কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৭ জুন ২০২৫, ০৮:০৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি সিএমএসএমই খাত

দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি সিএমএসএমই খাত

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) খাত। অথচ এই খাতের জিডিপিতে অবদান এখনো উন্নত কিংবা প্রতিবেশী দেশের তুলনায় অনেক কম। বর্তমানে বাংলাদেশের জিডিপিতে সিএমএসএমই খাতের অবদান প্রায় ৩০ শতাংশ। একই খাত শ্রীলঙ্কার জিডিপিতে ৫২, চীনের ৬০, ভারতের ৩৭, ভিয়েতনামের ৪৫, জাপানের ৫০ ও পাকিস্তানের জিডিপিতে ৪০ শতাংশ অবদান রাখছে।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতকে গুরুত্ব দিতে জাতিসংঘের আহ্বানে ২০১৭ সাল থেকে এসএমই দিবস পালিত হয়ে আসছে। আজ ২৭ জুন বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) দিবস। বাংলাদেশে দিবসটি উদযাপন করছে শিল্প মন্ত্রণালয় ও এসএমই ফাউন্ডেশন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষায় সিএমএসএমই উদ্যোক্তার সংখ্যা ছিল ৭৮ লাখ ১৩ হাজারের বেশি। ২০২৪ সালের প্রাথমিক সমীক্ষায় মোট উদ্যোক্তার সংখ্যা ১ কোটি ১৮ লাখ বলে উল্লেখ থাকলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশ হয়নি। ঢাকার বাইরে ৭০ শতাংশ উদ্যোক্তা অবস্থান করলেও সেখানে এসএমই ফাউন্ডেশনের কোনো অফিস না থাকায় সরকারি সেবার বাইরে রয়ে গেছেন অধিকাংশ উদ্যোক্তা। এ অবস্থায় ২০০৬ সালে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠিত এসএমই ফাউন্ডেশন দেশের এসএমই খাতের উন্নয়নে নিরলস কাজ করে চলেছে।

গবেষণা সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের রিসার্চ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ এম হেলাল আহমেদ জনি কালবেলাকে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামোয় কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) খাত দীর্ঘদিন ধরেই উপেক্ষিত। অথচ এ খাতেই রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা, বিশাল কর্মসংস্থান, এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির চাবিকাঠি। এসএমই ফাউন্ডেশন নানা বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও নিজস্ব উদ্যোগে যা কিছু করছে, তা প্রশংসনীয়। তবে একটি দেশের জাতীয় এসএমই নীতিমালায় বরাদ্দ না থাকা, ঢাকার বাইরে সরকারি কোনো সেবা কাঠামো না থাকা—এটি এক প্রকার নীতিগত ব্যর্থতা।

তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো অনুমোদিত হয় জাতীয় এসএমই নীতিমালা। তবে বরাদ্দ না থাকায় ফাউন্ডেশনকে নিজস্ব অর্থেই বিভিন্ন কার্যক্রম চালাতে হয়। ২০২৪ সালের জুনে নীতিমালার মেয়াদ শেষে বর্তমানে ২০২৫ সালের জন্য নতুন নীতিমালা তৈরিতে কাজ করছে শিল্প মন্ত্রণালয়। এসএমই ফাউন্ডেশন ১০টি কৌশলগত লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে আইনি সুরক্ষা, সমস্যা চিহ্নিতকরণ, ক্লাস্টারভিত্তিক উন্নয়ন, নারী উদ্যোক্তাদের বিশেষ সহায়তা, অর্থায়ন সহজীকরণ, প্রযুক্তি ও আইসিটি উন্নয়ন এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংযোগ তৈরিসহ নানামুখী কার্যক্রম।

ফাউন্ডেশন সরাসরি ও ক্রেডিট হোলসেলিংয়ের মাধ্যমে ১১ হাজারের বেশি উদ্যোক্তাকে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ দিয়েছে। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা। কভিড-১৯ মোকাবিলায় ২০২০ সালে ৩ হাজার ১৩২ উদ্যোক্তাকে ৩০৫ কোটি টাকা এবং পরবর্তী সময়ে রিভলভিং তহবিল থেকে দ্বিতীয় দফায় ২৯৯ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়। বর্তমানে তৃতীয় দফায় ৪৫০ কোটি টাকা বিতরণ চলছে।

২০১৩ সালে ১৭৭টি এসএমই ক্লাস্টার চিহ্নিত করে এসএমই ফাউন্ডেশন। বর্তমানে প্রায় ১০০টি ক্লাস্টারে উদ্যোক্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ, ডিজাইন উন্নয়ন, বিপণন, হিট ট্রিটমেন্ট, ফাউন্ড্রি ও সারফেস ট্রিটমেন্ট ইত্যাদি সেবা দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি ক্লাস্টারে কমন ফ্যাসিলিটি সেন্টার (সিএফসি) স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে ফাউন্ডেশন প্রায় ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে ইনস্টিটিউট অব এসএমই ফাউন্ডেশন এবং বিজনেস ইনকিউবেশন সেন্টার গঠন করে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ পরিচালনা করছে। উদ্যোক্তা উন্নয়ন, টেকনোলজি বেজড এবং আইসিটিভিত্তিক প্রশিক্ষণ ছাড়াও বাজার ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ চলছে। ২০১২ সাল থেকে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা ও বিভাগীয় মেলায় প্রায় ৭ হাজার ৭০০ উদ্যোক্তা অংশগ্রহণ করেছেন। মেলাগুলোতে উদ্যোক্তারা পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রয়ের সুযোগ পেয়েছেন।

উদ্যোক্তাদের স্বীকৃতি দিতে শুরু করা হয়েছে ‘জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার’। এ পর্যন্ত ৩৩ জন নারী, ২৩ জন পুরুষ ও একজন তৃতীয় লিঙ্গের উদ্যোক্তা এই পুরস্কার পেয়েছেন। ফাউন্ডেশন এ পর্যন্ত লক্ষাধিক নারী উদ্যোক্তাকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সেবা দিয়েছে। বিশ্বব্যাংক, ইউএনডিপি, আইএলও, এশিয়া ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতায় নারী উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে নেওয়া হচ্ছে পৃথক কর্মসূচি।

বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় চালু হয়েছে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এসএমই ফাউন্ডেশনের সরবরাহ প্ল্যাটফর্ম। এর মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তারা করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোতে পণ্য সরবরাহের সুযোগ পাচ্ছেন। এ ছাড়া ‘অন্বেষা’ নামের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম নারী উদ্যোক্তাদের বাজার সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখছে।

এসএমই ফাউন্ডেশনের সহায়তায় ৭০টি প্রতিষ্ঠান এনার্জি ইফিসিয়েন্সি ও আইএসও ২২০০০-এর মতো আন্তর্জাতিক মান অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এর মধ্যে ৩১টি প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে আইএসও ২২০০০ সনদ পেয়েছে। ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত ৫৫৭টি বাজেট প্রস্তাবনার মধ্যে ৮৫টি প্রস্তাবনা সরকার গ্রহণ করেছে।

ফাউন্ডেশন এখন পর্যন্ত ৮টি এসএমই খাত ও নারী উদ্যোক্তা বিষয়ক দুটি গবেষণা ছাড়াও ক্লাস্টার ম্যাপিং, উন্নয়ন অভিজ্ঞতা সংবলিত ২০টি বই ও পাঁচটি আন্তর্জাতিক জার্নাল প্রকাশ করেছে। এখন পর্যন্ত ২৩টি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কনে দেখতে যাওয়ার পথে নৌকাডুবি : নিখোঁজ দুজনের মরদেহ উদ্ধার

থাইল্যান্ডের ক্লাবে আবার ভাইরাল ‘কাঁচা বাদাম গার্ল’ অঞ্জলি

চাকসুতে সমকামিতা সমর্থক ও মাদকাসক্তদের প্রার্থিতা বাতিলের দাবি

ঠাকুরগাঁওয়ের মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১

শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ১০ শয্যার এইচডিইউ উদ্বোধন

এবার তৌহিদ আফ্রিদি গ্রেপ্তার

রাকসুতে প্রথম দিনে ৫ জনের মনোনয়ন সংগ্রহ 

ফিলিস্তিনিদের ৩০০০ জলপাই গাছ উপড়ে ফেলল ইসরায়েলি বাহিনী

দেশে ১ কোটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে : টুকু

ভারতে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তা ১৪ দিনের জেল হেফাজতে

১০

বিয়ের আসরেই ১৫ লাখ টাকা খোয়ালেন বর

১১

ডিজিটাল ব্যাংক খুলতে লাগবে কমপক্ষে ৩০০ কোটি টাকা

১২

ইউল্যাবে অনুষ্ঠিত হলো বৃহত্তম মার্কেটিং সামিট 

১৩

থানার ব্যারাকে ধর্ষণের শিকার সেই নারী সতীনের সংসার করতে চান

১৪

খালেদা জিয়ার সঙ্গে ইসহাক দারের সাক্ষাতে রাজনৈতিক আলোচনা হয়নি : ডা. জাহিদ

১৫

‘পরিবেশ সংরক্ষণ করেই মাছ উৎপাদন করতে হবে’

১৬

সমাজের বরণীয়দের সব সময় স্মরণে রাখতে হবে : অপর্ণা রায়

১৭

পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান বাংলাদেশের

১৮

রাহুল গান্ধীকে চুমু যুবকের, অতঃপর...

১৯

৩৮ বছর পুরোনো যে রেকর্ড ভাঙলেন অস্ট্রেলিয়ান স্পিনার

২০
X