এ জেড ভূঁইয়া আনাস
প্রকাশ : ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৫১ এএম
আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:০৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

শাস্তির মুখে ৩৯ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান

কলমানিতে সুদের সীমা লঙ্ঘন
শাস্তির মুখে ৩৯ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান

বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সংকোচন নীতিসহ নানা কারণে ভয়াবহ তারল্য সংকটে রয়েছে দেশের বেশিরভাগ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। সমস্যা সমাধানে প্রতিনিয়তই বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে নগদ টাকা ধার করছে ব্যাংকগুলো। যেসব ব্যাংকের কাছে পর্যাপ্ত নগদ টাকা আছে, তাদের কেউ কেউ সুযোগ বুঝে কলমানি সুদ হার বাড়িয়ে দিয়েছে। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া সীমাও লঙ্ঘন করছে অনেক প্রতিষ্ঠান। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকায় এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৩৯টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তারল্য সংকট কাটাতে ব্যাংকগুলো সব সময়ে নিজেদের মধ্যে অর্থ আদান-প্রদান করে। এটাকে ব্যাংকের ভাষায় বলা হয় কলমানি মার্কেট। এই মার্কেটে অর্থ আদান-প্রদানে বাংলাদেশ ব্যাংক ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ সুদ বেঁধে দিয়েছে। গত ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩৩টি ব্যাংক বেঁধে দেওয়া সুদের সীমা লঙ্ঘন করে ৩ হাজার ১০৫ কোটি ধার করেছে এবং একই সময়ে ২ হাজার ৬১০ কোটি অন্য ব্যাংকে ধার দিয়েছে। একইভাবে ৬টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ সুদের সীমা ভেঙে ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ হারে ৯৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ধার করেছে। এ ধরনের লেনদেন ব্যাংকিং নীতিমালার পরিপন্থি হিসেবে দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সুদের সর্বোচ্চ সীমা লঙ্ঘনের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সন্তোষজনক জবাব না পেলে এসব প্রতিষ্ঠানকে জরিমানার মুখোমুখি হতে হবে। সেইসঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নগদ টাকা জোগান দেওয়া বন্ধ করা হতে পারে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি ব্যাংকের মধ্যে জনতা ব্যাংক ৯ দশমিক ৭৫ টাকা দরে কলমার্কেটে অন্য ব্যাংক থেকে ৪৮১ কোটি টাকা ধার করেছে। আর বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকও একই রেটে ৯৫ কোটি টাকা এবং বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ৯ টাকা ৯০ পয়সা দরে ৪৫৯ কোটি টাকা ধার দিয়েছে। বিদেশি ব্যাংকের মধ্যে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ৯ টাকা ৬০ পয়সা দরে ৩০৪ কোটি, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলং ৯ টাকা ৭৫ পয়সা দরে ১১৬ কোটি, একই রেটে ব্যাংক আল ফালাহ ১৭৬ কোটি টাকা কলমানিতে ধার দিয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক ৯ টাকা ৭৫ পয়সা দরে ৩০০ কোটি টাকা, আইএফআইসি ৯ টাকা ৯০ পয়সা দরে ২০৯ কোটি, সিটিজেন ব্যাংক ৯ টাকা ৭৫ পয়সা সুদহারে ১৮ কোটি টাকা অন্য ব্যাংকে ধার দিয়েছে। আর ইউসিবি ৯ টাকা ৭৫ পয়সা সুদে ২৯৭ কোটি ধার করলেও ব্যাংকটি ৯ টাকা ৮০ পয়সা রেটে ২৮০ কোটি টাকা অন্য ব্যাংককে ধার দিয়েছে।

এদিকে, এবি ব্যাংক ৯ টাকা ৮০ পয়সা দরে ৬০ কোটি, একই দরে মিডল্যান্ড ব্যাংক ২৩৫ কোটি, এনসিসি ব্যাংক ১০৪ কোটি, এনআরবি ৭৫ কোটি ধার করেছে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘দৈনন্দিন ও স্বল্প মেয়াদে টাকার চাহিদা মেটাতে এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে টাকা ধার করে। যেসব ব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত তারল্য থাকে, তারাই মূলত ধার দিয়ে এর বিনিময়ে সুদ নেয়। সুদের হার নির্ভর করে কত দিনের জন্য টাকা ধার নেওয়া হচ্ছে, তার ওপর। আবার কখনো কখনো চাহিদা ও সরবরাহের ওপর নির্ভর করেও সুদহার ওঠানামা করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকিতে কলমানি দেওয়া হয়।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ইস্টার্ন ব্যাংক ৯ টাকা ৬০ পয়সা দরে ১২৩ টাকা, একই দরে এসবিএসি ব্যাংক ১৪৪ কোটি, প্রিমিয়ার ব্যাংক ৪৫ কোটি, ঢাকা ব্যাংক ৯ টাকা ৮০ পয়সা দরে ৩৬৪ কোটি টাকা ধার করেছে। এনআরবিসি ব্যাংক ৯ টাকা ৭৫ পয়সা দরে ২৫ কোটি ধার দিয়েছে। আর মধুমতি ব্যাংক ৯ টাকা ৭৫ পয়সা দরে ১১৫ টাকা ধার করলে একই দরে ৬১ কোটি টাকা ধার দিয়েছে। সাউথইস্ট ব্যাংক ৯ টাকা ৭৫ পয়সা সুদে ৬১ কোটি টাকা ধার দিয়েছে। কিন্তু ব্যাংক এশিয়া ৯ টাকা ৬০ পয়সা রেটে ৮১ কোটি ধার করলেও একই রেটে ৪০ কোটি ধার দিয়েছে। সীমান্ত ব্যাংক ৯ টাকা ৯০ পয়সা রেটে ৬৩ কোটি এবং উত্তরা ব্যাংক ৯ টাকা ৭৫ পয়সা রেটে ৪৬৪ কোটি টাকা বিক্রি করেছে। তবে ওয়ান ব্যাংক ৯ টাকা ৬০ পয়সা রেটে ১০ কোটি, পূবালী ব্যাংক একই রেটে ২৫৫ কোটি, যমুনা ব্যাংক ৯ টাকা ৯০ পয়সা দরে ৪৬৬ কোটি, মেঘনা ব্যাংক ৯ টাকা ৮০ পয়সা রেটে ৮৫ কোটি এবং কমিউনিটি ব্যাংক ৯ টাকা ৯০ পয়সা সুদে ১০৪ কোটি টাকা ধার করেছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেন, ‘তারল্য ব্যবস্থাপনা তো ব্যাংকের নিজস্ব বিষয়। তবে আইন নীতিমালা মানতে তো বাধ্য। সবাই যদি কলমানি থেকে ইচ্ছামতো রেটে লেনদেন করে তাহলে তো রেট নির্ধারণের দরকার ছিল না। বাজার লাগামছাড়া হবে। শাস্তির আগে তদন্ত করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যাদের বিরুদ্ধে নিয়ম লঙ্ঘন দায় প্রমাণিত হবে তারাই আইন অনুযায়ী শাস্তি পাবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জানা গেছে, গত ২৭ মার্চ কলমানির সুদের হার ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হিসাবে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশের রেকর্ড উঠেছে। ২০১২ সালের পর এটিই কলমানির সর্বোচ্চ সুদহার। ওই বছর কলমানির সুদের ১২ দশমিক ৮২ শতাংশে উঠেছিল সুদহার।

নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আইডিএলসি, ডিবিএইচ, পিএফআইএন, বে লিসিং, বিডি ফাইন্যান্স ও আইসিবি নিয়ম লঙ্ঘনের মাধ্যমে কলমার্কেটে লেনদেন করায় শাস্তির হুঁশিয়ারি জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গায়েহলুদে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে বর-কনে (ভিডিওসহ)

১৩ মাসে কোরআনের হাফেজ হলেন শিশু মাকসুদুর

বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকে চাকরির সুযোগ, দ্রুত আবেদন করুন

আজ থেকে ঘরে বসেই মেট্রোরেলের কার্ড রিচার্জ করবেন যেভাবে

‘পরিমার্জিত’ শান্তি পরিকল্পনায় একমত যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন 

প্রাণ গ্রুপে বড় নিয়োগ, লাগবে না অভিজ্ঞতা 

চোর সন্দেহে শাহিনকে গণপিটুনি, অতঃপর...

অনলাইনে ইসরায়েলের পক্ষে কার্যকলাপের দায়ে ৮ বছরের কারাদণ্ড

ঢাকায় দিনের তাপমাত্রা কেমন থাকবে জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর

রাজধানীতে আজ কোথায় কী

১০

মঙ্গলবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১১

২৫ নভেম্বর : আজকের নামাজের সময়সূচি

১২

অবসর নিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক

১৩

বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার বিএনপির দুই নেতার

১৪

ভূমিকম্প: প্রশাসনের জরুরি পদক্ষেপ, ভাঙা হবে ২৪ ভবন

১৫

পর্তুগালের কাছে হেরে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেল ব্রাজিল

১৬

‘এলডিসি উত্তরণ ও বন্দর নিয়ে কেবল নির্বাচিত সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে’

১৭

দেশের ৮১ সরকারি কলেজ স্থান পেল ‘এ’ ক্যাটাগরিতে

১৮

স্ট্রোক করে চবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু

১৯

চলন্ত ট্রেনে পপকর্ন বিক্রেতাকে হত্যা

২০
X