মুসলিম উম্মাহ শাবান মাস অতিক্রম করছে। মহিমান্বিত রমজানের সওগাত নিয়ে প্রতিদিন আকাশে উদয় হচ্ছে পবিত্র শাবান মাসের চাঁদ। এ মাস বিশেষ ফজিলতপূর্ণ। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘রজব আল্লাহর মাস, শাবান আমার মাস আর রমজান আমার উম্মতের মাস।’ (শুয়াবুল ইমান: ৩৫৩২)। তাই বলা হয়, ‘রজবে (ইবাদতের মাধ্যমে) শস্য বপন করো। শাবানে ফসল কাটো এবং রমজানে (অধিক আমলের মাধ্যমে) ফসল ঘরে তোলা।’ শাবান মাসের গুরুত্ব, মাহাত্ম্য ও তাৎপর্যের বিবেচনায় অধিক নফল ইবাদত-বন্দেগি করতেন মহানবী (সা.)।
চাঁদের হিসাব রাখা: শাবানের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল চাঁদের হিসাব রাখা। অনেক হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, নবীজি (সা.) পবিত্র শাবানের দিন-তারিখ গুরুত্বসহকারে হিসাব রাখতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘নবীজি (সা.) পবিত্র শাবানে দিন-তারিখ হিসাবের প্রতি এত অধিক লক্ষ রাখতেন, যা অন্য কোনো মাসে রাখতেন না।’ (আবু দাউদ: ১/৩১৮)। অন্য হাদিসে এসেছে, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রমজান মাস নির্ণয়ের জন্য শাবানের হিসাব রাখবে।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক : ৭৩০৩)। তাই শাবান ও শাবানের বাইরে চাঁদের হিসাব রাখা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত।
বেশি বেশি রোজা রাখা: নবীজি (সা.) মাহে রমজানের মর্যাদা রক্ষা এবং প্রস্তুতিস্বরূপ শাবান মাসে সবচেয়ে বেশি নফল রোজা রাখতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘শাবানের তুলনায় অন্য কোনো মাসে আমি নবীজি (সা.)-কে এত অধিক রোজা পালন করতে দেখিনি। তিনি শাবানের প্রায় পুরোটাই রোজা রাখতেন।’ (মুসলিম: ২৬৯১)। ইমাম ইবনে রজব হাম্বলি (রহ.) বলেন, ফরজ নামাজের আগে-পরে যেভাবে সুন্নত-নফল নামাজের বিধান রয়েছে, তেমনি রমজানের আগে-পরে শাবান ও শাওয়াল মাসে রোজা রাখার বিধান দেওয়া হয়েছে। তাই মূল ইবাদতের পাশাপাশি পূর্বাপরের নফল ইবাদতের প্রতিও যত্নবান হওয়া উচিত। (লাতায়েফুল মা’আরেফ: ১৮৮)
শবেবরাতে ইবাদত: শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে শবেবরাত বলা হয়। যাকে আরবিতে ‘লাইলাতুন নিসফি মিনাশ শাবান’ তথা অর্ধশাবানের রাত বলা হয়। মহিমান্বিত রাতগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। এ রাতে ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য ও গুনাহ মাফের সুযোগ হয়। বিখ্যাত সাহাবি মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহতায়ালা অর্ধশাবানের রাতে অর্থাৎ তার সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষপোষণকারী ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করেন। (ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫)। তাই আমাদের এই রাতে বেশি বেশি নফল ইবাদতে মগ্ন হওয়া উচিত। তবে রাতে নবীজি (সা.) বিশেষ পদ্ধতিতে কোনো ইবাদত করেননি এবং সাহাবায়ে কেরামকেও তা করার নির্দেশ দেননি। তাই আমাদের উচিত মনগড়া ইবাদত-আমল পরিহার করে যথাসম্ভব রাত্রি জাগরণের মাধ্যমে বেশি বেশি নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, তাওবা-ইস্তিগফার ও জিকির-আসকারে মশগুল থাকা এবং পরদিন রোজা রাখা।
মোট কথা, শাবান মাস রমজানের প্রস্তুতি নেওয়ার মাস। তাই বেশি বেশি নেক আমল ও পাপকাজ বর্জনের মাধ্যমে রমজানের প্রস্তুতি নিতে হবে। রমজানে রোজা রেখে সাধারণত ভারী কাজ করা মুশকিল। তাই বড় ধরনের ঝামেলা এখনই চুকিয়ে ফেলতে হবে। সর্বোপরি এই মাসে নামাজ, রোজা, জিকির, তেলাওয়াতসহ বেশি বেশি নফল ইবাদতের মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে; যেন মাহে রমজানের আমল স্বাচ্ছন্দ্য ও গতিশীলতার সঙ্গে হয়।
লেখক: মাদ্রাসা শিক্ষক