দরজায় কড়া নাড়ছে অমর একুশে বইমেলা। আর এক দিন পরই পর্দা উঠবে প্রাণের এ উৎসবের। ১ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টায় মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন প্রধানমন্ত্রী ২০২৩ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত ১৬ গুণীজনের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন। মেট্রোরেল চালু হওয়ায় বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবার বইমেলা আরও বেশি জমজমাট হবে বলে মনে করছেন লেখক-প্রকাশকরা। এ ছাড়া ২০২৪ সাল অধিবর্ষ হওয়ায় ফেব্রুয়ারি মাসও ২৯ দিনে। তাই মেলার সময় এক দিন বেশি থাকবে।
এবার ছয় শতাধিক প্রকাশককে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রকাশকরা জানিয়েছেন, গত ২৩ জানুয়ারি বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকেই স্টল-প্যাভিলিয়নের কাজে লেগে পড়েছেন তারা। গতকাল সোমবার বইমেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা গেছে, বাংলা একাডেমি চত্বর ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতর চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। স্টল নির্মাণে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। কোন জায়গায় কোন ব্যানার, সাইনবোর্ড, নামফলক বসবে, কতগুলো তাক হবে, কতটুকু দূরত্ব হবে—কাঠমিস্ত্রিদের সেসব নির্দেশনা দিচ্ছেন ঠিকাদার ও প্রকাশকরা।
স্টলের নির্মাণকাজ তদারক করছিলেন অনন্যা প্রকাশনার স্টল তৈরির ঠিকাদার রুবেল শিকদার। তিনি বলেন, স্টল নির্মাণ সরঞ্জামের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে এবার আমাদের লাভের অংশ কমে যাবে। তার পরও আমরা চেষ্টা করছি সময়মতো কাজ শেষ করতে। স্টল নির্মাণকাজে নিয়োজিত শ্রমিক আবুল হোসেন বলেন, আমাদের অবকাঠামো তৈরির কাজ শেষ। এখন শুধু কিছু রঙের কাজ চলছে। আশা করি আজকের (গতকাল) মধ্যে এটি শেষ হয়ে যাবে। তারপর আমরা প্রকাশকদের হাতে বুঝিয়ে দেব।
বাউণ্ডুলে প্রকাশনা সংস্থার স্বত্বাধিকারী অনিন্দ্য দীপ বলেন, এবার বই বিক্রি বাড়বে। আর আমাদের দেশে ক্রমেই প্রবন্ধের পাঠক বাড়ছে। যার প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি অনলাইন ও অফলাইনে বই কেনার হার দেখে। তিনি আরও বলেন, আমাদের স্টলের কাজ প্রায় শেষ। আশা করছি আগামীকালের (আজ) মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব। বুধবার বই উঠিয়ে পুরো স্টল সাজিয়ে ফেলতে পারব। বইমেলা নিয়ে আমাদের প্রত্যাশা বরাবরই বেশি।
লেখক অনামিকা সরকার বলেন, যে কোনোবারের চেয়ে এবারের বইমেলা আরও বেশি জমজমাট হবে, পাঠক ও দর্শনার্থী বাড়বে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে অনেক মানুষ আসবেন। কারণ মেট্রোরেলের কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন অনেক উন্নত। তাই খুব সহজে কম সময়ে পাঠকরা মেলায় আসতে পারবেন।
এর আগে গত শনিবার কথা হয়েছিল বাতিঘরের প্রকাশক মোহম্মদ নাজিমুদ্দীনের সঙ্গে। তিনি বলেছেন, সারা বছর যে পরিমাণ নতুন বই প্রকাশ হয় তার মধ্যে ৯০ ভাগ হয় এই বইমেলাকে টার্গেট করে। দেশের পুরো প্রকাশনা শিল্প বছরের এই নির্দিষ্ট সময় ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে।
প্রতিবছরের মতো এ বছরও মেলার মূল মঞ্চ হচ্ছে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। মূল মঞ্চে থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মাসব্যাপী সেমিনার। পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের জন্য থাকবে চিত্রাঙ্কন, সংগীত ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন। গত বছরের মতো এবারও বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও ‘লেখক বলছি’ মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে। আর রমনা কালী মন্দিরের পাশে থাকছে ‘শিশু চত্বর’।