দেশে যে ডলার সংকট তৈরি হয়েছে, তা নিরসনে ডলারের আমদানি বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। এই ডলারের প্রবাহ বাড়াতে এসএমই উদ্যোক্তারাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারত। কিন্তু প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা সহজে পণ্য রপ্তানি করতে পারেন না। ব্যাংকগুলো এসএমই খাতে ঋণ বিতরণ করলেও অবহেলিত রপ্তানিচ্ছুক ক্ষুদ্র গ্রাহকরা। এই অবস্থায় দেশের ডলার সংকট নিরসন ও প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থান তৈরির উদ্দ্যেশ্যে এসএমই সহায়ক নীতিমালা প্রয়োজন।
সোমবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত ‘বৈদেশিক বাণিজ্য অর্থায়ন এবং এসএমইর মধ্যে সেতুবন্ধন’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন সংশ্লিষ্টরা।
সেমিনারে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অধ্যাপক (সিলেকশন গ্রেড) ড. শাহ্ মো. আহসান হাবীব। গবেষণা দলে অন্যদের মধ্যে রয়েছেন- বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ এবং রাহাত বানু; বিআইবিএমের প্রভাষক রাজীব কুমার দাশ; বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক প্রদীপ পাল; ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদুর রহমান।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে এসএমই খাতে বিনিয়োগের ২৫ শতাংশ বৈদেশিক বাণিজ্যে ব্যবহার হয়েছে। তবে রপ্তানির লাগাম টেনে ধরায় ২০২২ সালে সেই হার নেমে এসেছে মোট এসএমই ঋণের ২১ শতাংশে। কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক বিবেচনায় এই হার আরও বেশি হওয়া উচিত ছিল। গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আমদানি রপ্তানির সঙ্গে জড়িত মোট লেনদেনের মাত্র ৯ শতাংশ এসএমই উদ্যোক্তাদের অবদান। রপ্তানির আবেদন বাতিল হওয়া এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য একটি বড় বাধা বলে উল্লেখ করা হয় গবেষণায়। মোটা দাগে এসএমই উদ্যোক্তাদের রপ্তানি আবেদন বাতিলের পাঁচটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমত, অপর্যাপ্ত জামানত। জামানতের অভাবে ৩৬ শতাংশ এসএমই উদ্যোক্তার রপ্তানি আবেদন বাতিল হয়। উচ্চ সুদহারের কারণে বাতিল হয় ১৮ শতাংশ, পূর্বের লেনদেনের তথ্য না থাকায় ১৭ শতাংশ, উচ্চ ঝুঁকি কারণে ১১ শতাংশ ও পর্যাপ্ত দলিলের অভাবে ১০ শতাংশ আবেদন বাতিল হয়। পাঁচটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, দুইটি বিদেশি ও ২৩টি বেসরকারি ব্যাংকের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন এসএমই উদ্যোক্তারা। বিশেষ করে দরিদ্র দেশ এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে এর হার বেশি। এসএমই উদ্যোক্তারা সরাসরি বিদেশি বাজারে পণ্য রপ্তানি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে।
বিশেষ অতিথির বক্তবে বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ও জনতা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস ছালাম আজাদ বলেন, আমি যখন জনতা ব্যাংকে ছিলাম তখন বড়দের চাপে ছোট গ্রাহকদের দেখার সুযোগ হতো না। তবে ব্যাংকগুলো এসএমই অর্থায়নে যতটা এগিয়েছে, এসএমই বাণিজ্য অর্থায়নে ততটাই পিছিয়েছি। রপ্তানিতে পণ্য বহুমুখীকরণের অন্যতম একটি দিক হতে পারে এই এসএমই বাণিজ্য অর্থায়ন। তিনি আরও বলেন, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের একটি বড় অংশ ব্যাংকের বাইরে রয়ে গেছে। তাদের ব্যাংকের আওতায় আনতে হবে। পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রয়োজনে তাদের প্রণোদনা দিতে হবে। এ ছাড়া জামানতের শর্ত শীথিল করে একটি নীতিমালা তৈরি করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিআইবিএমেরর সুপারনিউমারারি প্রফেসর মো. আব্দুস সালাম এইচএফএফ; ঢাকা ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার এবং ইস্টার্ন ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবু জাফর।
মন্তব্য করুন