এবারের ঈদুল ফিতরের কেনাকাটার উল্লেখযোগ্য অংশ হয়েছে অনলাইন বা ই-কমার্সে। গবেষণা ও ডিজিটাল সমাধানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ব্রেকবাইট ই-বিজনেসের তথ্যমতে, ১ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত ই-কমার্সে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার কেনাবেচা হয়েছে। ২০২৩ সালের ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকার লেনদেনের তুলনায় প্রবৃদ্ধি প্রায় ২০ শতাংশ। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে মোবাইল, এসি, ফ্রিজের মতো হোম অ্যাপ্লায়েন্স ইলেকট্রনিক্স পণ্য এবং পোশাক। এ ক্ষেত্রে বিদেশি পণ্যের তুলনায় দেশি পণ্যে বেশি আগ্রহ ছিল ক্রেতাদের। ঈদ কেনাকাটায় কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় আড়াই কোটি পণ্য গ্রাহকদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। রাজধানীর তুলনায় বাইরের জেলাগুলো থেকে ই-কমার্সে কেনাকাটার হার ছিল বেশি।
ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-ক্যাবের অর্থ সম্পাদক ও ব্রেকবাইট ই-বিজনেস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী আসিফ আহনাফ বলেন, ‘ঈদের কেনাকাটায় মার্চের ১ তারিখ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত সময়কে বিবেচনায় রাখা হয়। এই সময়ে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে ই-কমার্স খাতে। এর মধ্যে সরাসরি ই-ট্রানজেকশন হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার। বাকি ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) এবং ক্যাশ অন ডেলিভারিতে (সিওডি)। বাংলাদেশ ব্যাংক, এমএফএস প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন ই-কমার্স ও কুরিয়ার প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য বিশ্লেষণে এমন চিত্র পাচ্ছি। কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলো দৈনিক প্রায় ৭ লাখ, গড়ে মোট আড়াই কোটির মতো পণ্য সরবরাহ করেছে।’
কেনাকাটায় ই-কমার্সে ক্রেতাদের আস্থা ও আগ্রহ আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখ করে আসিফ আহনাফ বলেন, ‘ঊর্ধ্বমুখী চিত্র তুলে ধরে যে, এ খাতে ক্রেতাদের আগ্রহ ও আস্থা বাড়ছে। এবারের ঈদে লম্বা ছুটি থাকায় অনেক মানুষ গ্রামের বাড়িতে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে যাবেন। অনলাইনে কেনাকাটা বৃদ্ধির এটি একটি কারণ। পাশাপাশি ঈদের সঙ্গেই পহেলা বৈশাখের ছুটি। কাছাকাছি সময়ে সবাই বোনাস এবং বেতন পেয়েছেন। ফলে কেনাকাটায় সাধারণ মানুষের ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে।’
তিনি জানান, ‘গরমের কারণে টিভি ও ফ্রিজের মতো পণ্যে গ্রাহকদের ঝোঁক বেশি ছিল। পাশাপাশি বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখের সঙ্গে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি এবং বয়কট ইস্যুর জন্য বিদেশি পোশাকের তুলনায় দেশীয় হেরিটেজ পোশাকে ক্রেতার আগ্রহ ছিল বেশি।’
জানা গেছে, মার্কেটপ্লেসভিত্তিক শীর্ষ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দারাজে শুধু মার্চ মাসেই ২০০ কোটি টাকার বেশি বেচাকেনা হয়েছে। এসব পণ্যের মধ্যে টিভি, মোবাইল, এসি, ফ্রিজ, ফার্নিচার ও স্পোর্টস আইটেমের মতো সাধারণ মার্চেন্ডাইজ পণ্য, পোশাক, ব্যাগ, জুয়েলারি এবং জুতার অর্ডার হয়েছে সর্বাধিক।
দারাজ বাংলাদেশের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার এ এইচ এম হাসিনুল কুদ্দুস রুশো কালবেলাকে বলেন, ‘পণ্যের মূল্য বিবেচনায় শীর্ষ তিন ক্যাটাগরিতে রয়েছে যথাক্রমে ইলেকট্রনিক্স, সাধারণ মার্চেন্ডাইজ এবং ফ্যাশন পণ্য। তবে পণ্যের সংখ্যা হিসাব করলে শীর্ষে থাকছে ফ্যাশন পণ্য। কারণ ৫০ হাজার টাকার একটি ফ্রিজের সমান হয়তো ১০টি জামা। বাকি দুটি অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে ইলেকট্রনিক্স এবং সাধারণ মার্চেন্ডাইজ পণ্য।’
ই-কমার্সে ঈদ কেনাকাটায় ঢাকার বাইরে থেকে অর্ডারে গ্রাহকদের প্রবণতা বেশি দেখা গেছে। ই-ক্যাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও দারাজের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) তাসফিন আলম কালবেলাকে বলেন, ‘গত বছরের ঈদের তুলনায় এবার অনলাইনের কেনাকাটা ক্ষেত্রবিশেষে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। দারাজেই তেমন কোনো মার্কেটিং ক্যাম্পেইন ছাড়া অর্গানিকভাবেই সিংহভাগ পণ্য বিক্রি হচ্ছে। তবে রোজার মাঝামাঝি সময়টা মার্চ মাসের শেষের দিকে ছিল। তখন বিকিকিনি কিছুটা কম ছিল। কিন্তু এপ্রিলের শুরুতে সবাই বেতন ও বোনাস পাওয়া শুরু করলে এই সময়টায় কেনাকাটার পরিমাণ বাড়ে।’
তিনি জানান, ‘রাজধানীর বাইরে থেকে এবার গ্রাহকদের অর্ডারের প্রবণতা বেশি। ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো বড় শহরগুলোর তুলনায় তৃতীয় সারির জেলা শহর এবং উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায় থেকেও ভালো অর্ডার এসেছে ই-কমার্সে। যেটা অনুমান করছি, জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায়, এসব অঞ্চলের বিক্রেতারা তুলনামূলক দামি পণ্যের মজুত করেনি। ফলে সাপ্লাই চেইনে একটি শূন্যতা দেখা দেয়, যা গ্রাহকরা ই-কমার্সের মাধ্যমে পূরণ করেন।’
অন্যদিকে ই-কমার্সে অর্ডার করা পণ্য গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিতে ব্যস্ত সময় পার করছে কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলো। ই-লজিস্টিক্স প্রতিষ্ঠান স্টেডফাস্টের প্রধান নির্বাহী কে এম রিদওয়ানুল বারী জিয়ন বলেন, ‘কুরিয়ারের প্রায় ২৫ শতাংশ স্টেডফাস্টের দখলে। ফলে গ্রাহকের প্রত্যাশার মাত্রা অনুভব করতে পারি। এজন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত গ্রাহকের কাছে পণ্য পৌঁছে দিতে স্টেডফাস্টের সব কর্মী নিরলসভাবে কাজ করছে যেন কাঙ্ক্ষিত পণ্য গ্রাহকের হাতে পৌঁছানোর মাধ্যমে তাদের ঈদের খুশি বাড়ানো যায়। প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দেড় লাখ পার্সেল ডেলেভারি করছে স্টেডফাস্ট।’