রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারে লাগা আগুনে ২৬ জনের প্রাণহানির জন্য জমির মালিক ও ভবন ব্যবস্থাপনা কমিটির অবহেলা থাকার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। দুপক্ষের আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোপত্র দিয়েছে তদন্ত সংস্থাটি। সম্প্রতি অভিযোগপত্রটি আদালতে জমা দিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। অভিযোগপত্রটি গ্রহণে আদালতে আজ রোববার দিন ধার্য রয়েছে।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন এফআর টাওয়ার ভবনের জমির মালিক এস এম এইচ আই ফারুক, ভবন ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি তাজভিরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক এ এ মনিরুজ্জামান, কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ আমিনুর রহমান, সদস্য কাজী মাহমুদুন নবী, রফিকুল ইসলাম, ওয়ারদা ইকবাল ও ভবনটির সপ্তম তলার মালিক সেলিম উল্লাহ। অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুলকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ঢাকা মেট্রো দক্ষিণের পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম।
রফিকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, জমির মালিক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির পুরোনো দ্বন্দ্ব রয়েছে। এই দ্বন্দ্বে এফআর টাওয়ারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। ভবনটির অষ্টম তলায় শর্টসার্কিট বা এয়ার কন্ডিশনের লিকেজ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এরপর এই আগুন নবম ও দশম তলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে মারা যান ২৬ জন।
এর আগে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশও (ডিবি) একই ব্যক্তিদের অভিযুক্ত করে ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোপত্র জমা দিয়েছিল। ডিবির পাঁচ কর্মকর্তা পর্যায়ক্রমে মামলাটি তদন্ত করেন। কিন্তু মামলাটি যথাযথ প্রক্রিয়ায় তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন হয়নি উল্লেখ করে পিবিআইকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।
পিবিআইর তদন্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম তার প্রতিবেদনে রূপায়ণ গ্রুপের বিরুদ্ধে অভিযোগ বিষয়ে বলেছেন, রূপায়ণ গ্রুপ ভবন নির্মাণের সময় ফায়ার পাম্প, জকি পাম্প, ফায়ার হাইড্রেন্ট, এবিসি ফায়ার এক্সটিংগুইসার, হিট ডিটেকটরসহ মোট ২১ লাখ ৬৪ হাজার টাকার যন্ত্রপাতি সরবার করে। রাজউক অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী রূপায়ণ হাউজিং এস্টেট লিমিটেড ২৩ তলা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করেছে। নকশা অনুমোদন পরবর্তী সময়েও রাজউক এখানে মনিটরিং করেছে। কোম্পানি পজেশন হস্তান্তর করায় ভবনটির সুপারভাইজ ও ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব কোম্পানির ওপর বর্তায় না। কাজেই অগ্নিকাণ্ডের ক্ষেত্রে নির্মাণ কোম্পানির কোনো অবহেলা পরিলক্ষিত হয় না।
২০১৯ সালের ২৮ মার্চ দুপুরে বনানীর ৩২ কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে অবস্থিত এফআর টাওয়ারে আগুন লাগে। জীবন বাঁচাতে বিভিন্নভাবে বাণিজ্যিক এ ভবন থেকে নামার সময় দুর্ঘটনা ও অগ্নিদগ্ধ হয়ে ২৬ জন প্রাণ হারান। আহত হন শতাধিক ব্যক্তি। এ ঘটনায় ৩০ মার্চ বনানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) মিল্টন দত্ত বাদী হয়ে মামলা করেন।