ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন
প্রকাশ : ২৩ জুন ২০২৪, ০২:২৯ এএম
আপডেট : ২৩ জুন ২০২৪, ০৯:০৮ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

অবদানে কৃতিধন্য একটি দল

ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন
অবদানে কৃতিধন্য একটি দল

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বাঙালির ভাগ্য ফেরানোর এবং দিনবদলের দল। বাঙালির ভাগ্য ফিরেছিল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে; আর দিনবদল হয়েছে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে (অবশ্য যার সূচনা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে; তার কন্যা অসমাপ্ত জীবনের পিতার অসমাপ্ত স্বপ্নের রূপায়ণ করছেন)। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর হাতেখড়ি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলটির জন্মলগ্নে (২৩ জুন, ১৯৪৯)। ১৯৫৩-তে তিনি সাধারণ সম্পাদক; ১৯৬৬ তে সভাপতি, যা বিস্তৃত হয়েছিল ১৯৭৪ পর্যন্ত, যখন বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিজেকে দল থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়েছিলেন। অবশ্য তার আগেও ১৯৫৭-তে প্রাদেশিক সরকারের মন্ত্রিত্বের পদে ইস্তফা দিয়ে সাধারণ সম্পাদকের কাজে মনোনিবেশ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু দলীয় দায়িত্বে ওপরে উঠেছিলেন ধাপে ধাপে। বিপরীতে কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বের শুরু দলের শীর্ষ থেকে; ১৯৮১-এর ১৭ মে সামরিক শাসনে বিপন্ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে নির্বাসন থেকে দেশে ফিরেছিলেন বৈরী পরিবেশে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। দেশের প্রাচীনতম, বৃহত্তম এবং তৃণমূললগ্ন দলটির বয়সকাল সাত দশকের বেশি হলো; এ সময়ের সিংহভাগ এ পিতা-পুত্রীর নেতৃত্ব দলের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং একই সঙ্গে নির্দেশিত হয়েছে দেশ ও মানুষের এগিয়ে চলার পথ।

বাঙালিলগ্ন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বাঙালিলগ্ন আওয়ামী লীগের মিথস্ক্রিয়ায় যে রসায়ন তৈরি হয়েছিল, তার জারক রসে সিঞ্চিত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়েছিল। আসলে আওয়ামী লীগের জন্মক্ষণ ছিল ইতিহাসের মাহেন্দ্রক্ষণ, যে ক্ষণে নির্ধারিত হয়েছিল বাঙালির স্বাধীনতার গতিপথ। কাজেই আমরা বলি, বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ, আওয়ামী লীগ মানেই স্বাধীনতা।

অন্নদাশংকর রায়কে বলা কথা অনুসারে বঙ্গবন্ধু ১৯৪৭ থেকেই স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন। তিনি পাকিস্তান হওয়ার পর ইসলামিয়া কলেজের সিরাজউদ্দৌলা হোস্টেলে পূর্ব বাংলার কিছু মানুষ নিয়ে এক আলোচনা সভা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু যা বলেছিলেন তা সভায় উপস্থিত প্রয়াত যশস্বী সাংবাদিক কে. জি. মুস্তফা নূহ-উল-আলম লেনিনকে ১৯৯৮-তে এভাবে বলেছিলেন, “মিয়ারা ঢাকায় যাইবা না? শোন, মিয়ারা ঢাকায় গিয়া কাম শুরু করতে হইব। মাউরাদের সাথে বেশি দিন থাকা যাইব না। এখন থিকাই প্রস্তুতি নিতে হইব।”

১৯৭২-এ ছাত্রলীগের সম্মেলনে দেওয়া ভাষণের এক জায়গায় বঙ্গবন্ধু বললেন, “কলকাতা থেকে বিএ পাস করে এলাম ঢাকায়। ঢাকায় এসে রাজনৈতিক পরিবেশ দেখে বুঝতে বাকি রইল না যে, বাঙালির জাত শেষ হয়ে গেছে। সেই দিন শপথ নিলাম, বাংলার মানুষকে মুক্ত করতে হবে। ১৯৪৭ সাল হলো আমাদের সংগ্রামের সূচনা।”

১৯৪৮-এর ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক সংগ্রামের সূচনা। অবশ্য ভাষা

আন্দোলন ছিল বাঙালির বাঙালিত্ব অর্জনের প্রথম সংগ্রাম, যার সূচনা হয়েছিল আগের বছর। এরপর থেকে একাত্তর পর্যন্ত লাগাতার সফল সংগ্রাম, যে সাফল্যের গাথার রচয়িতা ছিল ছাত্রলীগ (ছাত্র ইউনিয়নও ছিল) এবং আওয়ামী লীগ। ’৫৪-এর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের প্রধান রূপকার ছিল আওয়ামী লীগ। ’৬৬-এর ছয় দফা—বাঙালির মুক্তিসনদ; প্রথমত ছিল বঙ্গবন্ধুর নিজস্ব প্রকল্প, পরে তা আওয়ামী লীগের হয়। এ ছয় দফা আন্দোলন বাঙালিকে স্বাধীনতামুখী করে। ছয় দফা যে আসলে স্বাধীনতার এক দফা, সে কথা তো বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদকে বলেছিলেন। ’৭০-এর নির্বাচনে নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পেয়ে আওয়ামী লীগ পৌঁছেছিল এক অনন্য উচ্চতায়। কিন্তু পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ রাজনীতির পথে না এগোনোর ফলে মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য হয়, যার নেতৃত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগের জাতীয় চার নেতা—তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামান।

সংগ্রামের/সমরের সফল সমাপ্তি হলো ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১; মাউরাদের সঙ্গে থাকার সময় শেষ হলো ২৪ বছর ৪ মাস ৩ দিন পর। পাকিস্তানি কারাগার থেকে ফিরে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ বঙ্গবন্ধু আত্মতৃপ্তি নিয়ে বললেন, “আমার জীবনের সাধ পূর্ণ হয়েছে। বাংলাদেশ আজ স্বাধীন।” আরও নির্দেশ দিলেন, “বাংলাদেশ হবে একটি আদর্শ রাষ্ট্র।” সংবিধান দিয়ে (১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭২) জাতিকে রোডম্যাপ দিলেন। রোডম্যাপে বলা হলো, স্তম্ভসম চার মূলনীতির কথা—গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ। ১৯৭২-এর ৯ মে রাজশাহীতে এক ভাষণে বঙ্গবন্ধু আদর্শ রাষ্ট্রের রূপরেখা তুলে ধরেন এভাবে, “আমি কী চাই? আমি চাই, বাংলার মানুষ পেট ভরে খাক। আমি কী চাই? আমার বাংলার বেকার কাজ পাক। আমি কী চাই? আমার বাংলার মানুষ সুখী হোক। আমি কী চাই? আমার বাংলার মানুষ হেসেখেলে বেড়াক। আমি কী চাই? আমার সোনার বাংলার মানুষ আবার প্রাণ ভরে হাসুক।”

বঙ্গবন্ধু এ চাওয়াগুলো পাওয়াতে রূপান্তরিত হওয়ার পথে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছিল বলেই বাকশাল হয়েছিল। বাকশাল এক দল ছিল না, ছিল অভিন্ন জাতীয় মঞ্চ; যেখানে আওয়ামী লীগ লীন হয়ে ছিল, বিলুপ্ত নয়। ১৯৭৫-এর ৬ জুন বাকশাল গঠনতন্ত্র ঘোষিত হয়, যা পড়লে বোঝা যায়, বাকশাল কর্মসূচি রূপায়িত হলে বাংলাদেশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন অনিবার্য হতো। কিন্তু বাকশাল অপূর্ণ থেকে যায়, অপূর্ণ থেকে যায় এর স্রষ্টার জীবনও।

বঙ্গবন্ধুর অপূর্ণ চাওয়াগুলোকে পাওয়ায় পরিণত করছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনার সাহসী, মানবিক এবং উদ্ভাবনী নেতৃত্বে এ করোনাকালেও বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাওয়ার তকমা পেয়ে গেছে। উপরন্তু এ নেতৃত্বে ’৮১-এর পর আওয়ামী লীগ টিকে গেছে এবং ক্ষমতাসীন হয়েছে (১৯৯৬-২০০১ এবং ২০০৮- )।

এক দীর্ঘ সময়ে বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আওয়ামী লীগ আজও টিকে আছে। দলটি তার আবর্তন-বিবর্তনে নেতৃত্বের বিচারে পিতা-পুত্রীর কাছে ঋণী। তারাই দল ও দেশকে পথ দেখিয়েছেন। কাজেই দেশ ও জনগণের জন্য দলটির ইতিহাস-স্বীকৃত যে অবদান, তা তো নেতৃত্বের কারণে। সুতরাং আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনা একাকার।

লেখক: বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি)

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গাজা যুদ্ধবিরতিতে উভয়পক্ষ একমত হয়েছে : ট্রাম্প

পুলিশের কাছ থেকে মাদক ব্যবসায়ীকে ছিনতাই, এসআইসহ আহত ২

রাজধানীতে আজ কোথায় কী

বিক্ষোভে অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচলেন ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট

বৃহস্পতিবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

০৯ অক্টোবর : আজকের নামাজের সময়সূচি

একাধিক দেশের পাসপোর্টধারীরাই ‘সেফ এক্সিটের’ তালিকা করে: আসিফ মাহমুদ

শহিদুল আলমের মুক্তির জন্য সোচ্চার হতে হবে : তাসলিমা আখতার

স্থানীয় সমস্যা সমাধানে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস আনোয়ারুজ্জামানের

সবাইকে নিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব: নীরব

১০

‘হামজা আমার দলে হলে বেঞ্চেই বসে থাকত’

১১

লন্ডনে টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়রের সঙ্গে বাসস চেয়ারম্যানের মতবিনিময়

১২

আফগানদের কাছে হারার পর যা বললেন মিরাজ

১৩

অল্প পুঁজি নিয়ে আফগানদের সাথে পারল না বাংলাদেশ

১৪

‘দেশের সার্বিক উন্নয়নে প্রবীণদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হবে’

১৫

রাবেতাতুল ওয়ায়েজীনের সঙ্গে সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত পরিষদের মতবিনিময়

১৬

ডিএনসিসি এলাকায় টাইফয়েডের টিকা পাবে ১৩ লাখ শিশু

১৭

অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে রেমিট্যান্স এসেছে ৬৯ কোটি ডলার

১৮

৭ বছর পর শহীদ জিয়ার মাজার জিয়ারত করলেন খালেদা জিয়া

১৯

ফার্মগেটে ককটেল বিস্ফোরণ

২০
X