কালো পাড়ের সাদা শাড়ি ও কালো পাঞ্জাবি পড়া একদল কিশোর-কিশোরী ঘুরছে অমর একুশে বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে। হঠাৎ তাদের মধ্যে কয়েকজন অনিন্দ্য প্রকাশনীর স্টলে দাঁড়িয়ে মোস্তাক আহমেদের একটি সাইকোথ্রিলার বইয়ের পাতা উল্টেপাল্টে দেখছিল। কৌতূহল নিয়ে এগিয়ে গেলাম তাদের সঙ্গে কথা বলতে, জিজ্ঞাসা করলাম এত সকালে বই মেলায় কেন?
তাদের মধ্যে কলেজ শিক্ষার্থী রাইসুর ইসলাম রায়হান বলেন, আসলে আমরা ভোরে এসেছিলাম শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে। তারপর চিন্তা করলাম বইমেলা যেহেতু চলছে কিছু বই দেখে যাই।
অন্য দিকে বাসাবোর এক কলেজ শিক্ষার্থী মহিনউদ্দিন রাশেদ সকালে কলেজের সঙ্গে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে কলেজের অন্যান্য বন্ধুদের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এক স্টল থেকে অন্য স্টলে।
রাশেদ বলেন, আজ একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সকালে কলেজের পক্ষ থেকে ক্লাসের বন্ধু-বান্ধবী নিয়ে এসেছিলাম। শ্রদ্ধা জানানো শেষে, বইমেলায় ঘুরতে এলাম।
২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বই মেলায় দর্শনার্থী ও পাঠকদের ভিড়। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বুধবার সকালেই বইমেলা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এদিন সকাল ৮টায় মেলা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং রাত ৯টায় বন্ধ হবে। আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বুধবার সকাল ৮টায় সর্বসাধারণের জন্য বইমেলা খুলে দেওয়া হয়েছে। এদিন সব প্রকাশককে সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে বই নিয়ে মেলায় প্রবেশের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
একুশে ফেব্রুয়ারির দিনটি নিয়ে আশাবাদী প্রকাশকেরাও। তারা মনে করেন আজকের দিন এই বইমেলার ২৯ দিনের সেরা দিন হতে চলেছে।
গ্রন্থিক প্রকাশনীর প্রকাশক রাজ্জাক রুবেল বলেন, আজ আমাদের প্রকাশকদের কাছে চাঁদ রাতের মতো, কারণ আজ হয় তো অন্যদিনের তুলনায় দশগুণ বিক্রি হবে।
এদিকে মঙ্গলবার রাত ৮টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত মেলা চলে। একুশে ফেব্রুয়ারির প্রস্তুতি হিসেবে আধা ঘণ্টা আগেই মেলা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আয়োজকরা।
অমর একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির ইতিহাসে একই সঙ্গে শোক আর গৌরবের দিন। ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন সংগঠন।
বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাত ১২টা ১ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি ও পরে প্রধানমন্ত্রী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে মন্ত্রিসভার সদস্য ও দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা দলের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে আরেকটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এরপর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু।
তাদের পর প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের বিচারপতিরা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন৷
পরে তিন বাহিনীর প্রধানরা, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সংগঠন ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শুরু করে।
গতকাল রাত থেকেই কালো ব্যানারে ছেয়ে যায় শহীদ মিনারের আশপাশের এলাকা। ভোরের আলো ফুটতেই ব্যানার নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পথে আসতে দেখা যায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের।
এ ছাড়াও অনেকে এসেছেন পরিবার ও ছোট শিশুদের নিয়ে। অনেকের হাতে প্ল্যাকার্ড, মুখে ও হাতে লেখে রেখেছেন একুশের বিভিন্ন স্লোগান। যেখানে লেখা রয়েছে- ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’, ‘বাংলা ভাষা অমর হোক’, ‘বাংলা আমার মায়ের ভাষা’ ইত্যাদি।
মন্তব্য করুন