি। যাতে ভোটগুলো একই মার্কায় পড়ে এবং উচ্চকক্ষে যেহেতু পিআরের বিষয়ও আছে। এক্ষেত্রে তুলনামূলক পরিচিত প্রতীক শাপলা কলি।’
গণঅধিকার পরিষদসহ কয়েকটি দলের নতুন এ জোটে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে চলছে আলোচনা। সব ঠিক থাকলে শিগগির এ জোটের পরিধি বাড়বে। জোটে আসার বিষয়ে গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ বলেন, ‘নতুন জোটের সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের আলোচনা এখনো চলমান আছে। আমরা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। জোট কিংবা একক নির্বাচন কোনোটাই এখনো চূড়ান্ত নয়। সব ধরনের আলোচনা আছে।’
এর আগে গত রোববার আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছিলেন, ‘এটা শুধু নির্বাচনী জোট নয়, এটা রাজনৈতিক জোটও। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করব। আরও অনেক রাজনৈতিক শক্তি ও দলের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। আগামী নির্বাচনে আমরা একসঙ্গে, এক মার্কায় নির্বাচন করব।’
একই অনুষ্ঠানে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘আজকের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পেছনে দীর্ঘ কয়েক বছরের ইতিহাস আছে। আমরা গণভোটের পক্ষে, জুলাই সনদের পক্ষে ক্যাম্পেইন করব এবং নির্বাচনের পর সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে কাজ করব। সংস্কারকে প্রধান রেখে এবং অর্থনৈতিক ও গণতান্ত্রিক সংস্কার সামনে রেখে আমরা এ দলগুলো এক হয়েছি। নির্বাচনেও আমরা একসঙ্গে অংশগ্রহণ করব।’
মন্তব্য করুন