প্রতি বছর ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে প্রবেশ ও মাছ শিকারে থাকে নিষেধাজ্ঞা। মূলত, মাছের প্রজনন মৌসুমে বনের জলজ প্রাণী রক্ষায় এ বিধিনিষেধ জারি করা হয়। তবে নিষেধাজ্ঞার মাঝেই সুন্দরবনের নদ-নদী ও খালে বিষ প্রয়োগে মাছ শিকারের অভিযোগ উঠেছে একশ্রেণির জেলের বিরুদ্ধে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে বনের মৎস্যসম্পদ, বন্যপ্রাণী এবং জনস্বাস্থ্য।
অভিযোগ রয়েছে, বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে অভয়ারণ্যের খালগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহাজনরা। তারা কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে খাল দখল করে, পরে জেলেদের কাছে অলিখিত ইজারা দেন। এজন্য প্রতিটি ট্রলারের জন্য ১০ হাজার টাকা ও নৌকার জন্য ৫ হাজার টাকা গুনতে হয়। শিকার করা মাছ লোকালয়ে পৌঁছাতেও সহযোগিতা পাচ্ছেন তারা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, খালের একপাশে জাল টাঙিয়ে অন্যপাশে রিপকট, ক্যারাটে, ফাইটারসহ বিভিন্ন কীটনাশক ছিটানো হয়। বিষক্রিয়ায় মাছ দুর্বল হয়ে জালে আটকা পড়ে। এতে ছোট-বড় সব প্রজাতির মাছ, পোনা ও অন্যান্য জলজ প্রাণী ধ্বংস হচ্ছে। শুধু মাছ নয়, নিষিদ্ধ মৌসুমে কাঁকড়াও ধরা হচ্ছে।
সোমবার (২৫ আগস্ট) শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের চাঁদনিমুখা এলাকায় দেখা যায়, নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সুন্দরবন থেকে মাছ, কাঁকড়া ও কাঠ নিয়ে ফিরছেন জেলেরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জেলে বলেন, নিষেধাজ্ঞা থাকলে আমরা খাব কী? আমাদের জীবন চলে সুন্দরবনের ওপর নির্ভর করে। এজন্য বন বিভাগের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই আমরা যাই।
সরেজমিনে দেখা যায়, চাঁদনিমুখা বাজারসংলগ্ন কাটেশ্বর ক্যাম্পের সামনে দিয়েই কয়েকটি নৌকা মাছ ও কাঠ নিয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে ক্যাম্পের এফজি মোস্তাফিজ ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি।
চিকিৎসকদের মতে, এসব বিষমিশ্রিত মাছ খেলে মানুষের কিডনি, লিভার ও হৃদযন্ত্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। পশু-পাখির ক্ষেত্রেও এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুল ইসলাম জানান, জুন-আগস্ট নিষিদ্ধ মৌসুমে সাতক্ষীরা রেঞ্জে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ১৭টি মামলা ও ২০ জনকে আটক করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে ২৭টি নৌকা, ১টি ট্রলার, মাছ, কাঁকড়া ও হরিণের মাংস।
এদিকে, নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন কাটেশ্বর ক্যাম্পের সামনেই মাছ-কাঁকড়া শিকারের বিষয়ে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, কাটেশ্বর ক্যাম্পে জনবল কম থাকায় সবসময় অভিযান চালানো সম্ভব হয় না। তবে কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এমন হয়ে থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন