অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম (বীরপ্রতীক) বলেছেন, সবার আগে বৈষম্য আর আধিপত্যবাদের আগ্রাসন থেকে আমাদের সেফ এক্সিট দরকার। আমি তো দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি। এ দেশ থেকে আমার আর যাওয়ার জায়গা কোথায়। আমাদের এখানেই থাকতে হবে।
রোববার (১২ অক্টোবর) বরিশালে মাসব্যাপী বিনামূল্যে টাইফয়েড টিকা কর্মসূচি উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
দুপুরে বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং বরিশাল জেলা স্কুলে পৃথকভাবে টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করেন উপদেষ্টা। দুটি অনুষ্ঠানেই প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন উপদেষ্টা ফারুক ই আজম।
ফারুক ই আজম বলেন, এতকাল ধরে আমাদের মধ্যে বৈষম্যের সৃষ্টি ছিল, আগ্রাসন ছিল। জনগণের অধিকার বঞ্চনার যে বিষয়গুলো ছিল সেগুলো থেকে জাতির সেফ এক্সিট হলে আমরা খুশি হব। সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি।
রোগ হওয়ার আগেই প্রতিরোধব্যবস্থা গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিবছর টাইফয়েড জ্বরে বহুমানুষ প্রাণ হারায়। তাই প্রতিষেধক হিসেবে সরকার প্রথমবারের মতো বিনামূল্যে শিশুদের টাইফয়েড টিকা কর্মসূচি আয়োজন করেছে। শুধু জন্মনিবন্ধন থাকলেই যে টিকা পাবে এমনটা নয়, যেসব শিশুদের জন্মনিবন্ধন নেই তারাও এই টিকা পাবেন।
দুটি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার রায়হান কাওছার, বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি মঞ্জুর মোর্শেদ আলম, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, দেশের শিশুদের টাইফয়েড থেকে সুরক্ষা দিতে ১২ অক্টোবর থেকে প্রথমবারের মতো টাইফয়েড টিকা ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে। মাসব্যাপী এ কর্মসূচিতে সরকার ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী ৪ কোটি ৯০ লাখ শিশু-কিশোর-কিশোরীকে বিনামূল্যে এই টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বরিশাল বিভাগে ২৬ লাখ ১৪ হাজার শিশুকে এই টিকার আওতায় আনা হবে। এর মধ্যে প্রথম ডোজে ৪ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত প্রতিরোধ করবে। ১২ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবং ১ নভেম্বর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে এ টিকা দেওয়া যাবে। পথশিশু থেকে শুরু করে কেউ টাইফয়েড টিকা সুবিধা থেকে বাদ যাবে না।
শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্কুল ও মাদ্রাসায় এ টিকা পাবে। এরপর ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী অন্যান্য শিশুরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিকা পাবে। শহরের পথশিশুদের টিকাদানের দায়িত্বে থাকবে বিভিন্ন এনজিও। ১২ অক্টোবর থেকে ক্যাম্পেইনের প্রথম ১০ দিন স্কুল ও মাদ্রাসায় ক্যাম্প করে টিকা দেওয়া হবে এবং পরবর্তী ৮দিন ইপিআই সেন্টারে টিকাদান কার্যক্রম চলবে। ইতোমধ্যে ১ কোটি ৬৮ লাখ শিশু নিবন্ধন করেছে এবং নিবন্ধন প্রক্রিয়া এখনো চলমান রয়েছে। জন্মসনদ না থাকলেও নিকটস্থ টিকাকেন্দ্রে স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়তায় নিবন্ধন করা যাবে।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট তৈরি করেছে এ টিকা, যা সরকার পেয়েছে আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন সহায়তা সংস্থা গ্যাভির সহযোগিতায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনপ্রাপ্ত এ টিকাটি সম্পূর্ণ নিরাপদ। ইতোমধ্যে নেপাল, পাকিস্তানসহ আটটি দেশে সফলভাবে ব্যবহার হয়েছে। কোনো দেশেই বড় ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
মন্তব্য করুন