ফিলিস্তিনের অধিকৃত গাজা উপত্যকার দক্ষিণে রাফাহ এলাকায় শিগগিরই স্থল অভিযান চালানো হবে বলে হুমকি দিয়ে আসছে ইসরায়েল। মিশর সীমান্তের কাছে রাফাহ এলাকায় ১০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে স্থল অভিযান চালালে ব্যাপক মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হবে বলে আগে থেকেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরায়েলকে হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছে। রোববার রাফাহর কাছাকাছি এলাকায় হামাসের হামলায় চার ইসরায়েলি সেনা নিহত হওয়ার পর রাফাহর পূর্বাঞ্চল থেকে সাধারণ মানুষকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। হামাসের ওই হামলায় আরও ১০ ইসরায়েলি সেনা আহত হয়েছে, যাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর। ইসরায়েলের এ নির্দেশের পর অনেক আতঙ্কিত মানুষ সে এলাকা ছাড়তেও শুরু করেছে। শিগগিরই সেখানে ইসরায়েলি স্থল অভিযান শুরু হবে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ঘটনায় ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটি অর্গানাইজেশনের মধ্যপ্রাচ্যের ডিরেক্টর গেরশন বাস্কিন বলেছেন, এ নির্দেশের অর্থ হতে পারে রাফাহতে ইসরায়েলি বাহিনীর স্থল অভিযানের সূচনা অথবা রোববারের হামাসের হামলার ঘটনার প্রতিক্রিয়া। তবে ইসরায়েলকে বুঝতে হবে, এ ধরনের যুদ্ধে কোনো সামরিক বিজয় হয় না। এদিকে, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জর্ডান, মিশরসহ বিভিন্ন দেশ রাফাহতে স্থল অভিযান চালানো থেকে বিরত থাকতে ইসরায়েলকে আহ্বান জানিয়েছে।
পশ্চিম জেরুজালেম থেকে গেরশন বাস্কিন আলজাজিরাকে বলেন, ইসরায়েলকে বুঝতে হবে যে, এরকম যুদ্ধে কোনো সামরিক বিজয় নেই। কারণ হামাস একটি ধারণা এবং আদর্শ যা সামরিক বাহিনী দ্বারা ধ্বংস করা যাবে না। অস্ত্র দিয়ে নয় বরং, হামাসের বাস্তবতা এবং গাজার বাস্তবতা মোকাবিলা করার জন্য রাজনৈতিক সমাধান থাকতে হবে; কিন্তু এটি করা হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থতার ফলে বিপজ্জনক পরিণতিসহ একটি ‘অচলাবস্থা’ দেখা দিয়েছে। যতদিন এ অচলাবস্থা থাকবে, ততদিন সাধারণ মানুষের প্রাণহানি ঘটবে। কিন্তু কোনো পক্ষেরই জয় হবে না। মাঝখানে একটি মানবিক বিপর্যয়ের ইতিহাস রচনা হবে। কাজেই যত তাড়াতাড়ি এ যুদ্ধ শেষ করা যায়, ততই সবার জন্য মঙ্গল।
উল্লেখ্য, গাজার দক্ষিণাঞ্চলে রাফাহ এলাকার কাছে রোববার হামাসের রকেট হামলায় চার ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়। আহত হয় আরও ১০ ইসরায়েলি সেনা। এরপর রাফাহতে ইসরায়েলি বাহিনীর পাল্টা বিমান হামলায় শিশুসহ ১৯ জন নিহত হয়। মিশরের রাজধানী কায়রোতে গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার মধ্যেই এই হামলার ঘটনা ঘটল। রাফাহতে অনেক হামাস যোদ্ধা লুকিয়ে আছে দাবি করে সেখানে হামলা চালাতে বদ্ধপরিকর ইসরায়েল। রোববারের এ ঘটনার পর রাফাহর পূর্বাঞ্চল থেকে সাধারণ মানুষকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। শিগগিরই সেখানে ইসরায়েলের স্থল অভিযান শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সেখানে উত্তর গাজা থেকে ১০ লাখের বেশি মানুষ এসে আশ্রয় নিয়েছেন। এসব মানুষের যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই। তাই সেখানে ইসরায়েল যদি স্থল অভিযান শুরু করে, তাহলে ব্যাপক মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হবে বলে আগে থেকেই সতর্ক করে দিয়েছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। এরই মধ্যে রাফাহর পূর্বাঞ্চল ছাড়তে শুরু করেছে অনেক মানুষ।
নারী, পুরুষ, শিশুসহ সব বয়সী মানুষ যে যেভাবে পারছে সে এলাকা ছাড়ছে।