আসিফ পিনন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ১১ মে ২০২৪, ০৩:১৬ এএম
আপডেট : ১১ মে ২০২৪, ০৮:৫৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন

গবেষণাগার চালুর উদ্যোগ

গবেষণাগার চালুর উদ্যোগ

গরমে বাড়ে কিউলেক্স মশার প্রজনন। গরম ছাপিয়ে স্বস্তির বৃষ্টি হলেও অস্বস্তির কারণ এডিস মশা। এমন পরিস্থিতিতে নগরের মশা নিয়ন্ত্রণে কখনো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) গবেষকদের দ্বারস্থ হতে হয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে (চসিক)। কখনো ভরসা নতুন ওষুধ। কয়েক বছর ধরে এভাবে চললেও মশা নিধনের সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। চলতি মৌসুমে সমন্বিত মশক নিধন কার্যক্রমের পাশাপাশি ঘোষণা এসেছে একটি গবেষণাগার চালুর।

দীর্ঘ ১৮ বছর পর ২০২২ সালে সক্রিয় করা হয় চসিকের মশক নিয়ন্ত্রণ শাখা। এ লক্ষ্যে ‘ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা’ পদে একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ২০০৪ সাল থেকে শূন্য ছিল পদটি। এর আগে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালিত হতো পরিচ্ছন্ন শাখার মাধ্যমে। এখন মশক নিধনের গৎবাঁধা পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আসতে চায় সংস্থাটি। নতুন করে চসিকের মশক গবেষণাগার চালুর কথা ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা। মশার নমুনা সংগ্রহের জন্য চসিকের ছয়টি পদ থাকলেও সেগুলো এখনো শূন্য। গবেষণাগার চালুর আগেই এসব পদে জনবল নিয়োগের কথা ভাবছে সংস্থাটি। মশক গবেষণাগার চালু হলে নমুনা সংগ্রহকারীরা বিভিন্ন এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে এনে মশার ঘনত্ব-ধরনসহ বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণ করবে। সেই পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট অনুসারেই চলবে এলাকাভিত্তিক মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম। পাশাপাশি খণ্ডকালীন কীটতত্ত্ববিদ নিয়োগ দেওয়া যায় কি না, সেই আলোচনাও চলছে।

চসিকের কয়েকজন কাউন্সিলর কালবেলাকে বলেন, এডিস কিংবা অন্য মশা নিয়ন্ত্রণে গৎবাঁধা নিয়মে ওষুধ ছিটানো হয়। সব এলাকাতেই সমানভাবে ওষুধ ছিটিয়ে দেওয়া হয়, অথচ সব এলাকাতেই মশার ঘনত্ব একই রকম নয়। মশার ধরনও একই রকম নয়। তাই এসব নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে।

চসিক মেয়র মোহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরী জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মশার জীবনচক্রও বদলাচ্ছে। এখন যে ওষুধ ছিটানো হবে, তাতে কিছু প্রজাতির মশার হয়তো প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে। ৪১টি ওয়ার্ডেই নিয়মমাফিক ওষুধ ছিটানোর পরও দেখা যাচ্ছে হালিশহরসহ কয়েকটি ওয়ার্ডে মশা কমছে না। অথচ একই ওষুধে অন্যান্য এলাকায় মশা মরছে। তিনি বলেন, কেন মশা মরছে না, এজন্য মশা নিয়ন্ত্রণের বিজ্ঞানভিত্তিক উপায় জানতে গবেষণার জন্য পরীক্ষাগার স্থাপন করা হবে। এটি সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী কার্যালয়ের অষ্টমতলায় চালু করা হবে।

চসিক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জনবল সংকট, অপর্যাপ্ত ওষুধ, ওষুধ ছিটানোর ভ্রান্ত ধারণা, জনসচেতনতার অভাবসহ বিভিন্ন কারণে চট্টগ্রাম সিটি এলাকায় মশক নিধনে গতি আসছে না। এবার সংকট ও ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করেই সাজানো হয়েছে মশক নিধন পরিকল্পনা। এরই মধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে মশার ওষুধ। চলতি অর্থবছরে ২০ হাজার লিটার এডাল্ট্রিসাইড (পূর্ণাঙ্গ মশা মারার ওষুধ), ৩ হাজার লিটার লার্ভিসাইড (লার্ভা ধ্বংসের ওষুধ) এবং ১৬ হাজার লিটার কালো তেল সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব ওষুধ ছিটানোর জন্য নতুন করে যুক্ত হয়েছেন ২০০ স্প্রেম্যান এবং ফগারম্যান। সবমিলিয়ে এবার প্রায় ৩৭৫ পরিচ্ছন্নতাকর্মী মশক নিধন কার্যক্রমে নিবেদিত থাকবেন। পাশাপাশি ৬০টি ফগার মেশিন যুক্ত হয়েছে এবারের ডেঙ্গু মৌসুমের আগে। আগে ফগার মেশিনের স্বল্পতা থাকলেও সেই সংকট কেটে গেছে। সবমিলিয়ে মোট ফগার মেশিনের সংখ্যা এখন ২১০টি। পাশাপাশি অচিরেই মশক গবেষণাগার চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি। এসব বিষয় নিয়ে চলতি মাসেই ‘এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে’ চসিকের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের স্টিয়ারিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে জোরালো আলোচনা হবে চসিকের বিভাগগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের বিষয়টি। তারপর এসব সিদ্ধান্ত চসিকের সাধারণ সভায় আলোচনায় হবে। সেখানে সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়নের অনুমতি পেলেই মশক নিধনে নতুন গতি ফিরবে।

চসিকের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. সরফুল ইসলাম মাহি কালবেলাকে বলেন, মাঝখানে আমাদের কিছু ওষুধের স্বল্পতা ছিল। এখন সেই ঘাটতি নেই। চলতি অর্থবছরে পর্যাপ্ত ওষুধ-যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হয়েছে। জনবলের ঘাটতিও নেই।

তিনি আরও বলেন, এসব সংকট কাটানোর পাশাপাশি মশক নিয়ন্ত্রণে এবার তিনটি ধাপের কার্যক্রমের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম। এরপর ওষুধ ছিটানোর জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডের মশার প্রজননক্ষেত্রগুলো যাচাই-বাছাই করে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।

চসিকের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের স্টিয়ারিং কমিটির সভাপতি ও কাউন্সিলর মোবারক আলী কালবেলাকে বলেন, মশক নিধনের পূর্বশর্ত হলো বাসিন্দাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি। পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম এবং মশার ওষুধ ছিটানোর বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আমরা এগোচ্ছি। আশা করছি, সবার সহযোগিতায় এ তিনটি সমন্বিত কার্যক্রম জোরদার হলে মশক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে। এরই মধ্যে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী মশক গবেষণাগার চালুর ঘোষণা দিয়েছেন। এটা চালু হলে মশক নিয়ন্ত্রণে আরও গতি আসবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

তারের পর এবার চুরি হলো সেতুর রিফ্লেক্টর লাইট

‘এবার আমাদের পালা’ স্বরূপ আচরণ উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে : টিআইবি

ভূমি অধিগ্রহণে আটকে আছে ইউলুপ, ইউটার্নে মরছে মানুষ!

কনে দেখতে যাওয়ার পথে নৌকাডুবি : নিখোঁজ দুজনের মরদেহ উদ্ধার

থাইল্যান্ডের ক্লাবে আবার ভাইরাল ‘কাঁচা বাদাম গার্ল’ অঞ্জলি

চাকসুতে সমকামিতা সমর্থক ও মাদকাসক্তদের প্রার্থিতা বাতিলের দাবি

ঠাকুরগাঁওয়ের মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১

শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ১০ শয্যার এইচডিইউ উদ্বোধন

এবার তৌহিদ আফ্রিদি গ্রেপ্তার

রাকসুতে প্রথম দিনে ৫ জনের মনোনয়ন সংগ্রহ 

১০

ফিলিস্তিনিদের ৩০০০ জলপাই গাছ উপড়ে ফেলল ইসরায়েলি বাহিনী

১১

দেশে ১ কোটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে : টুকু

১২

ভারতে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তা ১৪ দিনের জেল হেফাজতে

১৩

বিয়ের আসরেই ১৫ লাখ টাকা খোয়ালেন বর

১৪

ডিজিটাল ব্যাংক খুলতে লাগবে কমপক্ষে ৩০০ কোটি টাকা

১৫

ইউল্যাবে অনুষ্ঠিত হলো বৃহত্তম মার্কেটিং সামিট 

১৬

থানার ব্যারাকে ধর্ষণের শিকার সেই নারী সতীনের সংসার করতে চান

১৭

খালেদা জিয়ার সঙ্গে ইসহাক দারের সাক্ষাতে রাজনৈতিক আলোচনা হয়নি : ডা. জাহিদ

১৮

‘পরিবেশ সংরক্ষণ করেই মাছ উৎপাদন করতে হবে’

১৯

সমাজের বরণীয়দের সব সময় স্মরণে রাখতে হবে : অপর্ণা রায়

২০
X