আগামী অর্থবছরের (২০২৪-২৫) বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩৮ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে, যা চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় ৩ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরে বাজেট বরাদ্দ ছিল ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। তবে বাজেট বরাদ্দের মধ্যে অধিকাংশ টাকাই ভর্তুকি বাবদ খরচ হবে। শেষ পর্যন্ত এই খাতের বাজেটের আকার ৪০ হাজার কোটি টাকা ছাড়াতে পারে বলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) ড. সৈয়দ মাসুম আহমেদ চৌধুরীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করা হলে তিনি জরুরি বৈঠকে থাকায় তা সম্ভব হয়নি।
সূত্র জানায়, পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ ক্ষমতা বাড়াতে এবার বরাদ্দ বেশি রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সর্বোচ্চ জোর দিচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত দেড় দশকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বেড়ে ২৭ হাজার ৩৬১ মেগাওয়াট (ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্যসহ) হয়েছে। সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন ৮ হাজার কিলোমিটার থেকে বেড়ে ১৪ হাজার ৬৭২ কিলোমিটার দাঁড়িয়েছে এবং বিতরণ লাইন ২ লাখ ৬০ হাজার কিলোমিটার থেকে বেড়ে ৬ লাখ ২৮ হাজার ৫৬২ কিলোমিটার হয়েছে।
এ ছাড়া নবায়নযোগ্য শক্তির মাধ্যমে মোট বিদ্যুতের ১০ শতাংশ উৎপাদনের জন্য অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে, এই জাতীয় বিদ্যুৎ উৎপাদনের বর্তমান ক্ষমতা প্রায় ৯০০ মেগাওয়াট। এ ছাড়া সরকার মোট ১ হাজার ১৪৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২৬টি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। সেইসঙ্গে প্রায় ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২ হাজার ৫৭০টি সৌর সেচ পাম্পের পাশাপাশি অফ-গ্রিড অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের জন্য ৬ মিলিয়ন সোলার হোম সিস্টেম এরই মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে।
অন্যদিকে ২০০৯ সাল থেকে প্রায় ১৯টি গ্যাস অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয়েছে এবং দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ক্ষমতা ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। সরকার ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি অনুসন্ধান কূপ খনন সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছে; যা দৈনিক ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন ক্ষমতা যুক্ত করতে পারে। একই সময়ে বেশ কয়েকটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে; যা এলএনজি স্টোরেজ রি-গ্যাসিফিকেশনের দৈনিক ক্ষমতা আড়াই হাজার মিলিয়ন ঘনফুট বাড়াবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ব্যয় দক্ষতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আন্তঃদেশীয় জ্বালানি পরিবহনের জন্য একটি আঞ্চলিক পাইপলাইন নির্মাণের মাধ্যমে আমদানি শুরু হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া শর্ত অনুযায়ী, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনা হবে। এ জন্য আগামী অর্থবছরে কয়েক দফা বিদ্যুতের দাম বাড়বে। একই সঙ্গে গ্যাসের দামও বাড়তে পারে।
জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পণ্যের দাম বাড়িয়ে এ খাতে ভর্তুকি কমানোর পরিকল্পনা করেছে সরকার। তার পরও আগামী অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি দেওয়া হবে বিদ্যুৎ খাতে। যার পরিমাণ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এই পরিমাণ ভর্তুকি কমাতে গত মাসে অর্থ বিভাগে অনুষ্ঠিত বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় দাম বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে, যা বাস্তবায়নে এরই মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগ ধাপে ধাপে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কাজটি শুরু করেছে।
বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বিষয়ে এক কর্মকর্তা জানান, আগামী অর্থবছরে ভর্তুকি ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, কারণ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের চাহিদার বিপরীতে অর্থ বিভাগ ভর্তুকির অর্থ নিয়মিত পরিশোধ করতে পারছে না। এরই মধ্যে ভর্তুকির অর্থ দেওয়ার ক্ষেত্রে ছয় মাস পিছিয়ে রয়েছে অর্থ বিভাগ। তাই ‘ক্যারি ওভার’ বা বকেয়া অর্থ পরিশোধের জন্য বিদ্যুতে এত টাকা ভর্তুকির জন্য বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।