

বিশ্বের প্রধান শহরগুলোর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার নগরীগুলোই আবারও শীর্ষ দূষিত শহরের তালিকায় আধিপত্য বিস্তার করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শীতকালে আবহাওয়ার পরিবর্তন, শিল্প ও যানবাহনের নিঃসরণ, নির্মাণকাজের ধুলা এবং কৃষিজ পুড়ানি ধোঁয়া মিলেই এ অঞ্চলে দূষণ বেড়ে যায়।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাও এর বাইরে নয়। বায়ুদূষণ কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হলেও বড় ধরনের অগ্রগতি এখনও দেখা যাচ্ছে না বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) সকাল ৮টার দিকে আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের তথ্যানুযায়ী, ২৩৪ স্কোর নিয়ে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে রাজধানী ঢাকা। বায়ুমানের এ স্কোর ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
আইকিউ এয়ারের সর্বশেষ লাইভ এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) র্যাঙ্কিংয়ে বায়ুদূষণে আবারও শীর্ষে উঠে এসেছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। প্রকাশিত তালিকায় দিল্লির দূষণের মাত্রা ৪০৫, যা ‘হ্যাজার্ডাস’ বা ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ মাত্রার মধ্যে পড়ে।
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ঢাকা, যার দূষণের মাত্রা ২৩৪— এটি ‘ভেরি আনহেলদি’ পর্যায়ের। দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকার বায়ুদূষণ বিশ্বে অন্যতম খারাপ অবস্থায় রয়েছে। তবে গত কয়েক সপ্তাহে দূষণের মাত্রা আবারও বেড়েছে বলে সূচকে প্রতিফলিত হয়েছে।
ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উপাদান হলো— বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫-এর উপস্থিতি। আজ সকালে ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার পরিমাণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানদণ্ডের চেয়ে প্রায় ৩২ গুণ বেশি রয়েছে।
সকালে ঢাকার সাতটি এলাকায় বাতাসের মান খুবই অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে রয়েছে। এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে মিরপুরের ইস্টার্ন হাউজিং (২৫৮) এলাকা। এর পরেই রয়েছে মাদানি সরণির বেজ এজওয়াটার আউটডোর (২৪৯), বেচারাম দেউড়ি (২৪৮), দক্ষিণ পল্লবী (২৪০), কল্যাণপুর (২৩৪), গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল (২২৩) ও গোড়ান (২১০) এলাকা।
বিশ্বের দূষিত বাতাসের তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারতের আরেক শহর কলকাতা (২১৭), এরপর যথাক্রমে ভিয়েতনামের হ্যানয় (১৯২), ইরানের তেহরান (১৮৯), পাকিস্তানের করাচি (১৮৯) ও লাহোর (১৮৯)। তালিকার শীর্ষ ১০-এ থাকা অপর তিনটি শহর হলো— উজবেকিস্তানের তাশখন্দ (১৮৮), আফগানিস্তানের কাবুল (১৮৪) ও চীনের সাংহাই (১৭৬)।
একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়, আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে তাকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু বলে মনে করা হয়।
আর, দূষণের মাত্রা ২০০-এর বেশি হলে তা ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে ধরা হয়। এই অবস্থায় শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, হার্টের রোগী থেকে শুরু করে সুস্থ মানুষের মধ্যেও তাৎক্ষণিক শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। ৩০১ থেকে ৪০০-এর মধ্যে থাকা একিউআই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়, যা নগরের বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
মন্তব্য করুন