রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের কোম্পানিঘাট এলাকায় বস্তাবন্দি অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল হাজারীবাগের চামড়া ব্যবসায়ী মো. এখলাসের ক্ষতবিক্ষত লাশ। এর আগের দিন থেকে ৫০ বছর বয়সী ওই ব্যবসায়ী নিখোঁজ ছিলেন। পুলিশ ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ভ্যানচালক ও টেইলার্সকর্মীকে গ্রেপ্তারও করে। এরপরই রহস্যজনক কারণে থেমে যায় তদন্ত। গত ৩০ জুন তার লাশ উদ্ধার করা হয়। অবশ্য গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, এখলাস হত্যাকাণ্ডে জড়িত হাজারীবাগ এলাকার এক ছদ্মবেশী অপরাধী। তিনি এলাকায় প্রভাবশালী হিসেবে চিহ্নিত। পলাতক ওই মাস্টারমাইন্ড খুনের পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়ন এবং লাশ গুমেরও নির্দেশ দেন। তবে কাটআউট পদ্ধতিতে তিনি ১০ লাখ টাকায় খুনি ভাড়া করেন। হত্যা বাস্তবায়নের জন্য এখলাসের সাবেক স্ত্রীকেও যুক্ত করেন পরিকল্পনায়। ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি শুরু থেকেই ছায়াতদন্ত করে আসছিল ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, নিহত এখলাস কাঁচা চামড়ার পাশাপাশি জমির ব্যবসা করতেন। তার কাছ থেকে অন্তত ৪০ কোটি টাকার জমি হাতিয়ে নিতে ওই খুনের পরিকল্পনা করা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ কালবেলাকে বলেন, এখলাস হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ডকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এখলাসকে খুনের পরিকল্পনা করে তিনি ওমরা পালনে সৌদি চলে যান। দেশে ফিরে খুনিদের ভাড়া থেকে শুরু করে খুনের সব ছক একে ফের চলে যান পবিত্র হজ পালনের জন্য। সেখান থেকেই সবকিছু মনিটর করেন। খুব শিগগির মাস্টারমাইন্ডকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া হত্যায় সরাসরি জড়িতদেরও চিহ্নিত করা গেছে। ডিবি কর্মকর্তারা এখনো মাস্টারমাইন্ডের
নাম প্রকাশ না করলেও সূত্র বলছে, ওই ব্যক্তি হাজারীবাগ এলাকার একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি। সবাই তাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। তবে এক সময় বিএনপির প্রয়াত নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর শিষ্য ছিলেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ভিড়ে যান সরকারি দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে। অঢেল টাকার মালিক হওয়ায় তা দিয়েই ম্যানেজ করে চলেন। জমি ব্যবসার জের ধরে এর আগেও তার বিরুদ্ধে দুটি খুনের অভিযোগ রয়েছে। টর্চারসেলে নিয়ে অনেকের হাত-পা ভেঙেও দিয়েছেন। তবে টাকার জোরে রক্ষা পেয়েছেন সবসময়। ডিবির অপর এক কর্মকর্তা বলেন, পলাতক মাস্টারমাইন্ড এতটাই কৌশলী, খুনি ভাড়ার টাকাও তিনি পৌঁছে দেন এখলাসের মাধ্যমে। পূর্ব পরিচিত এখলাসকে এক ব্যক্তির কাছে ব্যবসার টাকা পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে তিনি সেই টাকা পাঠান। এর কয়েক দিন পর ওই ব্যক্তিরাই এখলাসকে খুন করেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, হাজারীবাগ এলাকায় সরকারিভাবে বেশকিছু জমি অধিগ্রহণ করার প্রক্রিয়া চলছে। ওই জমি ছিল এখলাসের অধীনে; কিন্তু পলাতক মাস্টারমাইন্ড নিজের জমি বলে অন্তত ৪০ কোটি টাকা মেরে দেওয়ার পরিকল্পনা করতে থাকেন। তখন এখলাস জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এর বিরুদ্ধে আবেদন করলে টাকা আটকে যায়। এরপরই এখলাসকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। ঘটনাটি ছায়াতদন্তে যুক্ত ডিবির লালবাগ বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান কালবেলাকে বলেন, সাধারণত কামরাঙ্গীরচর-হাজারীবাগে পারিবারিক কলহে নানা খুন হয়। এখলাস হত্যাকাণ্ডও সেভাবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলেছে। তবে ডিবির ছায়াতদন্তে রহস্য উদ্ঘাটন হয়। পলাতক মাস্টারমাইন্ডকে গ্রেপ্তার করা গেলে ওইসব এলাকার অপরাধ জগতের অনেক নেপথ্য ঘটনা বের হয়ে আসবে। এই কর্মকর্তা বলেন, পলাতক মাস্টারমাইন্ড এখলাসকে হত্যার আগে চার স্তরে পরিকল্পনা সাজান। নিজে আড়ালে সবকিছুর কলকাঠি নাড়লেও মাঝে আরও তিনটি স্তরে নিজের লোক দিয়ে কাজ করান। তাদের সবাইকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। ওই ঘটনায় মামলার বাদী ও নিহত এখলাসের ভাই মো. জুয়েল কালবেলাকে বলেন, জমির ব্যবসাই তার ভাইয়ের জন্য কাল হয়েছে বলে তারা শুরু থেকেই সন্দেহ করে আসছিলেন; কিন্তু থানা পুলিশ এক ভ্যানচালক, কামরাঙ্গীরচরের এক টেইলার্স মালিকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর থেমে যায়। থানায় যোগাযোগ করা হলেও পুলিশ বলছে, নতুন কোনো অগ্রগতি নেই। কামরাঙ্গীরচর থানার ওসি মোহাম্মদ মোস্তফা আনোয়ার গতকাল কালবেলাকে বলেন, ওই হত্যাকাণ্ডে তারা ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। এর মধ্যে তিনজন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। কী কারণে ওই হত্যাকাণ্ড, তা জানতে চাইলে ব্যস্ততা দেখিয়ে ওসি ফোন রেখে দেন।
মন্তব্য করুন