

‘হাওয়া’ সিনেমার ‘গুলতি’ চরিত্র দিয়ে দর্শকের হৃদয়ে ঝড় তুলেছিলেন নাজিফা তুষি। সেই সাফল্যের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার তিনি ফিরছেন মেজবাউর রহমান সুমনের দ্বিতীয় সিনেমা ‘রইদ’ নিয়ে। ট্রেলারেই তুষির লুক দেখে চমকে গেছেন দর্শক। তবে পর্দায় এই ‘অন্য তুষি’ হয়ে ওঠার পেছনের গল্পটা মোটেও সহজ ছিল না। চরিত্রের প্রয়োজনে নিজেকে ভেঙেচুরে একাকার করেছেন, নিয়েছেন অমানবিক সব প্রস্তুতি। এটি নির্মাণ করেছেন মেজবাউর রহমান সুমন।
নামহীন এক চরিত্র ‘রইদ’ সিনেমায় তুষি যে চরিত্রটি করেছেন, তার কোনো নাম নেই। বিষয়টি উল্লেখ করে তুষি বলেন, “এই প্রথম আমি এমন কোনো চরিত্র করলাম, যার কোনো নাম নেই। চরিত্রটি বিশ্বাস করা এবং ধারণ করা ‘হাওয়া’র চেয়েও অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল। নিজের একঘেয়ে জীবনযাপন থেকে ছুটি নিয়ে আমি অন্য চরিত্রে ঢুকে যেতে চেয়েছি। তাই প্রস্তুতিটাও ছিল কঠিন।”
চামড়া পোড়াতে সর্ষের তেল, বর্জন প্রসাধন চরিত্রের প্রয়োজনে নিজের গায়ের রং ও গ্ল্যামার বিসর্জন দিতে হয়েছে তুষিকে। তিনি বলেন, “টানা ছয় মাস আমি শ্যাম্পু, সাবান বা কোনো প্রসাধন ব্যবহার করিনি। শুধু পানি দিয়ে মুখ ধুতাম। কারণ সাবান দিলে ত্বক পরিষ্কার হয়ে যায়, অথচ আমি চাচ্ছিলাম ত্বকের পোরসগুলো বের হোক, মেছতা পড়ুক। গায়ে সর্ষের তেল মেখে রোদে দাঁড়িয়ে থাকতাম, যাতে চামড়া পুড়ে কয়লা হয়ে যায়। কারণ, মেকআপ দিয়ে এই লুক আনা সম্ভব ছিল না। বৃষ্টি বা ঘামে মেকআপ উঠে যেত, তাই রিয়েল স্কিন টোনটাই দরকার ছিল।”
লেবারের কাজ ও পুরোনো কাপড় শুটিংয়ের আগে লোকেশনের স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে মিশে যেতে কঠোর পরিশ্রম করেছেন তুষি। তিনি বলেন, “শুটিং স্পটে আমরা মাটির কাজ করতাম, টিলার ওপর উঠতাম, গাছ লাগাতাম—একদম লেবারের মতো খাটতাম। স্থানীয়দের মতো লুক আনতে ‘টুকের বাজার’ থেকে মানুষের ব্যবহার করা পুরোনো কাপড় কিনে পরতাম। উদ্দেশ্য ছিল একটাই—যাতে আমাকে আলাদা করে শহরের মেয়ে বা তুষি মনে না হয়।”
পাথরের চুনে পুড়িয়েছেন মুখ চরিত্রের বিশ্বাসযোগ্যতা আনতে তুষি এমন কিছু করেছেন যা শিউরে ওঠার মতো। তিনি বলেন, “আমার মা পান খান, তাই পানে দাঁতের টেক্সচার কেমন হয় জানতাম। কিন্তু ওই অঞ্চলের মানুষ পাথরের চুন দিয়ে পান খায়। সেই অভ্যেস করতে গিয়ে আমার জিহ্বা ভারী হয়ে যেত, মুখ পুড়ে যেত। তবুও থামিনি।”
সিনেমায় তুষির সহশিল্পী মোস্তাফিজুর নূর ইমরান। তার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে তুষি বলেন, “নূর ভাই দুর্দান্ত অভিনেতা। তার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা চমৎকার।” ‘রইদ’ রটারডাম ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে নির্বাচিত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষের ভালোবাসাই আমাদের প্রধান চাওয়া। তবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আমাদের কাজ প্রশংসিত হলে সেটা বাড়তি ভালো লাগা।’
মন্তব্য করুন