বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় মনোনিবেশ বাড়াতে ও ভালো ফল অর্জনে উৎসাহ দিতে ২০০৫ সালে প্রবর্তন করা হয় ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক’ পুরস্কার। অনার্স স্তরে বিভিন্ন অনুষদে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করা শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয় এই পদক। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) প্রতি বছর এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক-২০১৮’ প্রদান করেন। কিন্তু গত বছর ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক-২০১৯’ ঘোষণার পর এক বছর পার হলেও মনোনীতরা এখনো পদক পাননি। এ নিয়ে হতাশ শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, গত বছরের ৩০ এপ্রিল ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক-২০১৯’ প্রাপ্তদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করে ইউজিসি। সেই তালিকায় দেশের ৩৭টি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭৮ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে ৩২টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছেন ১৭৩ জন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একজন করে মোট তিন শিক্ষার্থী এই স্বর্ণপদকের জন্য প্রাথমিকভাবে মনোনীত হন। তা ছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুজন শিক্ষার্থীও প্রাথমিকভাবে মনোনীত হন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মনোনীতদের কাছ থেকে ইউজিসি ২০২১ সালের ডিসেম্বরে প্রথম এবং ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সর্বশেষ তথ্যাদি সংগ্রহ করে। এরপর গত বছরের মার্চ থেকে স্বর্ণপদকের তালিকা ও অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এপ্রিলের শেষে তালিকা প্রকাশ হয়। পদক প্রদান অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য তারিখ ছিল ২১ মে। কিন্তু অজানা কারণে তা স্থগিত করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদক প্রদান অনুষ্ঠান স্থগিত করার পর গত বছরের শেষের দিকে মনোনীতরা ইউজিসিতে যান। তাদের জানানো হয়, জাতীয় নির্বাচনের কারণে এটি পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের পর পদক প্রদান অনুষ্ঠান হবে। নির্বাচন শেষ হওয়ার পর খোঁজ নিতে গেলে ইউজিসি জানায়, তারাও জানেন না কবে হবে এই অনুষ্ঠান।
জানতে চাইলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জান্নাতারা মুন কালবেলাকে বলেন, যখন বিভিন্ন জায়গায় চাকরির জন্য আবেদন করি, তখন ভাইভায় প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদক যে পেয়েছি তার সত্যতা চায়। কিন্তু দেখাতে পারি না। খুবই খারাপ লাগে। সম্প্রতি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজে শিক্ষক হিসেবে আবেদন করি। এর আগে গত এক বছরে চারটি জায়গায় আবেদন করে একই ঘটনার সম্মুখীন হয়েছি।
তিনি বলেন, আমার চাকরির বয়স শেষের দিকে। শিগগির না পেলে সম্মানসূচক পদকের এই তথ্য কোথাও ব্যবহার করতে পারব না। বর্তমানে একটি প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরি করি। সেখানে পদক দেখাতে না পারায় শুনতে হয়েছে আমি মিথ্যা বলছি। ওই ব্যাংকে জুলাইয়ে পদোন্নতির আবেদন করতে হবে। পদকটা থাকলে কিছুটা হলেও সম্মান যোগ হতো।
ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ওসমান আলী বলেন, আমরা ২০১৯ সালে পাস করে বের হয়েছি। এরপর ২০২৩ পর্যন্ত চারটি নিয়মিত ব্যাচ বেরিয়ে গেছে। চলতি বছরও একটি ব্যাচ বের হওয়ার পথে। কিন্তু পদক প্রদান অনুষ্ঠান না হওয়ায় মনোনীত প্রার্থীরা হতাশ। এর মধ্যে অনেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছেন। অনেকে দেশের বাইরে চলে গেছেন। শিক্ষকদের মধ্যে অনেকেই পিএইচডির জন্য দেশের বাইরে গেছেন। অনেকে শুধু এই পদকের জন্য অপেক্ষা করছেন।
জানতে চাইলে ইউজিসির রিসার্চ সাপোর্ট অ্যান্ড পাবলিকেশন ডিভিশনের পরিচালক ড. মো. ফখরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদক নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২০১৯ ও ২০২০ সালের পদক অনুষ্ঠান একসঙ্গে হবে। সে অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সিদ্ধান্ত দেবে। কেন এই কালক্ষেপণ—জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।