সাধারণত পাবলিক সার্ভিস কমিশন (বিসিএস), বিদেশে পড়তে যাওয়া কিংবা অন্য কোনো সম্মানজনক চাকরির দিকে ঝোঁক থাকে শিক্ষার্থীদের। তবে গতানুগতিক এসব পথে না হেঁটে অপেক্ষাকৃত চ্যালেঞ্জিং পথে হেঁটেই সফল হয়েছেন শফিকুল ইসলাম। তৈরি করেছেন লেদারপণ্যে দেশীয় ব্র্যান্ড ‘টপেক্স’। টপেক্সের পণ্যে এরই মধ্যে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে জায়গা করেছে বিদেশেও। প্রায় প্রতি মাসেই যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পণ্য পাঠাচ্ছেন শফিক। আর দেশের বাজারেও বিভিন্ন করপোরেটের কাজ করে গড়ে নিয়েছেন শক্ত অবস্থান।
২০১০ সালে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন শফিকুল ইসলাম। আত্মীয়স্বজনের সরকারি চাকরির প্রতি টান থাকলেও তার ঝোঁক ছিল ব্যবসার প্রতি। ২০১১ সালে দ্বিতীয় বর্ষে থাকাকালে কাছের এক বড় ভাইয়ের সমিতি থেকে ৫ হাজার টাকা লোন নিয়ে কম্পিউটার ব্যবসা দিয়ে শুরু হয় তার যাত্রা।
তবে এই যাত্রা সুখের ছিল না শফিকুলের। ২০১২ সালে ব্যবসায় লস খেয়ে কিছুটা থামকে যান। এরপর ২০১৫ সালে পাঁচ বন্ধু মিলে শুরু করেন ল্যাপটপ, পেন ড্রাইভ, ট্যাবের ব্যবসা। এই ব্যবসাও লাভের মুখ দেখেনি। আবারও ভাবতে থাকেন নতুন কিছু করার। এরপর shopnosale নামে ফেসবুক খুলে অনলাইনে হরেকরকম ঘড়ি বিক্রি শুরু করেন। এতে বেশ সারা পাওয়া যায়। পরিচিতি আসে শফিকুলের। তৈরি হয় কিছু নির্দিষ্ট ক্রেতাও। তবে বিভিন্ন মাল্টি ক্যাটাগরি কোম্পানি নিয়ে কাজ করে মন ভরছিল না তার।
করোনার সময় থেকে শুরু করেন লেদার প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ। পাশাপাশি এসবের আদ্যোপান্ত জানতে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন থেকে নেন তিন মাসের প্রশিক্ষণ। সেখানকার শিক্ষকদের সহায়তায় আরও এক বছরের প্রশিক্ষণ নেন হাজারীবাগের একটি লেদার ফ্যাক্টরিতে।
২০২১ সালের শুরুতে যাত্রা শুরু হয় তার টপেক্স ব্র্যান্ডের। ঢাকার নিউমার্কেটে অফিস নিয়ে টপেক্স ব্যান্ডের বেল্ট, ওয়ালেট, কিরিং, কার্ড হোল্ডার এবং ব্যাগের কাজ শুরু হয়। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তার। শুরুর দিকে পরিচিত বন্ধু শুভাকাঙ্ক্ষিরা ছিল তার ক্রেতা। খুচরা বিক্রির পাশাপাশি বিভিন্ন করপোরেট অর্ডার পাওয়া শুরু করে টপেক্স। প্রতি মাসে অন্তত চার থেকে পাঁচটি করপোরেট অর্ডার সরবরাহ করে এখন টপেক্স। এ ছাড়া পণ্যের গুণগত মান ভালো হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, দুবাই, জার্মানিসহ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে টপেক্স ব্র্যান্ডের পণ্য।
এ বিষয়ে তরুণ উদ্যোক্তা শফিকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, আমি গতানুগতিক পথে না হেঁটে ভিন্ন কিছু করতে চেয়েছিলাম। শুরু থেকেই কঠোর পরিশ্রম, কমিউনিকেশন এবং সততাকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করেছি। প্রথমদিকে ব্যর্থ হয়েছি। ভেঙে পড়েছি; কিন্তু হাল ছাড়িনি।
লেদার নিয়ে কাজ করার আগ্রহের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, লেদার উদীয়মান একটা সেক্টর। পোশাকের পরেই এর অবস্থান। এক্সপোর্ট করা যায়। তাছাড়া জেনুইন লেদার প্রোডাক্টে মানুষের ঝোঁক বেশি। যে লেদার নিয়ে স্বপ্ন দেখি, তার একটা সুন্দর নাম ঠিক করতে সময় লাগে ছয় মাস। কারণ সুন্দর অর্থবহ একটি নাম ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। পরে টপেক্স নামটা সিলেক্ট করি। হাজারীবাগে কাজ করার সময়ে আমি প্রায় ১০০ ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করি। পাশাপাশি দেশের নামকরা বিভিন্ন লেদার ব্র্যান্ডের শোরুম পরিদর্শন করে তাদের কোয়ালিটি এবং প্রাইস দেখে ধারণা নিই। শুরু থেকেই কোয়ালিটির বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছি আমি। কারণ আমি বিশ্বাস করি, ভালো কোয়ালিটির পণ্য দিলে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।