‘ট্রাস্ট মি... ওয়ান লাস্ট টাইম’—ইথান হান্টের এই আকুতিতে কি সত্যিই তার ওপর ভরসা করা যায়? অবশ্যই যায়। কারণ ইথান হান্ট আর কেউ নন—টম ক্রুজ নিজেই। আর টম ক্রুজ মানেই ধুন্ধুমার অ্যাকশন, কখনো শততলা বিল্ডিং থেকে লাফিয়ে পড়া বা উড়োজাহাজের বাইরে ঝুলে থাকা। কখনো পাহাড়ের খাঁজে বাদুড় ঝোলা বা ফাইটার নিয়ে মাঝ আকাশে দুরন্ত পদচারণা।
গ্র্যাভিটিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দমবন্ধ করা স্টান্ট দিয়ে হলিউডের পর্দা কাঁপিয়ে যাচ্ছেন ৬২ বছরের ‘টগবগে যুবক’ টম ক্রুজ। ২১ মে বিশ্বব্যাপী মুক্তি পেয়েছে টম ক্রুজ অভিনীত বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজির ‘মিশন ইমপসিবল: দ্য ফাইনাল রেকনিং’। এটি ফ্র্যাঞ্চাইজির আট নম্বর কিস্তি। আর মুক্তির মাত্র এক সপ্তাহে বক্স অফিসে ২০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি জমা হয়ে গেছে।
৪০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত টম ক্রুজের ২ ঘণ্টা ৫০ মিনিটের ধামাকায় মুগ্ধ সিনেপ্রেমী হতে শুরু করে সমালোচকরাও। সিনেমাটি মুক্তির পর থেকেই চলছে উত্তেজনার জোয়ার। স্টান্ট, সাসপেন্স আর স্মৃতিমাখা রোমাঞ্চ—সব মিলিয়ে যেন এক নস্টালজিয়ার উথালপাতাল ঝড়!
রুদ্ধশ্বাস অভিযান আর প্রযুক্তিনির্ভর গুপ্তচরবৃত্তির নিখুঁত মিশেলে গড়া ‘মিশন ইমপসিবল’ সিরিজের যাত্রা শুরু ১৯৯৬ সালে। টম ক্রুজ অভিনীত এই সিরিজের প্রতিটি সিনেমাই বিশ্বজুড়ে বক্স অফিসে ঝড় তুলেছে। তিন দশকের ক্লাবে পা দেওয়া এই ফ্র্যাঞ্চাইজির ‘দ্য ফাইনাল রেকনিং’য়ের সবচেয়ে বিপজ্জনক দৃশ্য ‘সাবমেরিন ডাইভ’।
টম ক্রুজ বরাবরই নিজের স্টান্ট নিজেই করতে পছন্দ করেন। আর এর জন্য তাকে বেশ কয়েকবার গুরুতর ইনজুরিও হতে হয়েছে। দ্য ফাইনাল রেকনিংয়ে ক্রুজকে দেখা যায় একটি বাইপ্লেনের ওপরে—সেটি আবার ঘণ্টায় ১২০-১৩০ মাইল গতিতে উড়ছিল। সেই তীব্র গতির বাতাসে নিঃশ্বাস নেওয়াই হয়ে উঠেছিল চ্যালেঞ্জিং। এই পর্বের প্রথম অংশ ‘মিশন ইমপসিবল: ডেড রেকনিংয়ে’ই বোঝা গিয়েছিল, কোন পথে এগোচ্ছে চিত্রনাট্য। পরিচালক ক্রিস্টোফার ম্যাকোয়ার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এনটিটির সেই আতঙ্ক আর থ্রিল দর্শকহৃদয়ে ধরাতে পেরেছেন আইম্যাক্স শুটিং আর অনবদ্য অ্যাকশন সিকোয়েন্সের মাধ্যমে।
পুরো বিশ্বকে কবজা করতে চাওয়া এনটিটির পরিকল্পনাকারী গ্যাব্রিয়েল, তার অতীত এবং সিনেমাটির চিত্রনাট্যে মোক্ষম টুইস্টের মাধ্যমে ‘র্যাবিটস ফুট’ ফিরিয়ে নিয়ে যাবে ফ্র্যাঞ্চাইজির আগের খণ্ডে। সেখান থেকে সিনেমার ফ্রেম চলে গেছে ১৯৯৬ সালের প্রথম পর্বে। রহস্য যে সেখানেই লুকিয়ে, সেটি সিনেমা না দেখে বোঝা যাবে না। বিস্ফোরণে তলিয়ে যাওয়া রুশ সাবমেরিন সেভাস্তোপোলেই এনটিটির মূল রহস্যের সমাধান রয়েছে। ইথান হান্ট দুঃসাহসিকতার সঙ্গেই সেই অতল গভীরে যান আর ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেন বিশ্বকে।
সিনেমায় টম ক্রুজ ছাড়াও দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন ভিং রেমেস, সাইমন পেগ, রেবেকা ফার্গুসন, ভেনেসা কিরবি, হেইলি অ্যাটওয়েল, পম ক্লেমেন্টিফ, শিয়া হুইঘাম, এসাই মোরালেস, হেনরি চের্নি প্রমুখ। অনবদ্য ক্যামেরার কারিকুরি, প্রযুক্তির খেলা এবং রোম খাড়া করে দেওয়া স্টান্ট ছাড়া মিশন ইমপসিবল অসম্পূর্ণই থেকে যায়। গ্যাব্রিয়েলের পিছু নিয়ে বাইপ্লেনে ঝুলে ইথানের উড়ান বুঝিয়েছে, ৬২ বছরের এই যুবকই পারেন ইমপসিবলকে পসিবল করতে। যদিও মিশনকে পসিবল করতে প্রতিটি পর্বেই তাকে হারাতে হয়েছে ভালোবাসার কাউকে না কাউকে। সিনেমায় টম ক্রুজের অভিব্যক্তিতে ফুটে উঠেছে সেই হারানোর যন্ত্রণা।
সিনেমাটি মুক্তির পর ভ্যারাইটিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম টম ক্রুজের পারফরম্যান্সের প্রশংসা করেছে অকাতরভাবে। কোনো প্রোটোকল না মানা, নিজের ইন্সটিংক্ট শুনেই মিশন সফল করা টম ক্রুজ পরিণত হয়েছেন একটা ব্র্যান্ডে। আর এই ব্র্যান্ডের শেষ হয়তো এখানেই। ফাইনাল রেকনিং—এনটিটির হয়ে গোটা বিশ্বকে কবজা করতে চাওয়া গ্যাব্রিয়েলের সঙ্গে বেপরোয়া এজেন্ট ইথান হান্টের (টম ক্রুজ) সেই থ্রিলার না দেখলে অধরাই থেকে যাবে অনেক কিছু। আর এটাই সম্ভবত হতে যাচ্ছে মিশন ইমপসিবলে টম ক্রুজের শেষ মিশন।
মন্তব্য করুন